পোলিও টীকায় ক্যান্সার?

দুটি ঘটনা থেকে সন্দেহ জাগ্রত হয় যে পোলিও টিকা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ১৯৫৫ এর দিকে একটি কোম্পানির তৈরিকৃত পোলিও টিকায় পোলিও ভাইরাস উপস্থিত ছিল। যার ফলে ২৫০ জনের মধ্যে পোলিও রোগ ছড়ায় এবং ১০ জন মারা যায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৯৬০ সালে যখন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে পোলিও টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত বানরের কিডনি কোষে সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ নামে একধরনের ভাইরাস উপস্থিত আছে। এই ভাইরাস বানরের জন্য ক্ষতিকারক না হলেও ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ইদুরের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তখনকার কতৃপক্ষ এই খবর জানতে পেরে ১৯৬১ সালের আদেশ জারি করেন সকল পোলিও ভ্যাকসিনকে সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ মুক্ত করে নতুনভাবে তৈরি করতে।

জোন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এর আণবিক মাইক্রোবায়োলজি এবং ইমিউনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এমেরিটাস কির্তি শাহ, আন্তর্জাতিক ক্যান্সার জার্নাল এ প্রকাশিত তার এক গবেষনায় দেখান যে ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে দেয়া সব পোলিও টিকায় সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ এর উপস্থিতি ছিল না। তাছাড়া যেসব টিকাতে উক্ত ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল, সেগুলোতেও ফরমালিন এর উপস্থিতি ছিল যা কিনা সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ ও পোলিওভাইরাসকে ধ্বংস করে  দেয়।

 

পোলিও ভ্যাকসিন নিয়ে ফেসবুকের কিছু পোস্ট

 

আরো পড়ুনঃ
পোলিও কি?  
সকলের যা জানা দরকার
ইতিহাস: নিরাপদ ভ্যাকসিন

উৎস: সাইচেক/ফ্যাক্টচেক

ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ মেডিসিন, ২০০২ সালে তাদের করা এক গবেষনায় দেখায় যে পোলিও টিকার সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক নির্দেশ করে এমন গবেষণাগুলোতে পোলিও টিকা আসলেই ক্যন্সার ঘটায় কিনা এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমান এর অভাব রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে যারা পোলিও টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ক্যান্সার বৃদ্ধির কোন লক্ষন দেখা যায় নি। কিন্তু এই গবেষণাগুলোর উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ মেডিসিন এর মতে এই গবেষণাগুলো ইকোলজিক। ইকোলজক স্টাডিজ সাধারনত কোন গ্রুপ হিসাব করে গবেষণা করে যেখানে ব্যাক্তির আলাদা উপস্থিতি থাকে না।

আন্তর্জাতিক ক্যান্সার জার্নাল এ ২০০৬ সালে প্রকাশিত কির্তি শাহের গবেষণায় তিনি বলেন যে উপস্থিত তথ্যগুলো সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ যে মানুষের ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে এমন সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেয় না কারন টিকার মাধ্যমে কোন ব্যাক্তি সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ এর সংস্পর্শে এসেছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।

এখন পর্যন্ত যত বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে সেগুলোর মতে ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে যারা পোলিও টিকা নিয়েছেন তাদের ক্যান্সার হয় নি। তবে, বিজ্ঞানীরা এই সম্ভাবনাকেও বাতিল করে দেন না যে ঐ সময়ে কিছু লোক পোলিও টিকার কারনে হয়তবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমান সময়ের পোলিও টিকা সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ মুক্ত যার ফলে ক্যন্সারের ঝুঁকি নেই।

Leave a Reply