নবজাতকের সাথে মা এবং কান্নারত ডাক্তারের পুরনো ছবি ভুয়া শিরোনামে ভাইরাল

Published on: March 16, 2022

দীর্ঘ সাত ঘণ্টা অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব, এবং প্রসবকালীন জটিলতার কারণে নিজে জীবন দিয়ে সন্তানকে বাঁচাতে ডাক্তারকে অনুরোধ করেছেন এক মা — এমন বিষয়বস্তু সামনে রেখে মা-সন্তান এবং একজন ডাক্তারের ক্রন্দনরত একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার এবং মৃত মা সম্পর্কিত কোনো তথ্য সেখানে নেই। প্রথম ছবিটি ২০১৫ সালের এবং অপরটি ২০১৭ সালের। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ছবিসহ ফেসবুক পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ভাইরাল এই ফেসবুক পোস্টে কোনো নির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। পাঠকদের সুবিধার জন্য সম্পূর্ণ পোস্টটি তুলে ধরা হলো,”একটা অপারেশন হয়ছিলো। যে অপারেশনটি করতে দীর্ঘ ৭ ঘন্টা লেগেছিল। সদ্য জন্মানো বাচ্চা শিশুটি তার মৃত মায়ের হাতের উপরে। এবং তার পাশেই ডাক্তার কাঁদছেন।

এই মা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত। যার কারণে কোন বাচ্চা নিতে পারছেন না! দীর্ঘ ১১ বছর অপেক্ষা করে বড় ধরনের রিক্স নিয়েছিলেন সন্তান নেয়ার জন্য। হয়তো সন্তান বাঁচবে না হয় মা!

এরপর ডাক্তার তার সবটুকু দিয়ে ৭ ঘন্টার চেষ্টায় বললো, বাচ্চা এবং মা দুই জনকে একসাথে বাঁচানো সম্ভব নয়।

সর্বশেষ ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিলো- বাচ্চার মাকে জিজ্ঞেস করবে, তিনি কী করতে চান? বাচ্চাকে বাঁচাবে, না কি নিজের জীবন?

মা নিজেই নিভে গিয়ে বাচ্চাকে আলো দিতে রাজি হলেন.. অপারেশন এর পর মা তার ফুটফুটে বাচ্চাটিকে তার মুখের কাছে চুমু খেলেন, জড়িয়ে নিলেন। মাত্র দুই মিনিট পর হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে জীবন ত্যাগ করলেন।

সারাবিশ্বে হাজারেরও বেশি মা প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করেন বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময়।

আফসোস! বৃদ্ধাশ্রমগুলো থেকে মা দের আহাজারি, মেয়েদের লাশ বেওয়ারিশ হয়ে কতো নাম না জানা গোরস্থানে, কত অসহায় হয়ে দাফন হচ্ছে

সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক সন্তানকে মায়ের সম্মানটুকু দেয়ার জ্ঞান দিক।আমিন।”

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

উক্ত পোস্টে থাকা দুইটি আলাদা ছবি দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে জানা যায়, এই ছবিগুলো এর আগেও অনেকক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।

অনেকগুলো ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের মধ্যে “চেকপোস্ট মারাঠি” এর একটি প্রতিবেদনে দুইটি ছবিই দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে মা ও সন্তানের ছবিটি্র সূত্র হিসেবে একটি ফটোগ্রাফিক ফেসবুক পেজের নাম উল্লেখ করা হয়। “Merve Tiritoglu Sengunler Photography” নামক এই পেজ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ তে উপরোক্ত ছবিটি আপলোড করা হয়। ছবির শিরোনামে তুর্কি ভাষায় একটি ক্যাপশন দেখতে পাওয়া যায়, যার ইংরেজি অনুবাদ হচ্ছে, “The best reunion”। এখানে কোথাও, মা সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।  বরং একজন মায়ের সাথে তাঁর গর্ভে থাকা সন্তানের পুনর্মিলনের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

এই ছবিতে মূল পেজের নাম অনুযায়ী “Merve Tiritoglu Sengunler” শীর্ষক একটি স্বাক্ষর দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে ভাইরাল ছবি এবং ২০১৫ সালের এই ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাচ্ছে, দুইটি ছবিতেই একই স্বাক্ষর রয়েছে। অর্থাৎ, ২০১৫ সালের এই ছবিটিই মূলত নতুন দাবিতে ভাইরাল হচ্ছে।


এছাড়াও একই ফ্যাক্টচেক  প্রতিবেদনে বর্তমানে ভাইরাল দ্বিতীয় ছবিটিরও সন্ধান মিলে। চেকপোস্ট মারাঠী দাবি করেছে, ছবির লোকটি ডাক্তার নন কারণ ডাক্তার ঘড়ি পড়াবস্থায় এবং মোবাইলফোন হাতে অপারেশন থিয়েটারে থাকতে পারে না। সেখানে ছবির সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্ট পাওয়া যায়। “Ozgenmetinphotograhy” নামক একটি ইন্সটাগ্রাম আইডি থেকে ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ছবিটি আপলোড হয়। এখানেও তুর্কি ভাষায় একটি ক্যাপশন দেখতে পাওয়া যায়। অনুবাদ করলে জানা যায়, সদ্য বাবা হওয়া একজন মানুষের আবেগের ছবি এটি।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Ö. Metin (@ozgemetinphotography)

ইন্সটাগ্রামের এই ছবিতে উক্ত পেজের নাম অনুযায়ী “ozgemetin.com” লেখা একটি স্বাক্ষর দেখতে পাওয়া যায়। এই ছবিটিই বর্তমানে ভিন্ন একটি দাবিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অতএব, দেখা যাচ্ছে বর্তমানে ভাইরাল ছবির মাধ্যমে যে গল্পটি বলা হচ্ছে তার সত্যতা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূল ছবিগুলোতে যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা থেকে দেখা যাচ্ছে, ছবিগুলো পুরানো এবং এর ক্যাপশন ভিন্ন। তাই এমন ভুল দাবিতে ভাইরাল ছবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply