হিন্দু মেয়ে মুসলিম হতে চায় — কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বানানো ভিডিও

Published on: May 19, 2023

সম্প্রতি একজন হিন্দু মেয়ে মুসলিম হতে চায় — এই দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওটি ডিপফেক বা নিখুঁত মিথ্যা। ভিডিওটি তৈরি করতে এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে একটি ছবিকে নিজের লেখা স্ক্রিপ্টের সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের ভয়েস ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে কথা বলানো যাবে। এই বিষয়টি প্রমাণের জন্য ফ্যাক্টওয়াচ টিম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একই ভিডিও আবারো বানিয়ে দেখেছে। সেখানে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং কণ্ঠস্বরটিও সনাক্ত করা হয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ভিডিওটিকে “বিকৃত” চিহ্নিত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।

ভিডিওটি দেখুন এখানে

ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেয়ে বলছেন, “আমি একজন হিন্দু মেয়ে, আমি মুসলিম হতে চাই কারণ আমাদেরকে মারা গেলে শশ্মানে নিয়ে যেয়ে পোড়ে, কারণ এসব দৃশ্য ভালোলাগে না তাই আমি মুসলিম হতে চাই”।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে একাধিক অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত, ভিডিওটি নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে প্রকাশিত হতে দেখা যায় নি। সেখানে মেয়েটির নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয় নি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেও তার সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে একাধিক সূত্র থেকে মেয়েটির একটি ছবি পাওয়া গেছে, যা ভাইরাল ভিডিওর সাথে অবিকল মিলে যায়।

 

দ্বিতীয়ত, ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এর অডিও এবং ভিডিওর মধ্যে কয়েকটি অসংগতি খুঁজে পাওয়া যায়।

১) ৯ সেকেন্ডের ছোট এই ভিডিওর এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, “আমাদেরকে মারা গেলে শশ্মানে নিয়ে যেয়ে পোড়ে কারণ এসব দৃশ্য ভালো লাগে না তাই আমি মুসলিম হতে চাই”। আরেকটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, “ভালো লাগেনা” শব্দটি যখন উচ্চারিত হয় তখন মেয়েটির দুই ঠোঁট একে অপরের সাথে আলাদা ছিলো। কিন্তু বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের “ভ” শব্দটি উচ্চারিত হয় ওষ্ঠ বা উপরের ঠোঁটের মাধ্যমে তাই দুই ঠোঁট একসাথে না মিশলে “ভালো” উচ্চারণ করা অসম্ভব।

 

২) সম্পূর্ণ ভিডিওতে মেয়েটির চোখের মণি বা আইবলের সামান্য স্থান পরিবর্তন হতেও দেখা যায় নি। এটি একজন মানুষের পক্ষে যদিও অসম্ভব কিছু না, তবে অবশ্যই অস্বাভাবিক।

এই অসংগতিগুলোর মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে কিছু প্রমাণ করা যায় না, তবে ভিডিওটি নিয়ে সন্দেহ জন্মানোর জন্য যথেষ্ঠ। যেহেতু অনুসন্ধান করে ভিডিওর কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায় নি, তাই পরবর্তীতে ভিডিওটি কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বানানো কি না — সে বিষয়টি অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি আমরা। ইন্টারনেটে পাওয়া ছবিটির সাহায্যে ভিডিওটি বানানো কিনা – এবারের অনুসন্ধানে এ বিষয়টি বুঝবার চেষ্টা করি।

 

এ পর্যায়ে ফ্যাক্টওয়াচের পাঠকদের জন্য এই ছবিটি থেকে একইরকম একটি ভিডিও তৈরি করি আমরা এবং এর সাথে ভাইরাল ভিডিওটির মিল-অমিল বুঝবার চেষ্টা করি।

(বিষয়টির সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে আমাদের ভিডিও তৈরির প্রযুক্তি এবং এর ধাপগুলো গোপন রাখা হলো, এবং শুধুমাত্র ভিডিওটি প্রকাশ করা হল তুলনার জন্য)

 

ভিডিও দুইটির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সবকিছুই হুবহু মিলে যাচ্ছে। ভাইরাল ভিডিওতে মেয়েটিকে ৯ সেকেন্ডে ঠিক ৫ বার চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়, ঠিক একইভাবে ফ্যাক্টওয়াচের তৈরি ভিডিওটিতেও একইভাবে ৫ বার চোখের পলক ফেলতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ভয়েস, শব্দের উচ্চারণ, মুখমণ্ডলের নড়াচড়া সবকিছুই প্রায়-শতভাগ একইরকম। আমাদের তৈরি ভিডিও এবং ভাইরাল ভিডিওর নিম্নোক্ত স্ক্রিনশট দেখলে পরিষ্কার বুঝা যাবে যে, একই পদ্ধতিতে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভাইরাল ভিডিওর অংশ

ফ্যাক্টওয়াচের তৈরি ভিডিওর অংশ

 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চিতভাবেই দেখা যাচ্ছে, ভিডিওটি এই একই প্রযুক্তি কিংবা এর কাছাকাছি অন্য একটি প্রযুক্তি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে। কারণ এখানে ব্যবহৃত কণ্ঠস্বর কিংবা মুখমণ্ডলের নড়াচড়া কোনটাই প্রাকৃতিক নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে একটি ছবিকে কথা বলানো হয়েছে এবং একটি রোবটের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওতে থাকা মেয়েটির ধর্মান্তরিত হওয়ার ইচ্ছার কোনো প্রমাণ মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমরা খুঁজে পাই নি। সামাজিক মাধ্যমেও নিবিড় অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনুরূপ কোনো ভিডিও পাওয়া যায় নি। বরং যে ছবিটি পাওয়া গেছে সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তা দেয়। সঙ্গত কারণেই আমরা এই ভিডিওটিকে “বিকৃত” চিহ্নিত করছি।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh