তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছে সেনাবাহিনী?

Published on: May 29, 2023

সামাজিক মাধ্যমে এই মর্মে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যে, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার হচ্ছে সেনাবাহিনী” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর প্রতি এমনই আহবান জানিয়েছেন। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এমন দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া ভিডিওগুলো একাধিক ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ফুটেজ নিয়ে একত্রে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী-লীগ সরকার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায়। অপরদিকে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়। এ নিয়ে আওয়ামী-লীগ ও বিএনপির মাঝে দীর্ঘদিন টানাপোড়ন চলছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছে সেনাবাহিনী এমন কোনো সংবাদ বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী-লীগ সরকার থেকে এমন কোনো বিবৃতি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। যে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে উক্ত দাবিগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

Image: Example of a viral Facebook post

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে দাবিগুলো করা হয়েছে, সে বিষয়ে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম কি বলেছে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। একাধিক সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে কেনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন বা প্রয়োজন নেই এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী-লীগ সরকার বর্তমানের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সংবিধানের বিধান অনুসারে, বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে গেলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।’

সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

অপরদিকে বিএনপি বা অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক দল দাবি করে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সেই নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো একটি সরকারের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় থেকে নতুন একটি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী সময়ে রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনায় নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বল্পস্থায়ী এই সরকার দৈনন্দিন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে এবং নীতি নির্ধারণী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যাতে এ সরকারের কার্যাবলী নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করে। এ অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকে।  

বলাবাহুল্য, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ একাধিক দেশের কূটনৈতিকরা বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বক্তব্যে জানিয়েছেন এই নির্বাচনটি তারা অবাধ, সুষ্ঠ নিরপেক্ষ দেখতে চান। বর্তমান সরকার দাবি করে আসছে নির্বাচনটি অবাধ, অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষই হবে। তবে বিএনপির দাবি জানিয়ে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপির বক্তব্য দেখুন এখানে।  

এদিকে আওয়ামী-লীগ সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে অনড় অবস্থানে আছে। 

আওয়ামী-লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিয়ত বক্তব্যে বিষয়টি পরিস্কার। বক্তব্য দেখুন এখানে এবং এখানে। 

 অর্থাৎ, যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। সরকার বা বিরোধীদলের কেউই সেনাবাহিনিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানায় নি। সঙ্গত কারণে এসব ভিডিও পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh