ফ্যাক্ট ফাইলঃ চাঁদে কি জমি কেনা যায়?

Published on: [September 25,2021]
লেখকঃ সামস ওয়াহিদ সাহাত

আমেরিকান ব্যবসায়ী ডেনিস হোপের নাম আপনারা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এই ব্যক্তি ১৯৮০ সালে আইনি ফাঁকফোকরের কল্যাণে চাঁদসহ সৌরজগতের (পৃথিবী ছাড়া) বাকি ৭টি গ্রহের মালিকানা দাবি করে বসেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন ছায়াপথ-সম্বন্ধীয় সরকার (Galactic Government), তার অনুমোদিত সংবিধান ও সভা এমনকি প্যাটেন্ট কার্যালয় পর্যন্ত। তার কাছ থেকে আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র তারকাদের অনেকের চাঁদে জমি কেনার খবর আমরা ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে পড়েছি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে প্রথম সাতক্ষীরার দুই তরুণ চাঁদে জমি কেনায় দেশীয় গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি রাতারাতি লুফে নেয়।

আক্ষরিক অর্থেও কী তবে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া সম্ভব? সরাসরি বহিজাগতিক আবাসন (extraterrestrial real estate) দ্বারা সত্যায়িত, জমির নিশানা সংবলিত দলিল সহকারে? কী এই বহিজাগতিক আবাসন এবং এর বৈধতা? বর্তমানে এমন কতগুলো প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম? আলোচনা হবে ফ্যাক্টওয়াচের এই বিশেষ প্রবন্ধে।

প্রথমে আসি বহিজাগতিক আবাসন (extraterrestrial real estate) কী এ বিষয়ে খানিক আলোকপাত করা যাক। এ সম্পর্কে উইকিপিডিয়া আমাদের বলছে, যখন নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি কিংবা সংস্থা গ্রহমণ্ডলী বা মহাকাশের কিছু অংশে ভূমির মালিকানা দাবি করে। যদিও কোন বৈধ অবস্থান অথবা আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি ছাড়াই তারা বিভিন্ন গ্রহপৃষ্ঠের বিশেষত চাঁদের জমি বিক্রি করে আসছে।

 

ডেনিস হোপের আকাশচুম্বী আশা ও আইনি ফাঁকফোকর

জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইনের ভিত্তিতে ‘Outer Space Treaty’ নামক একটি চুক্তি করে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১০২টি (বর্তমানে ১১১টি) দেশ এবং অনুমোদন-অপেক্ষমান ২৩টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

১৯৬৭ সালে ‘Outer Space Treaty চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা
ছবি: জাতিসংঘ

 

চুক্তিতে পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য বস্তুকে আন্তর্জাতিক একক অর্থাৎ, সমস্ত মানবজাতির প্রদেশ “province of all mankind” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলকে কোন দেশ দখল বা নিজেদের একক সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না। কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি মালিকানার প্রসঙ্গটি সেখানে অনুল্লিখিত ছিল। মূলত এটাকেই পুঁজি করে পুঁজিপতি ডেনিস হোপ প্রায় ষাট লক্ষ ব্যক্তির কাছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ জমি বিক্রি করেছেন। তার দাবি, তিনি এমন ৭ লক্ষ কোটি একর জমির মালিক!

 

১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ নতুন সমঝোতা প্রস্তাব আনে যা “মুন এগ্রিমেন্ট” নামে পরিচিত। সেখানে বলা হয়, “পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদদের সাধারণ উত্তরাধিকার সমস্ত মানবজাতি” এবং কার দ্বারা সম্পদের অপব্যবহার ঘটলে আন্তর্জাতিক আইনব্যবস্থার আওতায় এনে তা প্রতিহত করা হবে। তবে এ পর্যন্ত মাত্র ১৮টি দেশ এর অনুমোদন দিয়েছে।  মহাকাশ গবেষণায় প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়ার চুক্তিটি সমর্থন করে নি।

 

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কমপিটিটিভনেস অ্যাক্ট’ নামের এক আইন পাস করে। এই আইনটি স্পষ্টতই মার্কিন নাগরিকদের মহাকাশ সম্পদের মালিকানা নেবার অনুমতি দেয়। অর্থাৎ, পানি ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের বাণিজ্যিক অনুসন্ধান এবং সম্পদ ব্যবহার বৈধ করে।

 

 

তবে কী ডেনিস হোপের দাবির পক্ষে বৈধতা বেড়েছে?

সংক্ষেপে বললে, না। কারণ পৃথিবীর বাইরে মহাকাশের কোন বস্তুর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। যার ফলে চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের সরাসরি মালিকানা দাবি এবং তার ভূমি বিক্রির বৈধতা নেই। বরং ১৯৬৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী এগুলো সমস্ত মানবজাতির সম্পদ যা ডেনিস হোপের মূল দাবির সাথে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের “কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কমপিটিটিভনেস অ্যাক্ট” দিয়ে মূলত মার্কিন নাগরিকদের মহাকাশ সম্পদের (যেমন পানি এবং অন্যান্য খনিজসম্পদ) মালিকানা বৈধ করা হয়েছে। আইনটি বলছে, “the United States does not [by this Act] assert sovereignty, or sovereign or exclusive rights or jurisdiction over, or the ownership of, any celestial body.” অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (এই আইন দ্বারা) সার্বভৌমত্ব, বা সার্বভৌম বা বিশেষ বা আইনগত অধিকার, বা কোন মহাকাশের কোন বস্তুর মালিকানা দাবি করে না।

 

 

মহাকাশ আইন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন সংস্থা-এর সভাপতি তানজা ম্যাসন-জাওয়ান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে বলেছেন, সমস্যাটি হল, আইনগতভাবে কেউই চাঁদ বা মহাকাশের কোন বস্তুর মালিক হতে পারে না। “লুনার অ্যাম্বাসি”র দেয়া কাগজের টুকরা কোন মানুষকে চাঁদের মালিকানার অধিকার দেয় না। জাতিসংঘের চুক্তি সকল দেশের সরকার এবং তাদের ব্যক্তি-নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, এবং এতে স্বাভাবিকভাবেই হোপের দাবি খারিজ হয়ে যায়।

 

ক্লিভল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘গ্লোবাল স্পেস ল সেন্টারের’ পরিচালক ডঃ মার্ক সুন্দহল মনে করেন যে, আন্তর্জাতিক আইন মহাকাশে ব্যক্তিগত ভূমির মালিকানার অনুমতি দেয় না। ‘Verifythis’ এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “আজকের এই বহিজাগতিক আবাসনের ওয়েবসাইটগুলি কিংবা তাদের গ্রাহকেরা অসুবিধায় পড়বে যদি তারা সম্পত্তির মালিকানার দাবি আদালতে সুপারিশ করে”। মহাকাশের বস্তুর সার্বভৌমত্বের সাপেক্ষে কোন রাষ্ট্রের আদালত এই ধরনের দাবিকে বৈধতা দিতে পারে না। আর বস্তুতই এমন কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা নেই যা মহাকাশে ভূমির মালিকানার স্বীকৃতি দেয় কিংবা তার তদারকি করে।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, মহাকাশের এমন বস্তুর ভূমি বিক্রয়ে অসমর্থন প্রকাশ করে বলেছে, এ ধরনের কার্যক্রম অলিক এবং এতে কোন কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি নেই।

 

আইনি জটিলতা এড়াতে আবারও জনাব হোপ নতুন কৌশলের অবতারণা করেছিলেন। ২০০৪ সালে নিজেই ছায়াপথ-সম্বন্ধীয় সরকার (Galactic Government) প্রতিষ্ঠা করে বসেন যার রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, সভা ও মুদ্রা রয়েছে। স্বনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হোপের দাবি, এ সরকারকে জাতিসংঘের আইন মানা বাধ্যতামূলক না কারণ এটি তার সদস্য নয়!

 

ডেনিস হোপ

 

ডেনিস হোপ কর্তৃক বহিজাগতিক আবাসন বৈধকরণ ও ‘লুনার অ্যাম্বাসি’

‘লুনার অ্যাম্বাসি’ ওয়েবসাইটের প্রায়শ জিজ্ঞাস্য অংশে গ্রহমন্ডলীর ভূমি কেনাবেচায় প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা সম্পর্কিত কিছু তথ্য দিয়ে থাকে। গ্রাহক নিকটে বিশ্বস্ততা বাড়াতে একাধিক অমীমাংসিত আইনি প্রতিবন্ধকতা, পরিণামে দুর্বোধ্য কার্য-পরিচালনা প্রণালীর সোজাসাপ্টা সমাধান আছে এতে।

‘আমি কীভাবে জানব যে চাঁদে সম্পত্তি কেনা’ একটি প্রতারণা নয়? এর উত্তরে ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ নির্দিষ্ট ৩টি যুক্তিস্তম্ভে বৈধতা প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী হয়েছে।

১. ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ প্রতিষ্ঠানটি ‘Netcheck Internet Commerce Bureau’ দ্বারা স্বীকৃত।

২. জনাব হোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস থেকে ‘সম্মানজনক রিপাবলিকান পুরস্কার’ পেয়েছিলেন।

৩. ‘চাঁদের মালিক কে’ নিজের সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

 

 

শুরুতে আমরা দেখেছি, ‘Netcheck.com’ একটি পাবলিক এজেন্সি যা ভোক্তা-কোম্পানি, কোম্পানি-কোম্পানি এবং কোম্পানি-ভোক্তার মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকে। তবে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা মাত্রই নেটচেকের বিশ্বস্ততা নিয়ে সংশয় জেঁকে বসে। কোন মানদণ্ডেই এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেবার ক্ষমতা প্রকাশ পায় না।

 

প্রথমত নেটচেকের ওয়েবসাইটটি নিরাপদ নয়

 

ওয়েবসাইটের ডোমেইন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (যেমন যোগাযোগের মাধ্যম) অনুপস্থিত

 

 

গুগোল সরাসরি ওয়েবসাইটি সনাক্ত করতে ব্যর্থ, এবং উইকিপিডিয়ায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেই কোন তথ্য।

 

ঠুনকো গোপনীয়তা নীতি, নেই টার্মস এন্ড কন্ডিশান বা শর্তাবলী।

 

 

একমাত্র ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ নেটচেক’কে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ পরিচিত এবং সক্রিয় ভোক্তা পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করলেও তা সঠিক নয়। কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায়, ওয়েবসাইটটি নিয়ে গুগলের কাছেই উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য নেই, ফলাফল তালিকায় থাকে ভিন্ন ওয়েবসাইটের লিঙ্ক।

 

 

 

সর্বোপরি ওয়েবসাইটটি বিদঘুটে এবং অসম্পূর্ণ।

 

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ জাতীয় ভোক্তা-প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক এবং বিশ্বাস স্থাপনকারী সংস্থা Better Business Bureau ১৯১২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত সেবা দিয়ে আসছে। দেখুন ‘BBB Business Partner Code of Conduct’, ‘BBB Accreditation Standards’, এবং ‘International Association of Better Business Bureaus’। লক্ষণীয়, এতে প্রমাণ হয় না যে, সংস্থাটি অংশীদারি কোন প্রতিষ্ঠানকে মহাকাশের বস্তু মালিকানার বৈধতা বা স্বীকৃতি দিতে সক্ষম।

 

 

এবার ‘সম্মানজনক রিপাবলিকান পুরস্কার’ প্রসঙ্গে আসা যাক। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ‘Prestigious Republican Award’ কিংবা ‘Republican Award’ নামক আদতে কোন পুরস্কার নেই। ফলশ্রুতিতে, জনাব হোপের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস থেকে কোন সম্মাননা পুরস্কার পাবার তথ্যটি উটকো এবং যাচাইযোগ্য নয়। “লুনার অ্যাম্বাসি” ওয়েবসাইটে ‘Prestigious Republican Award’ লেখাটি হাইপারলিঙ্ক করা থাকলেও সেখানে হোপের পুরস্কার অর্জনের বিষয়ে কোন তথ্য নেই বরং ‘Understanding the Lunar Embassy and buying land on the Moon.’ ও ‘An Important Message From Our Founder’ এসব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।

পক্ষান্তরে, নামে চূড়ান্ত ক্ষমতাসম্পন্ন শোনালেও ‘Galactic government’ সম্পর্কে একটি সংবাদ প্রতিবেদন কিংবা নিবন্ধ ইন্টারনেটের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। চাঁদে জমি কেনার খবর যেখানে রাতারাতি ‘টক অব দ্য টাউন’ থাকছে, সেই গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ‘সরকার’ কেন শিরোনামে এলো না?

একমাত্র উইকিপিডিয়াতেই ‘Galactic government’ নিয়ে একটি পাতা আছে কিন্তু সেটা ডেনিস হোপ কিংবা ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ নিয়ে নয়, বরং স্টার ওয়ার্স (Star Wars), আমেরিকার এপিক মহাকাশ যাত্রার ওপর নির্মিত ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রসঙ্গে। রূপক অর্থে কী ইঙ্গিত দেয়?

 

তৃতীয়ত, ডেনিস হোপ নিজের সম্বন্ধে গ্রাহককুলে যে ভাবমূর্তি আরোপ করতে চেয়েছিলেন, উইকিপিডিয়ার উক্ত লিংকে প্রবেশ করলে তা অচিরেই ভেস্তে যাবে। ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ ওয়েবসাইটে ‘Who owns the Moon’ লেখাটি বাস্তবে উইকিপিডিয়ার ‘Extraterrestrial real estate’ পাতাটিতে নিয়ে যায়। দেখা যাক, বহিজাগতিক আবাসন বা (extraterrestrial real estate) সম্পর্কে উইকিপিডিয়া আমাদের কী বলছে:

 

 

প্রবন্ধের এ পর্বে আমরা লুনার অ্যাম্বাসিএবং অন্যান্য বহিজাগতিক আবাসন প্রকল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, পরস্পর বিরোধীতা এবং এক পক্ষের দাবি অন্যের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত প্রসঙ্গটি সংক্ষেপে উপস্থাপন করব।

“লুনার অ্যাম্বাসি” ওয়েবসাইটের Copycat সেকশনে ডেনিস হোপ একই ধাঁচের অন্য প্রকল্পগুলোকে অবলীলায় “অননুমোদিত” সাব্যস্ত করেছে। এদের মধ্যে Lunar Land Owner, LunarLand.com, Lunar Registry, Moon Estates, Moonlife Ltd উল্লেখযোগ্য। এসব ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতাদের সাবধান করতেও কার্পণ্য করেনি ডেনিস হোপ।

 

“লুনার অ্যাম্বাসি” কর্তৃক নিষিদ্ধ ‘Lunar Registry’ বলছে, তিনি (ডেনিস হোপ) চাঁদের মালিক নন, এমনকি আমরাও এটির মালিকানা দাবি করছি না। আপনি কেবল একটি সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে মহাবিশ্বের যেকোন জায়গায় জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক আইন সেভাবে কাজ করে না!

 

LunarLand.com’ বলছে, চাঁদের জমি বিক্রয়কারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সতর্ক থাকুন। তাদের ‘বৈধ’ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সৌরজগতের সীমানার মধ্যে আমরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যার চাঁদের জমি বিক্রির জন্য বৈধ ট্রেডমার্ক এবং কপিরাইট আছে। অন্যের কাছে কিনলেন তো ঠকলেন!

 

‘officiallunarland.com’ জনাব হোপের ‘আইনি ফাঁক’ কৌশলটিকেই ভিত্তি বানিয়েছে। আর LunarLand.com –এর মত বাকি প্রকল্পগুলোর প্রসঙ্গে সতর্ক বাণী দিয়েছে।

 

এ পর্যায়ে আমরা পাঠককে নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাকি বহিজাগতিক আবাসন প্রকল্পের ওয়েবসাইটগুলো অভিন্ন অথবা সহজ ভাষায়, প্রতারণা-চক্র। প্রকৃতপক্ষে, এযাবত পর্যন্ত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহের আইনত মালিক নয়। ডেনিস হোপসহ অনেকেই এমন আইনি ছাইপাঁশ দেখিয়ে মহাকাশের কিছু অংশে ভূমির মালিকানা দাবি করে। সন্দেহ নেই, এসকল দাবির কোনটিরই নিয়ন্ত্রিতভাবে কোন বৈধ অবস্থান এমনকি আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি নেই। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ চুক্তির কল্যাণে মহাকাশে বিভিন্ন বস্তুর সার্বভৌমত্ব সংরক্ষিত করা হয়েছে, এতে করে কোন রাষ্ট্রের আদালত এমন দাবিকে বৈধতা দিতে পারে না।

 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্রেতাসঙ্গী সাতক্ষীরার দুই তরুণ শিক্ষার্থীও মূলত একই চক্রের শিকার। গত ১৫ সেপ্টেম্বর একাধিক শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমে এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদন ছাপান হয়। সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, জিমি কার্টার ও রোলান্ড রিগ্যান, যেখান থেকে চাঁদে জমি কিনেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক ডেনিস হোপের কাছ থেকেই জমি কিনেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার এই দুই তরুন।

 

 

এক সপ্তাহ না পেরোতেই গত পরশু “স্ত্রীকে চাঁদে জমি দিলেন খুলনার অসীম” শিরোনামে খবরটি ভাইরাল হয়। ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকীতে ভালবেসে স্ত্রী ডা. ইসরাত টুম্পার হাতে চাঁদের জমির দলিল তুলে দেন স্বামী এম ডি অসীম। তিনিও মূলত ডেনিস হোপের “লুনার অ্যাম্বাসি” থেকে ৪৫ ডলারের বিনিময়ে জমিটি কিনেছেন।

 

 

 

সাতক্ষীরার এম শাহিন আলম ও শেখ শাকিল হোসেন, এবং খুলনার এম ডি অসীমের মাত্র ৫৫ ডলার দিয়ে জমি কেনার দাবি কোনটিই আসলে মিথ্যা না। কিনছেন তারা ঠিকই, কিন্তু হয়তো প্যাকেট ভর্তি বাতাস!

হোপের নিজ ভাষ্যে “আমার নাম সর্বত্র, আমার কোম্পানির নাম গণমাধ্যমে সর্বত্র। এর অবশ্যই একটা কারণ আছে।”
বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম বরাতে হোপের বিশ্বব্যাপী প্রচারণাই কী তবে এ বাণিজ্যের মূল পুঁজি?

 

 

 

 

Leave a Reply