মহানবী (সা) এর জোব্বা নয়, এটি প্রাচীন মিশরের আলখাল্লা

Published on: April 28, 2022

মহানবীর (সা) জোব্বা মোবারক -ক্যাপশন সহ একটি প্রাচীন আলখাল্লার ছবি ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, এটি সপ্তম শতকে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা) এর ব্যবহৃত আলখাল্লা। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি ২০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে মিশরের পিরামিড থেকে পাওয়া একটি আলখাল্লা ।

গুজবের উৎস

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে  ।

অনুসন্ধান

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা গেল , এই আলখাল্লাটি ইটালির তুরিন শহরে অবস্থিত Museo Egizio অর্থাৎ Egyptian Museum (মিশরীয় যাদুঘর) এ অবস্থিত ।

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, ১৮২৪ সালে এই যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কায়রোয় অবস্থিত ইজিপ্সহিয়ান মিউজিয়াম অফ কায়রো এর পরে মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের দিক দিয়ে এটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই মিউজিয়ামে প্রায় ৩০ হাজার সংগ্রহ রয়েছে।

মিউজিয়াম এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর ‘কালেকশন্স’ অংশে অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে, আলোচ্য আলখাল্লাটি S-14087 নাম্বার আর্টিফ্যাক্ট হিসেবে যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ।

যাদুঘরের ওয়েবসাইট থেকে আরো জানা যাচ্ছে, আলখাল্লাটির ৩ টা অংশ রয়েছে। ২ হাতার জন্য ২ টুকরা কাপড়, এবং তৃতীয় আরেক টুকরো দিয়ে বাদবাকি আলখাল্লা গঠিত। গলার কাছে ফিতা দিয়ে আটকানো। মৃত ব্যক্তির শরীরে এই আলখাল্লা পরিয়ে তাকে সমাহিত করা হত।

উক্ত যাদুঘরের ওয়েবসাইটে  S.7932.4 ক্রমিক সম্বলিত একই ধরনের আরো একটি আলখাল্লা খুজে পাওয়া যাচ্ছে।

The Journal of Egyptian Archaeology এ ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত A pleated linen dress from a Sixth Dynasty tomb at Gebelein now in the Museo Egizio, Turin শীর্ষক এই গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে , প্রত্নতত্ত্ববিদ Ernesto Schiaparelli ১৯১১ সালে মিশরের Gebelein প্রাচীন শহরের উত্তর অংশে খনন কাজের মাধ্যমে এই কুচিযুক্ত লিলেন পোষাক খুজে পান। মিশরের ষষ্ঠ সাম্রাজ্যের একটি সমাধি থেকে এই কাপড় উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে সমাধি মালিকের প্রকৃত পরিচয় এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

ফ্যাব্রি হোলিক নামক এই ওয়েবসাইটে Helena Frei নামক সাংবাদিক ইটালির তুরিন শহরের ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে তার দেখা বিভিন্ন প্রকার কাপড়ের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এরই এক পর্যায়ে তিনি আলোচ্য কুচিযুক্ত লিলেনের আলখাল্লার সচিত্র বর্ণনাও দিয়েছেন ।  তিনি জানাচ্ছেন , তুরিনের ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে প্রায় এক ডজন এই ধরনের আলখাল্লা রয়েছে । তবে এদের মধ্যে ৩ টা আলখাল্লাকে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

flextiles নামক আরেকটি ব্লগ সাইটেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া গেল। এখানে লেখক জানাচ্ছেন, ৪০০০ বছরের পুরনো আলখাল্লাটি এখনো খুব ভাল অবস্থায় আছে ।

Voyatours নামক ইউটিউব চ্যানেলে তুরিন এর এই Museo Egizio যাদুঘর ভ্রমণের একটি ভ্লগ পাওয়া গেল। এই ভিডিওর ১১ তম মিনিটে আলোচ্য আলখাল্লা দেখা গেল। যাদুঘরে একে Pleated Tunics নামফলক দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

ansa নামক ইটালিয়ান ওয়েবসাইটেও এই আলখাল্লার উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে , যেখানে বলা হয়েছে- এই যাদুঘরে মোট ১২ টা এই ধরনের আলখাল্লা রয়েছে, যার মধ্যে ৬/৭ টা এখনো অক্ষত রয়েছে।

ছবি শেয়ার করার ওয়েবসাইট alamy তে অনেকে এই আলখাল্লার ছবি তুলে আপলোড করেছেন। এমন কয়েকটা ছবি দেখুন এখানে , এখানে , এখানে

তুরিন এর ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম এর টিকেট বিক্রির একটি ওয়েবসাইটে জিওভান্না নামক জনৈক ইটালিয়ান যুবক এই আলখাল্লার ছবি পোস্ট করে বলছে, সে যাদুঘর ভ্রমণ করতে পেরেছে ।

অর্থাৎ, বিভিন্নভাবে অনেক পর্যটক/সাংবাদিকই ইটালির তুরিন এর যাদুঘরে মিশরের আলোচ্য আলখাল্লার ছবি তুলে ইন্টারনেটে আপলোড করেছেন। সেক্ষেত্রে, বিভিন্নভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, ছবির আলখাল্লাটি খৃস্টপূর্ব ২০০০ সালের অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে মিশরে তৈরি হওয়া আলখাল্লা। এবং এর সাথে সপ্তম শতকের সৌদি আরব বা মহানবীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই।

তাই, মহানবীর (সা) জোব্বা দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply