হোটেল কর্মীর কোটিপতির কনডম থেকে শুক্রাণু চুরির ঘটনা কি সত্য?

Published on: December 14, 2021

আমেরিকার লাস ভেগাসে একজন মহিলা হোটেল ক্লিনার এক কোটিপতি ব্যক্তির ব্যবহৃত কনডম থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে সন্তান গ্রহণের মাধ্যমে কোর্টে মামলা করে সেই কোটিপতির অর্ধেক সম্পত্তি লাভ করে – এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, এটি মূলত ২০১৯ সালে ভাইরাল হওয়া একটি ইন্টারনেট গুজব, যা প্রাথমিকভাবে একটি ব্যঙ্গাত্মক সাইট থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো। তবে এটি বাংলা ভাষায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে।

গুজবের উৎস

‘যেসব লোকদের লজ্জা শরম কম’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে ৩রা ডিসেম্বর, ২০২১ বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে সর্বপ্রথম এই বার্তাসম্বলিত ছবিটি পোস্টটি করা হয়


পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রুপে, পেইজ এবং প্রোফাইল থেকে ছবিটি পোস্ট করা হতে থাকে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে. এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে, এখানে।

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি ২ বছর আগের পুরোনো ভাইরাল ইন্টারনেট গুজব। সাউথ আফ্রিকা ভিত্তিক ব্যঙ্গাত্মক ওয়েবসাইট ihlaya news‌ ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর তাদের সাইট এবং ফেসবুক পেইজ থেকে এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক খবর হিসেবে প্রচার করে।


মূল লেখায় বলা হয়, ৩৬ বছর বয়সী জেন আমেরিকার লাস ভেগাসের একজন হোটেল পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। তিনি একদিন হোটেল রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে একজন ২৪ বছর বয়সী টেক মিলিয়নারের ফেলে যাওয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখতে পান। জেন সন্তান লাভের জন্য মরিয়া ছিলেন, তাই ভাবলেন একজন ধনী ব্যক্তির সন্তান গ্রহণের করা উত্তম। তাই তিনি ওই ব্যক্তির ব্যবহৃত কনডম থেকে বীর্য চুরি করে গর্ভধারণ করেন। তার সন্তানের বয়স এখন ৪ বছর, প্যাটার্নিটি টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে ওই ব্যক্তিই তার বাবা। কোর্ট বাবাকে আদেশ দিয়েছেন সন্তানের মাকে ২ মিলিয়ন ডলার প্রদান করার। তবে বাবার আইনজীবী জানিয়েছেন সন্তানের মার বিরুদ্ধে বীর্য চুরি এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেন তার হোটেল পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি ছেড়ে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে কিছু ব্যবসা শুরু করেছেন।


এই খবরটি মুহূর্তেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেসময় ভাইরাল হয়। ihlaya news-এর ফেসবুক পেইজে ঢুকলেই জানা যাচ্ছে, তাদের কনটেন্ট কাল্পনিক এবং ডার্ক হিউমার বুঝতে সক্ষম দর্শকদের জন্য।


একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সাইট সেসময় এই খবরটির সত্যতা যাচাই করে এবং একে স্যাটায়ার এবং প্যারোডি বলে অভিহিত করে।

ফ্যাক্টচেকিং সাইট TruthorFiction তাদের ১০ নভেম্বর,২০১৯ সালের রিপোর্টে একে মিথ্যাস্যাটায়ার বলে সাব্যস্ত করেছে।

ফ্রান্সভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং সাইট AFP Fact Check একে ‘জোক পোস্ট’ বলে অভিহিত করে।

ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সাইট Latestly এ সংবাদকে মিথ্যা দাবি করে।

এরকম আরও কিছু ফ্যাক্টচেকিং দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। তারা সবাই এ সংবাদকে মিথ্যা, গুজব এবং ব্যঙ্গাত্মক দাবি করেছে।

উইকিপিডিয়ার Sperm Theft আর্টিকেল পেজে এ গুজবটি উল্লেখ করা হয়েছে এবং একে স্যাটায়ার বলে অভিহিত করা হয়।

এই পুরোনো ইন্টারনেট গুজবটিই একই নারীর ছবি ব্যবহার করে সম্প্রতি বাংলা ভাষায় ভাইরাল হয়েছে, তবে স্যাটায়ার হিসেবে নয়। বাংলাভাষী সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা একে সত্য ঘটনাই মনে করছেন। ৮ ডিসেম্বর NewsBangla24.com বাংলা ভাষায় ভাইরাল হওয়া পোস্টটি নিয়ে একটি ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে তারা একে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে।


তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ভাইরাল হওয়া ছবির নারীটির পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায় নি।

শুক্রাণু কি দেহের বাইরে বেঁচে থাকতে পারে?

Healthline-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেহের বাইরে বাতাসের সংস্পর্শে শুক্রাণুর ক্ষয় হতে থাকে, তাই এর বেঁচে থাকার সময়কাল নির্ভর করে পরিবেশের ওপর। ইনকিউবেটরে শুক্রাণু ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত, এবং হিমায়িত অবস্থায় কয়েক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। Medical News Today-এর মতে, পরিবেশে শুক্রাণু কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত বেঁচে থাকে। Insider-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেহের বাইরে অনুকূল পরিবেশে শুক্রাণু ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে কনডমের ভেতর শুক্রাণু কত সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। কোনো কোনো কনডমে (যেমন- Trojan, Lifestyles) স্পার্মিসাইড (Spermicide) নামক একধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা শুক্রাণুকে মেরে ফেলে।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া এই ঘটনার সত্যতা পায় নি। ২০১৯ সালে একই ছবি ব্যবহার করে ইন্টারনেটে এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সম্প্রতি বাংলা ভাষায় এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচ একে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply