মৃতদেহ দাফন শেখানোর ছবিকে আল আকসা মসজিদ রক্ষকের মৃত্যুর ছবি বলে প্রচার

Published on: April 12, 2023

চলতি রমজানে আল আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি কাফন পরিহিত এক ব্যক্তির ছবি ভাইরাল হয়েছে এবং দাবি করা হচ্ছে, জেরুজালেম এর আল আকসা মসজিদকে হামলা থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছেএটি ফিলিস্তিনের কোনো ঘটনা নয় , বরং এটা মালয়েশিয়ার একটি কলেজের ঘটনা । এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মুসলিম রীতিতে দাফনের রীতি শেখানো হচ্ছিল । উক্ত অনুষ্ঠানে কাফনের কাপড় পরে মৃতবত অবস্থায় এক শিক্ষার্থীর শুয়ে থাকার একটি ছবি আল আকসা মসজিদের প্রেক্ষিতে ভাইরাল হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এই ছবি তোলার সময় ছবির ব্যক্তি জীবিত ছিলেন, এবং তিনি মজা করে হাসছিলেন।  

গুজবের উৎস

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন  এখানে, এখানে


আল আকসা মসজিদে ইতিপূর্বে সংঘটিত হামলার সময়েও একি দাবীতে এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল । পূর্বে ভাইরাল হয়েছে এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

 ভাইরাল ছবিটি ইমেজ সার্চ করলে ৩রা নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে “ACTIVITIES IN KPTM”  ( বাংলা অর্থ করলে হয় “কেপিটিএমের কার্যক্রম) শিরোনামে একটা ব্লগ পাওয়া যায়। উক্ত ব্লগে ভাইরাল হওয়া ছবিটির মতো হুবহু একই ছবি পাওয়া যায়। উক্ত ব্লগ থেকে জানা যাচ্ছে ছবিগুলো রেহলাহ আল-খুলুদ প্রোগ্রামের যেটি কেপিটিএম আয়োজন করেছে।  রেহলাহ আল-খুলুদ প্রোগ্রামে হারাম এড়িয়ে কিভাবে কাফনের কাপড় পরাতে হয় এবং জানাযার গোসল করাতে হয় সে বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হচ্ছিল।

১লা নভেম্বর ২০১৪ তারিখে “কেপিটিএমের কার্যক্রম” শিরোনামে আরেকটি ব্লগ খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ব্লগ থেকে জানা যাচ্ছে রেহলাহ আল-খুলুদ প্রোগ্রামটি ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এবং ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এই ব্লগেও মৃত ব্যক্তি সেজে ছেলেদের এবং মেয়েদের কাফনের কাপড় পরানো এবং গোসল করানোর পদ্ধতি দেখানো হয়। তবে এই ব্লগে ফেসবুকে ভাইরাল ছবিটি পাওয়া যায়নি।

মালেশিয়ান সরকারি এজেন্সি MARA (Majlis Amanah Rakyat) এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে কেপিটিএম এর পুরো নাম কোলেজ পলি-টেক মারা (Kolej Poly-Tech MARA)। এটি একটি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কেপিটিএম -এর পূর্ব নাম ছিলো কোলেজ ইয়াসান পেলাজারন মারা (Kolej Yayasan Pelajaran MARA)।

কেপিটিএমের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে কেপিটিএম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি মারা কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত হয়। কেপিটিএম ৪৫টি কোর্সে শিক্ষাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। কেপিটিএম কুয়ালালামপুর পলি-টেক মারা ইউনিভার্সিটি কলেজ সহ সাতটি শাখায় শিক্ষাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে।

১১ই অক্টোবর, ২০১৪ সালে Haris Sebiey নামক একজন ফেসবুক ইউজার ভাইরাল হওয়া হুবহু একই ছবি আপলোড করে। Haris Sebiey এর পোস্ট করা ছবিতে একজন ফেসবুক ইউজার মালয় ভাষায় কেপিটিএমের নাম উল্লেখ করে। তাছাড়া ফেসবুক পোস্টের তারিখের সাথে কেপিটিএমের প্রোগ্রামের তারিখও মিলে যায় এবং কেপিটিএমের প্রোগ্রামেও একই ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এ থেকে প্রমাণ হয় Haris Sebiey এর ছবিটি কেপিটিএমের প্রোগ্রামে তোলা হয়েছে।

ভাইরাল ছবিটির সত্যতা অনুসন্ধান করে “INDIA TODAY” ফ্যাক্টচেক টিমও।  “INDIA TODAY” ফ্যাক্টচেক টিমের ধারণা ভাইরাল হওয়া ছবিটি Haris Sebiey এরই। কারণ তার চেহারার সাথে ভাইরাল হওয়া ছবিটির মিল পাওয়া যায়।


সারমর্ম 

ফ্যাক্টচেকের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কাফনে জড়ানো হাসিমুখে থাকা ব্যক্তির ছবিটি আল আকসা মসজিদ রক্ষা করতে গিয়ে হামলা ও বিস্ফোরণে মারা যাওয়া কোন ব্যক্তি নয়। বরং ছবিটি ২০১৪ সালে কেপিটিএমের আয়োজন করা রেহলাহ আল-খুলুদ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ব্যক্তি। তিনি রেহলাহ আল-খুলুদ প্রোগ্রামে কাফনের কাপড় পরানো এবং জানাযায় গোসল করানোর শিক্ষা দিচ্ছিলেন। ছবিটি সেসময় ক্যামেরাবন্দি করা হয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা ” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh