কুমিল্লা কারাগারে নির্যাতিত ডাকাতি ও হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে “আলেম” বলে প্রচার

Published on: September 23, 2021

সম্প্রতি “কুমিল্লা কারাগারে বন্দি একজন আলেমকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হয়েছে।“ ক্যাপশনে ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডেরএকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন কারাবন্দিকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তবে একাধিক সংবাদসূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত ব্যাক্তিটি ভারতের নাগরিক শাহজাহান বিলাস, যিনি ডাকাতি ও হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এবং ঘটনাটি ৩ জুলাই ২০২১ এর। ক্যাপশনে আসামির মূল পরিচয় উল্লেখ না করে “আলেম” লেখার কারণে বিষয়টি ধর্মীয় বিবেচনায় স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচে ভিডিওটিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করেছে।

সম্প্রতি ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে ভিডিওটি “কুমিল্লা কারাগারে বন্দি একজন আলেমকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হয়েছে।“ ক্যাপশনে শেয়ার করা হয়েছে। এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।


ভাইরাল ভিডিওটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রথমেই চোখ পড়ে ডানপাশের কোনায় ‘সমকাল’ এর লোগোটির দিকে। পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যম সমকালের ফেসবুক পেজে অনসন্ধান করে পাওয়া যায় ৩ জুলাই ২০২১ তারিখে আপলোডকৃত “কুমিল্লা কারাগারে বন্দী নির্যাতনের সিসিটিভি ফুটেজ” ক্যাপশনের ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও

এ ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ৩ ও ৪ জুলাই ২০২১ তারিখে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন। এ বিষয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন বলছে, “কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে সাজাপ্রাপ্ত এক ভারতীয় কয়েদিকে দুই হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে পেটানোর একটি ভিডিও আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরিফ, কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাস ও চরণ চন্দ্র পালকে ওই কয়েদিকে মেঝেতে ফেলে লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায়।“

এ বিষয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন বলছে, “কারা সূত্র জানায়, ভারতের ত্রিপুরার দুর্গাপুর গ্রামের আবদু মিয়ার ছেলে শাহজাহান বিলাস ডাকাতি ও হত্যা মামলার ৫৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২৬ বছর ধরে কুমিল্লা কারাগারে তিনি বন্দি রয়েছেন। সম্প্রতি ১২ পিস ইয়াবাসহ তিনি কারারক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর কেস টেবিলে ডেকে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়-জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বিলাসের দুই হাত বেঁধে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসাও দেওয়া হয়।“

এদিকে ইত্তেফাক, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর, কালেরকন্ঠ, সমকাল এবং যুগান্তরের প্রতিবেদনে  শাহজাহান বিলাস  ডাকাতি ও হত্যা মামলার ৫৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি উল্লেখ করা হলেও প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ৫৪ বছরের কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি বলছে, “হত্যা ও ডাকাতির মামলায় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৯১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা করেন আদালত। একটি হত্যা মামলায় ৩০ বছর এবং ৩টি ডাকাতি মামলায় যথাক্রমে ১০, ৭ ও ৭ বছর মিলে মোট ৫৪ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। সেই থেকে তিনি এ দেশের বিভিন্ন কারাগারে কয়েদি হিসেবে কাটাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ নম্বর সেলের কয়েদি (নম্বর ৭১৫১/এ)।“

নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ভিডিওটি ভাইরাল করার অভিযোগে কুমিল্লা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মোহাম্মদ শরীফ ও কারারক্ষী অনন্ত চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট একটি অডিও আলাপও ছড়িয়ে পড়েছিল। ঐ ভিডিও ভাইরালের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত দুই কারারক্ষীর ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের সেই অডিওটি শুনুন সমকালের একটি প্রতিবেদনে।

উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, কুমিল্লা কারাগারে নির্যাতনের শিকার বন্দী ব্যক্তির নাম শাহজাহান বিলাস যিনি ভারতীয় নাগরিক। ভিডিও’র ক্যাপশনে আসামির মূল পরিচয় উল্লেখ না করে “আলেম” লেখার কারণে বিষয়টি ধর্মীয় স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচে ভিডিওটিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply