এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর বক্তব্যে বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার

Published on: May 25, 2022

ধর্মীয় বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর বিবর্তনতত্ত্ব সম্পর্কিত একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে ,যেখানে তিনি বেশ কিছু ভুল তথ্য দিয়েছেন । সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই ভিডিওর সমর্থনে কিংবা সমালোচনায় মেতে উঠেছেন।

ফ্যাক্টওয়াচের পাঠকদের কৌতুহল নিবারনের জন্য এবারের এই ফ্যাক্টফাইলটি তৈরি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী পিএইচডি গবেষক  মোঃ মনজুরুল ইসলাম রিফাত এর সাথে আলাপচারিতার ভিত্তিতে, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োলজিতে বর্তমানে অধ্যয়ন করছেন । তার গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে population and quantitative genetics এবং Evolutionary Biology .

(Theory of Evolution কে এই ফ্যাক্ট ফাইলে ‘বিবর্তন তত্ত্ব’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। তবে আব্বাসী সাহেব তার বক্তব্যের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ‘বিবর্তনবাদ’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে তার বক্তব্য অবিকৃত রাখা হয়েছে )

গুজবের উৎস

গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফেসবুক পেজ থেকে এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশন ছিল- বাংলাদেশের এক বড় বিজ্ঞানীকে আমার মিডিয়া কর্মীরা চ্যালেঞ্জ করেছিলো ।


Abbasi TV LTD নামক ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলেও এই ভিডিওটা আপলোড করা হয়েছিল গত ২৬শে ফেব্রুয়ারিতে।

পরবর্তীতে একই ভিডিও দেখা যায় এখানে , এখানে , এখানে সহ  নানা জায়গায় ।

ভিডিওতে কি বলা হচ্ছে ?

৫ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই ভিডিওর প্রথম অংশে জনাব আব্বাসী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যে বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী , আমি নাম বলছি না , শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি ওকালতি করতে গেছেন, আপনারা চেনেন , (পাশ থেকে একজন বললেন,জাফর ইকবাল ? এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী হ্যা সূচক মাথা নাড়ালেন এবং বললেন, জ্বি) এই লোকটিকে সরাসরি আমার মিডিয়া কর্মীরা চ্যালেঞ্জ করেছে যে বিবর্তনবাদ নিয়ে ডক্টর আব্বাসী আপনার সাথে ডিবেটে আসতে চায়।  সে নাকচ করেছে, সে বসতে চায় না।

বিবর্তনবাদ এর পক্ষে কিচ্ছু নাই। এটা কোনো বৈজ্ঞানিক মতবাদ ই না। চারটি ব্যাপারে আমি এখন কথা বলছি বিবর্তনবাদের ব্যাপারে যেটা বিজ্ঞানীদের ইজমা।

এরপর তিনি একে একে চারটি দাবি উপস্থাপন করেন।

তার প্রথম দাবি উপস্থাপন চলে ৪৮ সেকেন্ড থেকে ২.৩৬ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত। তিনি বলেন,  সব বিজ্ঞানীগণ একমত, জীববিজ্ঞানী প্রাণীবিজ্ঞানীগণ, দ্য থিওরি অফ ইভেলুশন ইজ নট এ সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট। ইট ইস নাথিং বাট এ হাইপোথিসিস অফ চার্লজ ডারউইন। বিবর্তন বাদ কোন প্রতিষ্ঠিত মতবাদ নয়। এটা হচ্ছে চার্লজ ডারইউনের একটা খামখেয়ালীপূর্ণ, কল্পনাপ্রসূত মতবাদ। তা আমরা কি বিজ্ঞান বইতে বিজ্ঞান পড়াব নাকি ঠাকুরমার ঝুলির মতো গল্প বানালো যা ডারউইন সেটা পড়াব। বিজ্ঞানীরা এইযে বিবর্তনবাদ এটা একটা ঠাকুরমার ঝুলির মত গল্প। গল্পটা এইরকম যে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে কোন জীব ছিলো না, প্রাণী ছিলো না। তারপর অক্সিজেন, নাইট্রোজেন বিভিন্ন গ্যাস গুলো তৈরি হলো ভাইরাস, ভাইরাস, মাইক্রো ভাইরাস তারপরে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া। ব্যাক্টেরিয়াটা মিউটেশনের মাধ্যমে বাড়ল। তারপর ধীরে ধীরে হলো এককোষী জীব অ্যামিবা, অ্যামিবাটা কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে হইলো একটা কীট, পরবর্তীতে সমূদ্রে কীট একটু বড় হলো ব্যাঙ সাইজের একটা কিছু হলো, একসময় জল থেকে এটা স্থলে চলে আসলো, গিনিপিগ টাইপের কিছু হলো তারপর এটা থেকে বিবর্তন ইভেলুশনের মাধ্যমে প্রাণী সৃষ্টি হতে লাগলো। এই বানর হলো, ওরাংওটাং,গরিলা, শিম্পাঞ্জিগুলো হলো। তারপরে তারা বলতে চাই ১৬টা ধাপ অতিক্রম করে, আজ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষ বিচরণ শুরু করলো পৃথিবীতে। এই ঠাকুরমার ঝুলির মতো একটা গল্প তারা তৈরি করলো। সেই গল্পটা আষাড়ে গল্প আমাদের দেশে। 

তার দ্বিতীয় দাবি উপস্থাপন চলে ২.৩৭ সেকেন্ড থেকে ৩.১৩ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত। সেখানে তিনি বলেন “ সমস্ত জীববিজ্ঞানী , প্রাণীবিজ্ঞানীগণ একমত লাইফ ফ্রম নন লাইফ ইজ ফুললি ইমপসিবল। নির্জীব থেকে জীব কখনো হতে পারে না। জীব থেকে জীব হয়। এটা একটা প্রাণী বিজ্ঞানী এবং জীব বিজ্ঞানীগণের ইজমা, ঐক্যমত। প্রতিষ্ঠিত সত্য কথা। লাইফ ফ্রম নন লাইফ ইজ ফুললি ইমপসিবল। নির্জীব থেকে জীব কখনো হতে পারে না। এ দিয়ে গোটা বিবর্তনবাদ ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে। এর কোন অস্তিত্ব আর খুজে পাওয়া যায় না।”

 

তার তৃতীয় দাবি উপস্থাপন চলে ২.১৩ সেকেন্ড থেকে ৩.৩৩ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত। তিনি বলেন “ বিজ্ঞানীগণ তৃতীয় যে বিষয়ে একেবারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন তারা বলেন ডারউইনিয়ান ইভেলুশন ইজ ইমপসিবল। ইট ইজ নট প্রুফ বাই সায়েন্স। ডারউইনের মতবাদ সম্পূর্ণ অসম্ভব। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কোন বিষয় নয়।”

তার চতুর্থ দাবি উপস্থাপন চলে ২.৩৭ সেকেন্ড থেকে ৫.১১ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত। এ সময় তিনি বলেন ” বিবর্তনবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয় যা দিয়ে, বিজ্ঞানীরা বলতেসে আধুনিক মানুষ ৫০ হাজার বছর আগে, আধুনিক মানুষ হবার আগে, একটা মাঝামাঝি জীব ছিলো, অর্ধেক বানর অর্ধেক মানুষ। ৫০ হাজার বছর আগে। তারা বলতে চাই ৫০ হাজার বছর আগে মানুষ ছিলো অর্ধেক বানর অর্ধেক মানুষ। ইভেলুশনের মাধ্যমে, মাক্রো ইভেলুশনের মাধ্যমে, ৩০ হাজার বছর আগে এটা পুরো মানুষ হয়ে গেছে। আজকে অন্তত ১০টা ফসিল, জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, বিশেষ করে মরক্কোতে, চায়নাতে, রাশিয়াতে। দেখা যাচ্ছে তারাই বলতেছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বছর আগের জীবাশ্ম বা ফসিল পাওয়া গেছে যেটা সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের মতো। তাহলে ৩০ হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষের সূচনা বা ৫০ হাজার বছর আগে আধা বানর আধা মানুষ এটা মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে গেল।সবচেয়ে বড় কথা আজ পর্যন্ত ২ লক্ষ বছর, ১০ লক্ষ বছর আগের ফসিল পাওয়া যাচ্ছে এমন একটি ফসিলও কেন পাওয়া গেল না যে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক বানর। সেটা গেল কই। তাহলে বোঝা যাচ্ছে এই থিওরি অফ ইভিলুশন একটা ফেক। সম্পূর্ন ভূয়া, ভিত্তিহীন একটি মতবাদ।”

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, গত ২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বোর্ড পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা বহাল এবং সিলেবাস থেকে প্রত্যাখাত বিবর্তনবাদ অপসারন শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল । এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী। তার সেই সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যের অংশবিশেষ ই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।


উক্ত সেমিনার এর আনুষ্ঠানিক প্রেস বিবৃতি পাওয়া যাবে এখানে ।

আব্বাসী সাহেব তার বক্তব্যের প্রথমেই জানিয়েছেন, বিবর্তনবাদ নিয়ে বিতর্ক করার জন্য তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল কে আহবান জানিয়েছিলেন। এখানে তিনি মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলছেন, ‘তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী যে বিবর্তনবাদী’ ।

তবে প্রকৃতপক্ষে মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন পদার্থবিদ। তিনি অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ,পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। এরপর আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল- Parity violation in Hydrogen Atom ।

পরে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (ক্যালটেক) এবং বেল কমুনিকেশন রিসার্চ  ল্যাবে দীর্ঘ ১২ বছর গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রিসার্সগেট এ তার প্রফাইল থেকে দেখা যাচ্ছে,  বিভিন্ন বিষয়ে তার ২৫ টি পাবলিকেশন রয়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তার প্রফাইল থেকে জানা যাচ্ছে, তার আগ্রহের বিষয় হল রোবটিক্স, নন লিনিয়ার অপটিক্স, অপটিকাল কমুনিকেশন, বাঙলা স্পিচ টু টেক্সট, WDM (Wavelength Division Multiplexing) Network , GPON ( Gigabit Ethernet passive optical network) ইত্যাদি ।


অর্থাৎ, তার কাজের ক্ষেত্র সবসময়েই ছিল বিবর্তন কিংবা জীববিজ্ঞানের বাইরে। কাজেই তাকে বিবর্তনবাদ এর গবেষক কিংবা বিজ্ঞানী বলাটা ভুল হবে।

অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই আব্বাসী সাহেবের ভিডিওর কমেন্ট বক্সে এই প্রশ্নটা তুলেছেন।


এবার আসা যাক , বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কিত তার ৪ টা দাবি নিয়ে।

১ম দাবির ব্যাখ্যাঃ বিজ্ঞানমহলে থিওরীর অবস্থান সর্বোচ্চ স্তরে। কোন অনুকল্প বা হাইপোথিসিস বার বার সত্য প্রমাণ হলে তাকে থিওরি বলা হয়। অর্থ্যৎ কোন অনুকল্প থিওরীতে উত্তীর্ণ হলেই তাকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে বিজ্ঞানে ফ্যাক্ট বা চিরন্তন সত্য বলে কিছুকে ধরে নেওয়া হয় না।

বিবর্তনতত্ত্ব এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত ও প্রমাণিত তত্ত্বগুলোর মধ্যে একটি।  বিবর্তনকেও অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। জীবাশ্মঘটিত ও ভূ-তাত্ত্বিক প্রমাণ, শ্রেণীবিন্যাসগত প্রমাণ, জীবভৌগোলিক প্রমাণ, অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ, কোষতাত্ত্বিক প্রমাণ, ভ্রূণতাত্ত্বিক প্রমাণ, শারীরবৃত্তীয় প্রমাণ এসব ধাপ পার করে বিবর্তন সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তার বক্তব্যটি ভুল।

রেফারেন্সঃ 15 Answers to Creationist Nonsense, থিওরি কি? হাইপোথিসিস কি? ল কি? ফ্যাক্ট কি?, বিবর্তনের প্রমাণাদি (পর্ব-১), বিবর্তনের প্রমাণাদি (পর্ব-২)

 

তার বলা ‘সব বিজ্ঞানীগণ একমত, জীববিজ্ঞানী প্রাণীবিজ্ঞানীগণ, দ্য থিওরি অফ ইভেলুশন ইজ নট এ সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট’- বক্তব্যটিও ভুল। কারণ বিজ্ঞানমহলে প্রায় ৯৭% বিজ্ঞানীগণই বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে।

রেফারেন্সঃ Level of support for evolution

 

তিনি বলেন ৩০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে আধুনিক মানুষ বিচরণ শুরু করছে। এই দাবিটিও ভুল। প্রায় ৩ লক্ষ্য বছর আগে আধুনিক মানুষ আফ্রিকায় বিচরণ শুরু করেছে বলে ধারনা করেন বিজ্ঞানীরা।

রেফারেন্সঃ When did we become fully human? What fossils and DNA tell us about the evolution of modern intelligence

 

 

২য় দাবির ব্যাখ্যাঃ বিবর্তনতত্ত্ব কখনো প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে না। কিন্তু মানুষ বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে এই সাধারণ ভুলটা করে থাকে। বিবর্তনের কাজ প্রাণ কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা। তাই প্রাণ জীব থেকে এসেছে না নির্জীব থেকে এসেছে তা নিয়ে বিবর্তনতত্ত্বের কোন মাথা ব্যথা নেই। প্রাণের উৎপত্তি জীবের থেকে হলেও বিবর্তনতত্ত্ব সত্যি, নির্জীব থেকে হলেও সত্যি।

 

Evolution Explains the Origin of Life

 

বিজ্ঞান এখনো জানে না পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে। তবে পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে বেশ কিছু হাইপোথিসিস আছে। তবে এগুলো একটাও প্রমাণিত সত্য না। অর্থ্যৎ থিওরি না।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, লাইফ ফ্রম নন লাইফ ইজ ফুললি ইমপসিবল এটি কোন বিজ্ঞানী বলেনি, বরং এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হাইপোথেসিস। আলেক্সান্ডার ওপারিন ,জে বি এস হ্যালডেন, স্ট্যানলি মিলার , হ্যারল্ড উরে প্রমুখ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই হাইপোথিসিস নিয়ে গবেষণা করেছেন।

ইসলাম ,  বা অন্যান্য সেমেটিক ধর্মে যে ভাবে বলা হয়েছে  যে মাটি (নন লাইফ) থেকে আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে , এটিও তো তাহলে লাইফ ফ্রম নন লাইফ । অর্থাৎ, আব্বাসী সাহেবের নিজের বক্তব্যটাই অসার হয়ে যাচ্ছে।

রেফারেন্সঃ     The origin of life

Hypotheses of origins

 

 

৩য় দাবির ব্যাখ্যাঃ

তৃতীয় দাবি প্রথম দাবিরই অনুরূপ। প্রথম ব্যাখ্যাতেই এর উত্তর দেওয়া হয়ছে। তবে তাঁর দাবির কোন গ্রহনযোগ্য রেফারেন্স দেখাতে পারবেন না। পৃথিবীতে যতধরণের স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক সংঠন আছে কেউই বিবর্তনতত্ত্বকে অস্বীকার করে না।

আরেকটি খুবই গুরত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, বিজ্ঞান কখনো “ইজমা” বা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে চলে না। কোনকিছু প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য সঠিক প্রমাণিত হওয়াও যথেষ্ঠ না, সব ধরণের পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ভুল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরই শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। তবে শুধু প্রতিষ্ঠা লাভ করলেই হবে না, ভুল প্রমাণের দরজা অসীম সময়ের জন্য খোলা থাকে।

প্রকৃতপক্ষে , বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে নয়, বরং বিপক্ষে এখন পর্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত কোন মতবাদ নেই। আধুনিক জীববিজ্ঞান, জিনতত্ত্ব, অণুজীববিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন সব বিষয়েরই একটি মৌলিক উপাদান বিবর্তনতত্ত্ব।

উল্টোভাবে বললে, পৃথিবীতে এমন কোন সুপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যেখানে বিবর্তনতত্ত্বকে ভুল ধরে উপরোক্ত বিষয়সমূহ পড়ানো হয়।

নাসার দেয়া জীবনের সংজ্ঞাতেই সরাসরি উল্লেখ করা আছে।

The NASA definition of life, “Life is a self-sustaining chemical system capable of Darwinian evolution” and considered the specific features of the one life we know —Terran life.

অর্থাৎ, প্রাণ হল এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা ডারউইনীয় বিবর্তন মেনে চলে।

রেফারেন্সঃ নাসা

 

এছাড়া National Geographic বা Smithsonian  এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট বা কার্যকলাপে খোঁজ খেয়াল রাখলেই বোঝা যায় যে আধুনিক জীববিজ্ঞানে বিবর্তনতত্ত্বের অবস্থান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

৪র্থ দাবির ব্যাখ্যাঃ

আধুনিক মানুষের প্রমাণ পাওয়া যায় ৩ লক্ষ বছর আগে। তাই ৫০ হাজার বছর আগে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক বানর প্রজাতির কিছু পাওয়া সম্ভব নয়।

আর মানুষ বানর থেকে বিবর্তিত হয়নি। তবে মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির কমন এনসেস্টর ছিলো। তারা ৬০-৭০ লক্ষ বছর আগে পৃথক হয়ে যায়।


রেফারেন্সঃ
Fossil Reveals What Last Common Ancestor of Humans and Apes Looked Liked

 

মানুষের ভিন্ন প্রজাতির ১০ টা নয় বরং অনেক বেশি ফসিল রেকর্ড পাওয়া গেছে। তাই তার এ তথ্যও মিথ্যা।

মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরূষ ছিলো এটা জানা যায়, কিন্তু সেই পূর্বপুরুষটা কেমন সেটি কেউ জানে না। জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং ফাইলোজেনেটিক্স থেকে এই সম্পর্কসমূহ বের করা সম্ভব হয়েছে।

স্মিথসোনিয়ানের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

রেফারেন্সঃ https://humanorigins.si.edu/

 

মানুষের ভিন্ন প্রজাতির পাওয়া ফসিল রেকর্ড এর লিংক

https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_human_evolution_fossils

 

 

সারমমর্ম

সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়,  আব্বাসী সাহেবের ৫ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ছোট ভিডিওতে অসংখ্য ভুল তথ্য রয়েছে , যেখান থেকে সাধারন জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারেন।

এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী’র  বক্তব্য ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
১। সকল বিজ্ঞানী একমত যে থিওরি অর ইভোলিশন ইজ নট এ সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট। এটা হচ্ছে চার্লস ডারইউনের একটা খামখেয়ালীপূর্ণ, কল্পনাপ্রসূত মতবাদ। ১। বিবর্তনতত্ত্ব এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত ও প্রমাণিত তত্ত্বগুলোর মধ্যে একটি।   ৯৭% বিজ্ঞানী একমত যে বিবর্তন তত্ত্ব সঠিক। আর থিওরি অফ ইভোলুশন কোনো ফ্যাক্ট বা হাইপোথিসিস নয়, বরং এটা থিওরি (তত্ত্ব)
২। সমস্ত জীববিজ্ঞানী , প্রাণীবিজ্ঞানীগণ একমত লাইফ ফ্রম নন লাইফ ইজ ফুললি ইমপসিবল। নির্জীব থেকে জীব কখনো হতে পারে না। জীব থেকে জীব হয়। ২। লাইফ ফ্রম নন লাইফ ইজ ফুললি ইমপসিবল এটি কোন বিজ্ঞানী বলেনি, বরং এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হাইপোথেসিস। আলেক্সান্ডার ওপারিন ,জে বি এস হ্যালডেন, স্ট্যানলি মিলার , হ্যারল্ড উরে প্রমুখ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই হাইপোথিসিস নিয়ে গবেষণা করেছেন।
৩। বিজ্ঞানীগণ তৃতীয় যে বিষয়ে একেবারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন তারা বলেন ডারউইনিয়ান ইভেলুশন ইজ ইমপসিবল। ইট ইজ নট প্রুভড বাই সায়েন্স। ডারউইনের মতবাদ সম্পূর্ণ অসম্ভব। ৩। পৃথিবীতে যতধরণের স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক সংঠন আছে কেউই বিবর্তনতত্ত্বকে অস্বীকার করে না। যেমন, NASA এর সংজ্ঞানুযায়ী, প্রাণ হল এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা ডারউইনীয় বিবর্তন মেনে চলে।
৪।  বিজ্ঞানীরা বলতেসে আধুনিক মানুষ ৫০ হাজার বছর আগে, আধুনিক মানুষ হবার আগে, একটা মাঝামাঝি জীব ছিলো, অর্ধেক বানর অর্ধেক মানুষ। ৫০ হাজার বছর আগে। তারা বলতে চায়,  ৫০ হাজার বছর আগে মানুষ ছিলো অর্ধেক বানর অর্ধেক মানুষ। ইভেলুশনের মাধ্যমে, মাক্রো ইভেলুশনের মাধ্যমে, ৩০ হাজার বছর আগে এটা পুরো মানুষ হয়ে গেছে। ৪। আধুনিক মানুষের প্রমাণ পাওয়া যায় ৩ লক্ষ বছর আগে। তাই ৫০ হাজার বছর আগে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক বানর প্রজাতির কিছু পাওয়া সম্ভব নয়।

 

আর মানুষ বানর থেকে বিবর্তিত হয়নি। তবে মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির কমন এনসেস্টর ছিলো। তারা প্রায় ৬০-৭০ লক্ষ বছর আগে পৃথক হয়ে যায়।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply