আরাভ খান কি গ্র্রেফতার হয়েছেন? 

Published on: March 25, 2023

সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিও ক্যাপশনে বলা হয়েছে, দুবাই থেকে পালিয়েছেন আরাভ খান। তবে ইন্টারপোলের সাহায্যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আরাভ খান গ্রেপ্তার হয়েছেন, এই মর্মে কোনো সংবাদ বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়নি। মূল ধারার গণমাধ্যমেও এমন কোনো সংবাদ দেখা যায়নি। কিছুদিন আগে আরাভ খান গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন একটি গুঞ্জন উঠলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ এমন দাবিগুলোকে অসত্য বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করে। যে কারণে এখনো পর্যন্ত আরাভ খান বা রবিউল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন দাবির কোনো সত্যতা নেই।  

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।  

 ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

 আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন কিনা জানতে আমরা মূলধারার গণমাধ্যমের সংবাদগুলো বিশ্লেষ করি। ২১ মার্চ ২০২৩ তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আরাভ খানের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে খোদ পুলিশের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিলপ্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কিছু অংশ নিচে দেয়া হলো: 

 ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারির পর দুবাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছেখবরটি তিনি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পেয়েছেনতবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া মনজুর রহমান বলেছেন, আরাভ খানের গ্রেপ্তারের বিষয় এখনও কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনিঅফিশিয়ালি বা আনঅফিশিয়ালি কোন তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না।” অপরদিকে আরাভ খানকে আটকের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবু জাফর।  

 ২১ মার্চ ২০২৩ তারিখে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এখনো সেখানে আটক হননিসাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিদিষ্ট করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এ বিষয়ে প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।  

 

বলাবাহুল্য যে, ইতিমধ্যে ইন্টারপোল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন ইতিমধ্যে আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের নামে রেড নোটিশ জারি করেছেতাদের ওয়েবসাইটে অন্যান্য অপরাধীদের তালিকার সাথে তার নাম যুক্ত হয়েছে।  

 

ইন্টারপোল চাইলেই কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারে 

 মূলত একটি দেশের আসামি সেখানে অপরাধ করার পর অন্য দেশে চলে যায়, তখন সেই আসামীকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা লাগেসংস্থাটি অপরাধের তদন্ত, ফরেনসিক ডেটা বিশ্লেষণ সেইসাথে পলাতকদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করেইন্টারপোল কারও বিরুদ্ধে একবার রেড নোটিশ জারি করলে সেটি সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ১৯৪টি দেশের কাছে পাঠানো হয়একবার কারও বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি হলে ইন্টারপোল তার সব সদস্য দেশকে ওই রেড নোটিশ-প্রাপ্ত ব্যক্তির দিকে নজর রাখতে বলেএবং তার প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে বলে 

 তবে রেড নোটিশ কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা নয় এবং ইন্টারপোল কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয় যারা গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে এ কারণে ইন্টারপোল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে আরেক দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাধ্য করতে পারবে না 

 এখন কোন দেশ যদি তাদের নিজস্ব বিবেচনায় বা মানবাধিকার প্রশ্নে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, সেক্ষেত্রে ইন্টারপোল বা তাদের জারিকৃত রেড নোটিশের মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব না 

 যদি গ্রেফতার করতেই হয়, তাহলে অভিযুক্ত যে দেশে আছেন সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবেএক্ষেত্রে তারা নিজ দেশের বিচারিক আইন মেনে চলবেঅর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়া নির্ভর করছে তাদের ওপর 

 উল্লেখ্য, ইন্টারপোল  ইতিমধ্যে আরাভ খানের নামে রেড নোটিশ জারি করেছে অর্থাৎ তাকে  গুরুতর ও বিপজ্জনক অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করেছেতবে আরাভ খানকে দুবাই পুলিশ গ্রেপ্তার করবে কিনা এটা তাদের বিষয়অপরদিকে বর্তমানে  আরাভ খান দুবাই বা অন্য কোনো দেশে অবস্থান করছে কিনা এ বিষয়টি পরিষ্কার নয়।  

 

সুতরাং দুবাই পুলিশ বা অন্য দেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরাভ খানকে যদি ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কথা বিবেচনা করে গ্রেপ্তার করে তাহলে তারা অপরাধীর অপরাধ সংক্রান্ত দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশকে অবহিত করবেকেননা তাকে ধরার জন্য বাংলাদেশ থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যেম আবেদন করা হয়েছেইন্টারপোল কি, কিভাবে কাজ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।  

 সুতরাং, এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের থেকে আরাভ খানের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি, সে কারণে আরাভ খান গ্রেপ্তার হয়েছে এমন দাবিকে সত্য বলার উপায় নেইআরাভ খান গ্রেফতার হয়ে থাকতে পারেন, দুবাই পুলিশের নজরদারিতে থাকতে পারেন, কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কিংবা দায়িত্বশীল কোনো মহল থেকে কোনোরকম দাবি পাওয়া যাচ্ছে না। 

 এই বিষয়টি বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এমন দাবিগুলোকেমিথ্যাসাব্যস্ত করেছে।  

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh