ডোনেশন প্রতারণা: ভারতের শিশু আফিয়া কাওসারকে বাংলাদেশের জান্নাত আক্তার দাবি

Published on: November 22, 2022

সম্প্রতি “জান্নাত আক্তার” নামের একটি শিশুর চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহের আবেদন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিশুটির আসল নাম “আফিয়া কাওসার” এবং সে একজন ভারতীয়। “Ketto” নামক একটি ভারতীয় তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজ থেকে শেয়ার হওয়া অসুস্থ শিশুটির ছবি সংবলিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:  

ভাইরাল হওয়া এই ফেসবুক পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, “জান্নাত আক্তারের” নামের শিশুটির মারাত্মক ধরণের টিউমার হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে  চিকিৎসা না করাতে পারলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। জান্নাতের অপারেশন করতে প্রায় ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত বিকাশ এবং নগদ একাউন্টের একটি নাম্বারে ফ্যাক্টওয়াচ যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

ভাইরাল এই পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলো দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহকারী একটি প্রতিষ্ঠান “Ketto” এর ওয়েবসাইটে একটি আবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। “Please save my Aafiya, she is on the verge of dying” শিরোনামের এই আবেদনে ব্যবহৃত শিশুর ছবির সাথে বর্তমানে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত শিশুর ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়। আবেদনটি থেকে জানা যায়, শিশুটির প্রকৃত নাম “আফিয়া কাওসার” এবং বাবার নাম মোহাম্মদ মশিন (Mohammed Moshin)।



আবেদনটিতে যুক্ত করা বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা পত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে শিশুটি ২০১৭ সাল থেকে গাউচার ডিজিজ নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। তাকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় ছিল ব্যয়বহুল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। যার খরচ ৩১,১৬৯ মার্কিন ডলার। এই অস্ত্রোপচারের পর তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য ৩ মাস হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন ছিল।

আফিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে Ketto এর, ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল দেখুন এখানে এবং এখানে

উল্লেখ্য, “Ketto” এর ওয়েবসাইটে আফিয়া কাওসারের চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহের আবেদনটিতে ২০২০ সালে মোহাম্মদ মশিন একটি বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি তার মেয়ের তখনকার শারীরিক অবস্থার উন্নতির ব্যাপারে বলেছিলেন। তার সেই বক্তব্য থেকে  জানা যায়, বিশেষজ্ঞের নিবেদিত প্রচেষ্টার ফলে আফিয়া জীবনযুদ্ধে লড়তে সক্ষম হয়েছে। তার নিয়মিত ফলোআপও শেষ হয়েছে এবং ওষুধের কোর্স শেষ হলেও সাধারণ ওষুধ চলছে। আফিয়া স্বাভাবিক ভাবে  খাবার খাচ্ছে, সে সক্রিয় এবং উচ্ছল। তার বয়স ১০ বছর এবং ওজন ১৮ কেজি। আফিয়া রেইনবো হাসপাতালে চিকিৎসকের অধীনে রয়েছে।

অর্থাৎ, বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল এই শিশুটির পরিচয় ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। শিশুটির নাম জান্নাত আক্তার নয় এবং তার বাবার নামও জামিল হোসেন নয়। পাশাপাশি এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনা নয়। শিশুটির ভুল নাম এবং অসুস্থতা ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে এমন কিছু আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণামূলক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh