নবজাতক শিশুর এই ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি

Published on: April 27, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি নবজাতক শিশুর ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, শিশুটি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ও কেয়ামতের আলামত এর কথা বলছে। উক্ত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে নবজাতক শিশুটি কথা বলছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ঐ নবজাতক শিশুটির ছবি কারেন কাসমাউস্কি (Karen Kasmauski) নামক একজন ফটোগ্রাফার ২০০২ সালে তুলেছিলেন। তাছাড়া, বিভিন্ন নিবন্ধেও ছবিটি ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। মূলত, এই ছবিটিকে ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence) এর সাহায্যে উক্ত ভিডিওটি বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, ভিডিওটি বাস্তব নয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

Image: Example of a viral Facebook post.

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ঐ ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। সার্চের ফলাফলে আমরা বেশ কিছু ওয়েবসাইট এবং নিবন্ধের সন্ধান পাই। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) এর ওয়েবসাইটে ২৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ এ প্রকাশিত “How One Country Drastically Cut Its Newborn Death Rate” শিরোনামের একটি নিবন্ধে আমরা ঐ নবজাতক শিশুটির অনুরূপ একটি শিশুর ছবি খুঁজে পাই, যার নিচে ক্যাপশনে লেখা আছে “A newborn child in Bangladesh” এবং ফটোগ্রাফারের নাম দেওয়া আছে কারেন কাসমাউস্কি। দি ফটো সোসাইটি নামক একটি ওয়েবসাইটে কারেন কাসমাউস্কি এর প্রোফাইলে ঐ নবজাতক শিশুটির ছবি দেখা গেছে। তাছাড়া, কারেন কাসমাউস্কি এর নিজস্ব ওয়েবসাইটেও “A newborn child in Bangladesh” ক্যাপশনে নবজাতক শিশুটির ছবি খুঁজে পাওয়া গেছে।  

Image: Excerpt from Karen Kasmauski’s website.

 

এছাড়াও, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর ইমেজ ডাটাবেজ জিও ইমেজ কালেকশন এ ঐ শিশুটির ছবি পাওয়া গেছে এবং সেখান থেকেই জানা গেছে যে ছবিটি কারেন কাসমাউস্কি ২০০২ সালে তুলেছিলেন। অতএব, আমরা নবজাতক শিশুটির ছবির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছি।

Image: Excerpt from Geo Image Collection.

 

কথা বলা নবজাতক শিশুটির ভিডিও তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে

মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এর সাহায্য নিয়ে নবজাতক শিশুটির ছবির সাথে একজন মানুষের কন্ঠস্বরের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এই ধরণের সংমিশ্রণকে বলা হয় সিন্থেটিক মিডিয়া (Synthetic media)। সিন্থেটিক মিডিয়া বলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে তৈরি কৃত্রিম টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও, সাউন্ডকে বুঝানো হয়। অন্যদিকে, নন-সিন্থেটিক মিডিয়া বলতে বাস্তব পরিবেশ এবং মানুষের সাহায্য নিয়ে তৈরি যেকোন মিডিয়াকে বুঝানো হয়। ডিপফেক (Deepfake) হচ্ছে এক ধরণের সিন্থেটিক মিডিয়া, যা ডিপ লার্নিং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির মুখাবয়ব বা কন্ঠ নিবিড়ভাবে অনুকরণ করে অন্য আরেকজন ব্যক্তিতে তার প্রতিস্থাপন করতে পারে। 

Image: Excerpt from an article on Synthetic Media.

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এইধরণের কার্যপ্রণালীকে জেনেরেটিভ এআই (Generative AI) নামেও অভিহিত করা হয়। জেনেরেটিভ এআই কাজ করে মেশিন লার্নিং (Machine learning) এর মাধ্যমে। অর্থাৎ, জেনেরেটিভ এআই বিদ্যমান কোন ডাটা, যেমন: ছবি, ভিডিও, অডিও, টেক্সট এর প্যাটার্ন অনুকরণ করে সম্পূর্ণ নতুন একটি আউটপুট দিতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি মূলত সিন্থেটিক মিডিয়া বা জেনেরেটিভ এআই এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। 

Image: Excerpt from an article on Generative AI.

 

ডিপফেক, সিন্থেটিক মিডিয়া, মেশিন লার্নিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে ফ্যাক্টওয়াচ এর “ডিপফেক ভিডিও বুঝবেন কি করে?” শিরোনামের ফ্যাক্ট-ফাইলটি পড়ুন এখানে

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh