শুভাশীষ দীপ
Published on: September 2, 2024
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেতু উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফয়জুল কবীর খানের একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে। উপদেষ্টা বলেন, তাদের নেয়া ব্যয় সংকোচন নীতির মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। তিনি দাবি করছেন, পূর্বের প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে। তার এই তথ্যটি মূলধারার গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১,৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার! |
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, এই ১ হাজার ৮৩৫ টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে বিগত সরকারের আমলে।পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের দিন, অর্থাৎ জুলাইয়ের ৪ তারিখে (তখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসেনি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই একই পরিমাণ টাকা তখন বেঁচে গিয়েছিলো এবং সেটিকে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা ছিলো। অর্থাৎ, এই একই পরিমাণ অর্থ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাশ্রয় করেছে কথাটি সঠিক নয়। কেননা এই একই পরিমাণ অর্থ আগেই সাশ্রয় হয়ে গিয়েছিলো বলে বিগত সরকারের প্রতিনিধির তরফে সংবাদমাধ্যমে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
৩০ আগস্ট, ২০২৪ এ এক সংবাদ সম্মেলনে সেতু উপদেষ্টা বলেন, “এই পদ্মাসেতু প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় (এটা তো বারবার হয়েছে আপনারা জানেন) ছিলো ৩২৬০৫ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। এখন এই যে বললাম যে ব্যয় সংকোচন নীতি প্রচেষ্টা করে সর্বশেষ চূড়ান্ত ব্যয় এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। অর্থ্যাৎ, এখানে প্রায় ১৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটা থেকে আপনারা যেটা বুঝতে পারেন যে, আমাদের এখানে যদি ভালো সরকার থাকতো তাহলে হয়তো আমরা পদ্মাসেতু আরোও অনেক কম ব্যয়ে করতে পারতাম।” পরবর্তীতে তিনি কোন কোন খাতে টাকা বাঁচানো হয়েছে তার একটি হিসাব প্রদান করেন এবং সাশ্রয় হওয়া এই টাকা পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন এলাকায় খরচ করা হবে বলে জানান।
অর্থ্যাৎ, তিনি বলছেন তার সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে পদ্মা সেতুর ব্যয় সাশ্রয় করা হয়েছে। কিন্তু এই একই পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের একটি দাবি পাওয়া যায় গত জুলাই মাসে। আরটিভি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়। “পদ্মা সেতু নির্মাণে ১৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয়, পরিসমাপ্তি ঘোষণা শুক্রবার” শিরোনামে ৪ জুলাই, ২০২৪ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই একই পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলামের বরাতে এই তথ্যটি দেওয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয় যে এই প্রকল্পে পূর্বে বরাদ্দ ছিলো ৩২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎ, খরচ কমে এটি দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকার মত। বেঁচে যাওয়া এই অর্থ সরকারি কোষাগারে রাখা হবে বলে জানানো হয়।
দেখা যাচ্ছে যে, সেতু উপদেষ্টা যে বক্তব্যটি দিয়েছেন প্রায় একই তথ্য ৪ জুলাই আরটিভির ওই প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। তার নতুন বক্তব্যটি পুরনো ওই প্রতিবেদনের প্রতিধ্বনির মতই শোনায়। তফাৎ শুধু, তিনি বলছেন এই ব্যয়সাশ্রয় তার সরকারের আমলে ঘটেছে, কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তরফেও একই দাবি করা হয়েছে। যদি এটিও ধরে নেওয়া হয় যে, একই পরিমাণ অর্থ আগেও কমানো হয়েছে এবং এখন আবার কমানো হয়েছে (যেটি প্রায় অবাস্তব) তাতে করে মূল টাকার হিসাবে পরিবর্তন আসার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দুই দাবিতেই বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ এবং সাশ্রয়-পরবর্তী টাকার পরিমাণ একই দেখানো হচ্ছে।
উপরের খবর দুইটি একই সংবাদমাধ্যমের। প্রথমটি জুলাইয়ের আর দ্বিতীয়টি আগস্টের। একই সংবাদমাধ্যম প্রায় একই পরিমাণ অর্থ কমানোর জন্য দুইটি ভিন্ন সরকারের কথা বলছে। শুধু আরটিভি না, প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টারসহ দেশের মূলধারার অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম এই একই খবর প্রকাশ করেছে কিন্তু কেউ এই বিষয়টি সামনে আনেনি যে এই অর্থ সাশ্রয় পুরনো ঘটনা কিংবা উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, পদ্মা সেতুর ব্যয় অন্তর্বর্তী সরকার সাশ্রয় করেনি বা তাদের নীতির কারণে হয় নি। এই একই পরিমাণ অর্থ আগেই সাশ্রয় করা হয়েছিলো বলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক থেকে জানানো হয়েছিলো।
সঙ্গত কারণে এই দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |