এই ইসরায়েলী ব্যক্তিকে কি জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

Published on: December 17, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ  চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের সময় জোর করে এক ইসরায়েলি সৈন্যকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও যেখানে তিনি বলছেন- “না, আমি মরতে চাই না!”

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। এটা চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের সাথে সম্পৃক্ত কোনো ভিডিও নয় বরং, ২০০৫ সালের একটি ভিডিও। সেখানে যে ব্যাক্তিকে জোরপূর্বক নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে তার নাম সোদি নামির। তিনি গুশ কাতিফের একজন সামরিক ডাক্তার ছিলেন। গুশ কাতিফ ছিল দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বসতির একটি ব্লক। ২০০৫ সালের আগস্টে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় নেয়া এক  সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক গাজার ২৫ টি ইহুদি বসতি থেকে জোরপূর্বক ৮,৫০০ জন বাসিন্দাকে সরিয়ে দেয়া হয়, যাদের মধ্যে সোদি নামিরও ছিলেন। জোরপূর্বক তাকে যখন গুশ কাতিফ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছিল তখন তিনি চিৎকার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ভয়ানক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন৷

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

Screenshot of a viral post

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে জোরপূর্বক যেই ব্যাক্তিকে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে, দাবি করা হচ্ছে তাকে জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে Infos Israel News নামের একটি সংবাদমাধ্যমের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১২ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে ভাইরাল হওয়া ব্যক্তির নাম ‘সোদি নামির’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০০৫ সালে গুশ কাতিফ থেকে ইসরায়েলি বসতি উচ্ছেদের সময় সোদি নামির চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

এরপর, আমেরিকান একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র Jewish Press এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও এই একই ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায় যে সোদি নামির ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের ক্যাপ্টেন এবং গুশ কাতিফের একজন ডাক্তার ছিলেন। গুশ কাতিফ থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়ার সময় তাকে যখন বাসে তোলা হয়েছিল তখন তিনি চিৎকার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ভয়ানক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন৷ তার ভবিষ্যদ্বাণীটি হচ্ছেঃ

“তোমাদের ক্ষমা প্রার্থনা কবুল হবেনা। এক মিলিয়ন খুনি ফিলাডেলফির পথ দিয়ে প্রবেশ করবে। আশকেলনে কাতিউশাস রকেট হামলা হবে। সেডরোটে মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হবে। নেটিভোটে হত্যাকাণ্ড চালানো হবে। তোমরা সবাই এই অপরাধের অংশীদার। কোনো কিছুই এমন পরিস্থিতিতে সাহায্য করবে না, এটাই হবে।” (অনুবাদ)

Screenshot from Jewish Press report

পরবর্তিতে, এই সূত্র অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কিছু কি- ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে Patriotic Israeli Zionists নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট আপলোড করা ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার ক্যাপশনে উল্লেখ ছিল যে ভিডিওটি ২০০৫ ডিসএনগেজমেন্টের সময়কার।

উল্লেখ্য, ২০০৫ ডিসএনগেজমেন্ট বলতে ২০০৫ সালের আগস্ট, গাজা উপত্যকায় ২৫ টি ইসরায়েলি বসতির প্রায় ৮,৫০০ জন বাসিন্দা এবং সেখানে অবস্থানকারী সেনাবাহিনীকে গাজা উপত্যকা থেকে একতরফাভাবে সরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে বোঝায়। এই ২৫ টি বসতি হচ্ছে  গানিম, কাদিম, হোমশ, সানুর, নেটজার হাজানি, গনি তাল, কাতিফ, নেভে ডেকালিম, জাদিদ, গণি অর, বেদুলাহ, মিটজভেহ, বিয়াত সাদি, শিলো-ইয়াকাল, মোরাগ, রাফিহ ইয়াম, এরেজ, কাফার ইয়াম, এবং তাল আমরান্থ, শিরাত হায়াম, এলি সিনাই, ডগিট, নিসানিত, নেটজারিম এবং কাফার দারোম।

যেহেতু, ভাইরাল ভিডিওটি চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের সাথে সম্পৃক্ত কোনো ভিডিও নয় বরং ২০০৫ সালের ভিন্ন এক ঘটনার একটি ভিডিও। সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh