Published on: June 17, 2021
সম্প্রতি “সেনাবাহিনীর সদস্যকে আওয়ামী লীগের মাতালরা প্রকাশ্যে কিভাবে মেরেছে দেখুন” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৬ জুন ২০২১ তারিখে “radiogulistan.com” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি লাইভ প্রচার করা হয়। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ঢাকা নাবিস্কো মোড়ের এই ঘটনায় চার মাদকাসক্ত ব্যক্তি একজন সেনা সদস্যকে মারধোর করেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে; কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের পরিচয় বহন করেন এমন তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ সেনাবাহিনীর সদস্যকে “আওয়ামী লীগের মাতালরা মেরেছে” — সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত এমন দাবিকে ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করেছে। |
গত ১৬ জুন ২০২১ তারিখে “radiogulistan.com” পেজটি থেকে ঢাকা নাবিস্কো মোড়ের একটি ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করা হয়। লাইভের ক্যাপশনে লেখা হয় “গতকাল রাত ১০:৪৫ এ সেনাবাহিনীর সদস্যকে আওয়ামী লীগের মাতালরা প্রকাশ্যে কিভাবে মেরেছে দেখুন।” উক্ত লাইভটি পরবর্তীতে ফেসবুকের একাধিক পেজ এবং পাবলিক গ্রুপ থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে
স্ক্রিনশট
ভিডিওটির শুরুতে আমরা দেখতে পাই, জনসম্মুখে ৩-৪ জন মিলে রাস্তায় এক ব্যক্তিকে মারধর করছে। ভিডিওতে থাকা ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে তিনি একজন সেনাবাহিনীর সদস্য এবং তার উপর মাদকাসক্ত দুষ্কৃতিকারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তবে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি “সেনাবাহিনীর সদস্যকে আওয়ামী লীগের মাতালরা প্রকাশ্যে কিভাবে মেরেছে দেখুন” শিরোনামে ভাইরাল হলে ফ্যাক্টওয়াচ টিম তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
ফ্যাক্টচেক
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধানী দল প্রথমে ফেসবুক সার্চের মাধ্যমে জানতে পারে ভুক্তভোগী হলেন “জসিম উদ্দিন রানা” এবং তিনি চাঁদপুর জেলার পালগিরী গ্রামের বাসিন্দা। এরপর চাঁদপুর জেলার স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে জসিম উদ্দিন রানার ফোন নম্বরটি সংগ্রহ করা হয়। সরাসরি তার সাথে আলাপ হলে তিনি ফ্যাক্টওয়াচকে জানান, বলাকা গাড়ির ভেতরে একজন বৃদ্ধকে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়েই মূলত শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন তিনি। তার ভাষ্যমতে দুষ্কৃতিকারীরা গাড়িতে বসে থাকা সেই বৃদ্ধের টাকার ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া করলে তিনি প্রতিবাদ করেন এবং এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা (তারা যে মদ্যপান করেছেন সেটি ভিডিওতে নিজেরাই স্বীকার করেছেন) তাকে মারধর করতে থাকেন। টানা ১০ মিনিট নির্যাতিত হবার পরে গাড়িটি ঢাকার নাবিস্কো মোড়ে থামলে দুষ্কৃতিকারীদের আরেকটি দল তাকে আক্রমণ করে যা আমরা ভিডিওটিতেও দেখেছি। পরবর্তীতে জসিম উদ্দিন রানা তার সেনা সদস্যের পরিচয়টি দিলে সাধারণ মানুষ তাকে এবং বৃদ্ধ লোকটিকে দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে বাঁচায়।
অন্যদিকে, হামলাকারীদের মধ্যে একজন নিজেকে এনা পরিবহনের ড্রাইভার বলে পরিচয় দেন এবং স্বীকার করেন তিনি এবং তার তিন সহযোগী মদ খেয়ে গাড়িটিতে ওঠেন। ‘কালু’ নামের সেই ব্যক্তি অভিযোগ করেন, অযাচিতভাবেই জসিম উদ্দিন রানা তাদের সাথে তর্কে জড়ান এবং এক পর্যায়ে তাকে এবং তার এক সাথীকে চড় মেরে বসেন। তবে ভিডিওটির কোথাও কালু কিংবা তার সাথীরা বলেন নি যে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা রয়েছে বা রাজনৈতিক দলটির পরিচয় তারা বহন করেন। জসিম উদ্দিন রানা এ বিষয়ে আমাদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেন, এরা সরকার দলীয় কেউ নয় বরং ছিনতাইকারী।
সুতরাং, ভিডিওতে কিংবা উক্ত সেনা সদস্যের বয়ানে কোথাও এ কথা প্রমাণ হয় না যে, মাদকাসক্ত চার ব্যক্তি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পরিচয় বহন করে। এতে ধারণা করা যায় শিরোনামে “আওয়ামী লীগের মাতালরা” শব্দগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ঢোকান হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভাইরাল ভিডিওটির শেষ দিকে আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। নির্যাতিত সেনাসদস্য জসিম উদ্দিন রানা ফ্যাক্টওয়াচকে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ঘটনার একাধিক দুষ্কৃতিকারীদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |