উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়া কি ফিলিস্তিনে ব্যালিস্টিক মিসাইল পাঠাচ্ছে?

Published on: November 16, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া দুই দেশ মিলে হামাসকে সাহায্য করার জন্য ফিলিস্তিনে ১২টি ব্যালিস্টিক মিসাইল পাঠাচ্ছে” শিরোনামে একটি ভিডিও।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। দাবির সাথে যুক্ত ভিডিওটি ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উত্তর কোরিয়ার একটি  সামরিক মহড়ার। এর সাথে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।

ফেসবুকে শেয়ার হওয়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া দুই দেশ মিলে ফিলিস্তিনে ১২টি ব্যালিস্টিক মিসাইল পাঠাচ্ছে। এই ভিডিওতে কিছু ব্যালিস্টিক মিসাইল দেখা যায়। তাই এই ভিডিওটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে স্ট্রেইটস টাইমস এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর আপলোড হওয়া ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক সামরিক মহড়ার ভিডিও এটি। এই সূত্র ধরে ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হলে রয়টার্সের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও এই একই অনুষ্ঠানের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর উত্তর কোরিয়ার  ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠার ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল উন্মোচন করা হয়েছিল। এছাড়াও সেখানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শনও করা হয়েছিল।

উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়া ফিলিস্তিনকে সমর্থন করলেও ফিলিস্তিনের হামাসকে সরাসরি কোনো সামরিক সহায়তা দিচ্ছে কি না তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল- হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়া দুই পক্ষকেই যুদ্ধবিরতি এবং শান্তির আহ্বান জানিয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, বার্তাসংস্থা এপির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হামাস যোদ্ধাদের হাতে সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার তৈরি অস্ত্র রয়েছে। তবে, সে অস্ত্র উত্তর কোরিয়া নিজেই হামাসকে দিয়েছিল, নাকি তা হামাসের হাতে অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে পৌঁছান হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। আবার, আল আরাবিয়ার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১২ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রধানের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, ইউক্রেন থেকে জব্দ করা অস্ত্র রাশিয়ানরা হামাস গ্রুপকে সরবরাহ করেছে। কিন্তু রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়ার ফিলিস্তিনে সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করার পক্ষে অফিশিয়াল কোনো বিবৃতি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

দেখা যাচ্ছে যে, ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ব্যালিস্টিক মিসাইলের ভিডিওটি তিন বছর আগের। এবং,  বিভিন্ন ভাবে ভিন্ন ভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে কিন্তু মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স থেকে উত্তর কোরিয়া এবং  রাশিয়ার ফিলিস্তিনকে ১২ টি  ব্যালিস্টিক মিসাইল পাঠানো সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেহেতু ভিডিওটি কোনোভাবেই দাবির সাথে সম্পর্কিত নয়, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh