মায়ের আকূতির ভাইরাল ভিডিও: ছেলেটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় নি

Published on: February 24, 2022

সম্প্রতি “ছেলের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত তাই একটি বার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার আকুতি দুঃখিনী মায়ের” এমন শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে মিশরের একটি ঘটনা এটি। আহমেদ আবদুল ফাতাহ নামে এক ব্যাক্তিকে দেখতে তার মা মিনিয়া ক্রিমিনাল কোর্টের কাছে অনুরোধ করলে তাকে দেখতে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিকে ছেড়েও দেওয়া হয়। অর্থাৎ তার মৃত্যুদণ্ড হয়নি। ছয় বছর পুরনো এই ভিডিওটি ভুল শিরোনামে বর্তমানে ভাইরাল হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিওটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএবং এখানে

 

২ মিনিট ১১ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওতে একজন মহিলাকে আদালতে আকুতি করতে দেখা যাচ্ছে।পরবর্তীতে তার ছেলে উল্লেখিত ব্যক্তিটি আসলে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখা যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে,”ছেলের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত তাই একটি বার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার আকুতি দুঃখিনী মায়ের“।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই ভিডিও থেকে নেওয়া ছবির মাধ্যমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ”nabd.com” প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আরবি ভাষায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি গুগলের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদের মাধ্যমে দেখা যায়, “The son of this Egyptian woman speaking with the judge in the video was not executed” শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি মিশরীয় দৈনিক ‘Elwatan News’ এবং ‘Misbar’ নামে একটি তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের বরাতে তৈরি হয়েছে।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে “Elwatan News” এ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ”Elwaton” এর ভ্যারিফাইড ইউটিউব চ্যানেল থেকে ১১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। আরবি ভাষায় থাকা শিরোনামটি অনুবাদ করলে দেখা যায় সেখানে বলা হচ্ছে, “Al-Adwa juvenile judge allows the mother of an accused to meet her son and releases him”। অর্থাৎ আল-আদওয়া কিশোর আদালত অভিযুক্তকে তার মায়ের সাথে দেখা করার অনুমতি দিয়েছে এবং মুক্ত করে দিয়েছে।

পরবর্তীতে “Elwatan” এর ওয়েবসাইটে চেষ্টা করেও এই বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূল ভিডিওটি থেকে একটি বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ভিডিওটি ছয় বছর পুরনো এবং একটি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় যে উক্ত আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।

পুনরায়, “Nabd” থেকে পাওয়া ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে “Misbar” নামে উক্ত তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে বের করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি “Elwatan” এর ওই ভিডিও প্রতিবেদনটির দৃশ্যায়ন বিশ্লেষণ করে বলে, “মূল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিচারক একজন মা কে তার অভিযুক্ত ছেলের সাথে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিলেন, পরে যখন তার ছেলে আদালতে আসলো তখন তিনি তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন, পরে বিচারক তাকে বসতে বললেন এবং পরবর্তীতে তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ভাইরাল হওয়া তথ্যমতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি”।

ভিডিওটি আরবি ভাষায় হওয়ায় নিশ্চিতভাবে কথাগুলো বুঝা যায়নি তবে উক্ত বিবরণের সাথে ভিডিওর দৃশ্যায়নের মিল রয়েছে। এমনকি ভিডিওর শেষ অংশে ওই মা কে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায় এবং আদালত কক্ষে সবাইকে হাততালি দিতেও দেখা যায়।

এছাড়া অন্য একটি প্রতিবেদনের বরাতে এখানে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আহমেদ আব্দুল ফাতাহ এবং তিনি ১৪ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে মিশরের মিনিয়ায় ‘আল-আদওয়া’ নামক একটি শহরেকারাবন্দী হন। পরবর্তীতে তাকে ১১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মুক্তি দেওয়া হুয়।

অন্যদিকে, মূল ভিডিওটি ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড দীর্ঘ হলেও বর্তমানে ভাইরাল ভিডিওটি মাত্র ২ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এবং ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডটিও সম্পূর্ণ পরিবর্তিত। অর্থ্যাৎ ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে‘বিকৃত’ করা হয়েছে।

অতএব, এইটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় বরং ছয় বছর পুরনো এবং ভিডিওতে অভিযুক্ত ব্যাক্তিটিকে মৃত্যুদন্ড নয় বরং মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। অর্থাৎ, ভুল শিরোনামে ভিডিওটি বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিওটিকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply