সড়ক দুর্ঘটনায় মহানবী (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করা কার্টুনিস্টের মৃত্যু: ভুল ছবি ভুল বিবরণ

Published on: [October 6,2021]

কাঠের গুড়ি ভর্তি একটি বড় ট্রাক এর ধাক্কায় ছোট একটি প্রাইকেট কার এর সামনের অংশ গুড়িয়ে গিয়েছে  –এমন একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ফ্রান্সের এই গাড়ি দুর্ঘটনায় একজন কার্টুনিস্ট নিহত হয়েছেন, যিনি অতীতে মহানবী (সাঃ) এর কার্টুন একেছিলেন। ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধানে দেখতে পাচ্ছে, ঘটনাটি সত্য হলেও ঘটনার স্থান ফ্রান্স না, বরং সুইডেন। আর ব্যবহৃত ছবিটি নিউজিল্যান্ডে ২০১৫ সালে ঘটা একটি দুর্ঘটনার, যার সাথে আলোচিত দুর্ঘটনার কোনো সম্বন্ধ নেই।

বিভ্রান্তির উৎস

মহানবী (সাঃ)কে ব্যঙ্গ করে ছবি আঁকা কার্টুনিস্ট Lars Vilks  সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩রা অক্টোবর রাতে । বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৪ঠা অক্টোবর সকাল থেকে এই সংক্রান্ত খবর এবং গুজব ছড়াতে থাকে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে  ।

ভাইরাল ছবির উৎস

ইমেজ সার্চের মাধ্যমে জানা গেল, ভাইরাল হওয়া এই ছবিটা ২০১৫ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তারিখে নিউজিল্যান্ডের একটি দুর্ঘটনার ছবি। ওই দুর্ঘটনায় হংকং-এ বসবাসরত ৪ জন আমেরিকান নাগরিক (যারা তখন  নিউজিল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলেন) নিহত হন।

নিহতরা হলেন ৫৩ বছর বয়স্ক বাবা Warren Lee , ৫২ বছর বয়স্ক মা Aesoon Lee এবং তাদের ২০ বছর বয়সী কন্যা সন্তান Julia Lee । পুলিশ জানায় , জুলিয়া আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস এ বসবাস করত , এবং পরবর্তী মাস থেকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করার কথা ছিল। মেয়েকে একটু গুছিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের পরিবার নিউজিল্যান্ডে এসেছিল।

১৭ বছর বয়স্ক জুলিয়ার এক ভাই , Griffin Lee ও ছিল ওই গাড়িতে ।  সে আহত হয়ে এক সপ্তাহ পরে হাসপাতালে মারা যায়।

ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার সময় জুলিয়া গাড়ি চালাচ্ছিল এবং নিজের লেন ছেড়ে রাস্তার ভুল লেনে চলে এসেছিল। ফলে অপর পাশ দিয়ে যাওয়া কাঠভর্তি এই লরির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। পিছনের সিটে বসে থাকা জুলিয়া’র বাবা-মা কারোরই সিট বেল্ট বাঁধা ছিল না।

এ বিষয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন দেখুন এখানে , এখানে ,এখানে , এখানে

এই ছবির ফটোগ্রাফার হিসেবে এপি এবং নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড এর সাংবাদিক Joan van de Ven এর নাম পাওয়া যাচ্ছে। তার এই ছবির মাঝের অংশে কার্টুনিস্ট লার্স ভিকস এর পাসপোর্ট সাইজ ছবি যোগ করে ফেসবুকের ভাইরাল ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

ফ্রান্স কার্টুনিস্ট বনাম সুইডেন বিভ্রান্তি

ভাইরাল হওয়া পোস্টে ‘ফ্রান্সে মহানবী সা.এর ব্যঙ্গচিত্র আকা ভ্রস্ট শিল্পীর মর্মান্তিক মৃত্যু’র কথা বলা হয়েছে। এখানে দুর্ঘটনাস্থল হিসেবে ফ্রান্সের কথা বলা হলেও, কার্টুনিস্ট এর জাতীয়তা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা গেল, গত ৩রা অক্টোবর সুইডেনের একজন কার্টুনিস্ট (Lars Vilks) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন । দুর্ঘটনাস্থল ছিল সুইডেনের Markyard নামক শহর।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানাচ্ছে, ২০০৭ সালে এই কার্টুনিস্ট মহানবীর (সা) ব্যঙ্গচিত্র আঁকার জন্য সমালোচিত হন। এরপর থেকে তিনি নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় থাকতেন। ২০১০ এবং ২০১৪ সালে তাকে হত্যার জন্য হামলা চালানো হয়েছিল। গত ৩রা অক্টোবর রাতে তিনি পুলিশের গাড়িতেই দু’জন পুলিশসহ সুইডেনের স্টকহোম থেকে দক্ষিণের দিকে যাচ্ছিলেন। মার্কইয়ার্ড শহরের কাছে হঠাৎ তার গাড়ি দিক পরিবর্তন করে এবং রাস্তার অপর পাশে একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় দু’টি গাড়িতেই আগুন জ্বলে ওঠে। ট্রাক চালককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। লার্স ভিকস এবং তার গাড়িতে থাকা দু’জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে পুলিশ ধারণা করছে , ওই গাড়ির একটি টায়ার বিস্ফোরিত হবার কারণে গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে সেটি ট্রাকের সামনে চলে আসে।

বিবিসি, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, রয়টার্স সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও একই কথা জানাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে একটি পোড়া গাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে, যার ছবি তুলেছেন রয়টার্স এর সাংবাদিক Johan Nilsson। ( ছবি – নিউ ইয়র্ক পোস্ট এবং ইনসাইডার এর সৌজন্যে প্রাপ্ত)

দেখা যাচ্ছে, সুইডেনের আসল দুর্ঘটনাস্থলের ছবির সাথে ভাইরাল হওয়া ছবির কোনো মিল নেই।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

ভাইরাল হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার ছবিটি সাম্প্রতিক কোনো ছবি নয় বরং ৬ বছর আগে নিউজিল্যান্ডের একটি সড়ক দুর্ঘটনার ছবি এটা। এছাড়া সুইডেনের একটি দুর্ঘটনাকে ফ্রান্সের দুর্ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে এই পোস্টে। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টকে আংশিক মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply