ঘরে বসে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার ভিত্তিহীন দাবি

Published on: February 23, 2022

‘বাড়িতে বসেই জেনে নিন আপনি গর্ভবতী কিনা’ – এমন একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। সেখানে ইউরিনের সাথে টুথপেস্ট, চিনি, সাবানপানি, সরিষা পাউডার ও ভিনেগার ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি করা হয়েছে। এটি মূলত আবহমানকাল ধরে চলে আসা একটি মিথ। বিখ্যাত মেডিকেল সাইটগুলো এই ” পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছে। 

বিভ্রান্তির উৎস

২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে গুজবটি ফেসবুকে বর্ণনামূলক স্ট্যাটাস এবং ভিডিওবার্তা আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত এবং চিকিৎসকের নাম-সম্বলিত পেইজ থেকে পোস্টটি শেয়ার করা হয়। তারকা নুসরাত ইমরোজ তিশার নাম সম্বলিত একটি ফেসবুক পেইজ থেকেও গুজবটি শেয়ার করা হয়। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

প্রেগন্যান্সি টেস্টের ভিত্তি হলো Human chorionic gonadotropin (hCG) নামক হরমোন। পুরুষের শুক্রাণু যখন নারীর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, নারীদেহে প্ল্যাসেন্টা (placenta) গঠিত হতে থাকে এবং এই প্ল্যাসেন্টা hCG হরমোন উৎপাদন ও নিঃসরণ করে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট দুটি উপায়ে করা হয়য়ে থাকে – ইউরিন ও রক্ত। ইউরিন ও রক্তের সাথে hCG হরমোনের বিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে গর্ভধারন সনাক্ত করা হয়। ফার্মেসিতে যে মেডিকেল প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটগুলো কিনতে পাওয়া যায় সেটি মূলত ইউরিন টেস্ট করে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটগুলো দিয়ে বাড়িতে বসে গর্ভধারণ পরীক্ষা করার জন্য ইউরিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ hCG পেতে  গর্ভধারণের মোটামুটি দু সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

গুজবটির প্রথম পয়েন্টে বলা হয়েছে, একটি কন্টেইনারে ইউরিনের সাথে টুথপেস্ট মেশালে যদি ইউরিন নীল রঙ ধারণ করে অথবা ফেনা তৈরি হয় তাহলে গর্ভধারণ হয়েছে নিশ্চিত হওয়া যাবে। দ্বিতীয় পয়েন্টে বলা হয়েছে, ইউরিনের সাথে চিনি মেশালে যদি সেটি মিশে যায় তবে বোঝা যাবে ব্যক্তি গর্ভবতী নয়, যদি ইউরিন জমাট বেঁধে যায় তবে বোঝা যাবে গর্ভবতী। তৃতীয় পয়েন্ট –  ইউরিনের সাথে সাবান পানি মেশালে যদি মিশ্রণটিতে বুদবুদ ওঠে তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা রয়েছে। চতুর্থ পয়েন্ট – এক বালতি পানিতে দুই কাপ সরিষা গুঁড়ো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর এই পানিতে গোসল করলে ৪-৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ড হয়ে যাবে, গর্ভবতী হয়ে থাকলে পিরিয়ড হবে না। পঞ্চম পয়েন্টে বলা হয়েছে – ভিনেগারের সাথে ইউরিন মেশালে যদি রঙ পরিবর্তিত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ব্যক্তি গর্ভবতী।

বিখ্যাত মেডিকেল সাইট healthline এর এই আর্টিকেলটিতে বলা হয়েছে, অনলাইনে বিভিন্ন গৃহস্থালি বস্তু দিয়ে গর্ভধারণ পরীক্ষার কথা পাওয়া যায়। যেমন শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, চিনি, ব্লিচ, সাবান, ভিনেগার, বেকিং সোডা এবং পাইন-সল (গৃহস্থালি জিনিস পরিষ্কারের একটি কেমিক্যাল)। দাবি করা হয় এগুলো hCG হরমোন সনাক্ত করতে পারে। তবে এই দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি একটি মিথ। কোনো রিসার্চে উক্ত বস্তুগুলো প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে সক্ষম এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষা প্রেগন্যান্সি টেস্টের নিশ্চিত ফলাফল দেয়। এছাড়া ফার্মেসিতে যে মেডিকেল টেস্ট কিটগুলো পাওয়া যায় সেগুলোও অনেকখানি নির্ভরযোগ্য।

আরেকটি নির্ভরযোগ্য মেডিকেল সাইট MedicalNewsToday এর এই আর্টিকেলটিতে গম ও বার্লি, চিনি, লবণ, বেকিং সোডা ও শ্যাম্পু ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি টেস্টকে বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন দাবি করা হয়েছে। প্রেগন্যান্সি টেস্টের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হিসেবে ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং ফার্মেসির টেস্ট কিট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওপরের আর্টিকেলগুলোয় সরিষা পাউডারের কথা উল্লেখ নেই। তবে সরিষা পাউডার পিরিয়ড হতে সাহায্য করে এমন কোনো গবেষণা অথবা নির্ভরযোগ্য সূত্র ইন্টারনেটে পাওয়া যায় নি।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply