শিশু আয়াত হত্যায় জড়িত তার মা – ভিত্তিহীন দাবি, ভূয়া ছবি

Published on: December 5, 2022

“অবশেষে ফাঁস হলো চাঞ্চল্যকর তথ্যঃ আয়াত হত্যার সাথে জড়িত ছিল তার মা!” — এমন শিরোনামে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটির পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই এবং শিরোনামের সাথে বিস্তারিত তথ্যেরও কোনো মিল নেই। অন্যদিকে, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো থেকেও আয়াত হত্যার সাথে তার মা জড়িত কি না এ ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, পোস্টে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা কিশোরগঞ্জে অন্য আরেকটি ঘটনার ছবি। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।   

ফেসবুকে ভাইরাল এমনকিছু পোস্ট দেখুন  এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

চট্টগ্রামে আলিনা ইসলাম আয়াত হত্যাকাণ্ডটি সাম্প্রতিক সময়ের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এটির তদন্ত এখনও চলমান। এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আবির আলি হলেও এর সাথে অন্য কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।

তবে, কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে “অবশেষে ফাঁস হলো চাঞ্চল্যকর তথ্যঃ আয়াত হত্যার সাথে জড়িত ছিল তার মা!”  শীর্ষক একটি শিরোনাম ব্যবহার করে বিস্তারিত অংশে ভিন্ন ভিন্ন কিছু ঘটনার বর্ননা যুক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনগুলোই ফেসবুকে  প্রচার করা হচ্ছে। কিছু প্রতিবেদনে আয়াত হত্যায় অভিযুক্ত আবির আলির মা-বাবা ও বোনকে রিমান্ডে নেয়ার খবর প্রচার করা হচ্ছে। আবার কিছু প্রতিবেদনে অপ্রাসঙ্গিক কিছু খবর প্রচার করা হচ্ছে। যেমন, মেয়েদের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়া, সাকিব খানের সিনেমার স্যুটিং হওয়া, বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে

কিন্তু বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে আয়াত হত্যার সাথে তার মা জড়িত কি না এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। আয়াত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো থেকে কেবল এটা জানা যায় যে, এই হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি হচ্ছে আবির আলী। তাকে গত ২৪ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় এবং রিমান্ডে নেয়া হয়। আবিরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাবা-মা ও বোনকেও ২৯ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়ে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখনও চলছে। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এবং এখানে

উল্লেখ্য, রিমান্ডে আবিরের জবানবন্দী অনুযায়ী, আয়াতের পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য প্রথমে তাকে অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হলে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ মরদেহ গুম করার জন্য টুকরো করে প্যাকেটে মুড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ভারতীয় টিভি শো ক্রাইম পেট্রোল ও সিআইডি দেখে এমন কৌশল অবলম্বন করেছিল আবির। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে যেই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা আয়াত হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত কোনো ছবি না। এটি মূলত কিশোরগঞ্জে ঘটে যাওয়া ভিন্ন আরেকটি ঘটনার ছবি। ২০১৬ সালের ৫ মার্চ সালমা বেগম নিজের শিশু সন্তান মাহাথি মোহাম্মদকে গলা কেটে হত্যা করে। এই হত্যার দায়ে ২০২১ সালের ৮ মার্চ সালমা বেগমের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয় আদালত। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

সুতরাং, এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, ছবিতে গ্রেফতার হওয়া যেই মহিলাকে দেখানো হয়েছে তিনি আয়াতের মা শাহেদা ইসলাম তামান্না নয়। ফেসবুকে প্রচার হওয়া বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং ব্যবহৃত ছবির কোনোটিই আয়াত হত্যাকাণ্ডের সাথে তার মায়ের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে কোনোকিছু প্রমাণ করে না। সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh