মোহাম্মাদ আরাফাত
Published on: September 5, 2024
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, গত ৩১ আগস্ট ২০২৪ এ শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা বাজারের জয় দুর্গা বারোয়ারী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটিকে নাকচ করে দিয়েছেন। পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা বলছেন, পূজার আগে নির্মাণাধীন অসম্পন্ন প্রতিমার ছবি দিয়ে ভাঙচুরের গুজব ছড়ানো হয়েছে। তাছাড়া, পূজার মন্ডপ নির্মাণকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন কমিটির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অতএব, পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য এবং স্থানীয়দের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বুঝা যাচ্ছে জয় দুর্গা বারোয়ারী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে। |
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের জয় দুর্গা বারোয়ারী মন্দিরে গত ৩১ আগস্ট, শনিবার রাতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমরা বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন খুঁজে পাই। এর মাঝে বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরের প্রকাশিত “শেরপুরে প্রতিমা ভাঙচুর হয়নি, দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জয় দুর্গা বারোয়ারী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিটিকে নাকচ করে দিয়েছেন।
গত ০২ সেপ্টেম্বর, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য পাঠ করেন উক্ত পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব দাম ঠান্ডু। তিনি বলেন, “শ্রীবরদী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা বাজারে দুইটি মন্দিরের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব রয়েছে। রোববার সকালে বারোয়ারী মন্দিরের তালার চেইন কেটে আসন্ন দুর্গা পূজার জন্য প্রস্তুতাধীন প্রতিমাগুলো একত্র করে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন মন্দিরটি পরিদর্শন করে এবং প্রতিমাগুলো অক্ষত অবস্থায় দেখতে পায়। ঘটনাস্থল ভায়াডাঙ্গায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। তবে প্রতিমা একত্রে রাখার বিষয়টিকেই গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “ওই মন্দিরে প্রতিমাগুলো একত্র করা হয়েছিল। ওখানে আগুন দেওয়ার জন্য পেট্রোল রেখে দিয়েছিল। কিন্তু আগুন দেয়নি। তার মানে এটা পরিকল্পিত ঘটনা। দুর্গা পূজাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও ভয় দেখাতে কিছু দুষ্কৃতকারী পরিকল্পিতভাবে এটা ঘটিয়েছে।”
শেরপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সাজু বাসফর যমুনা টিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ঐ মন্দিরে প্রতিমাগুলো এক মন্দির থেকে আরেক মন্দিরে স্থানান্তরিত করার জন্য একত্র করে রাখা হয়েছিল এবং প্রতিমাগুলো কেউ ভাঙচুরও করেনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন দুর্গা পূজার মন্ডপ নির্মাণকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন কমিটির দুই পক্ষের কোন্দলের জেরে প্রতিমা ভাঙচুরের গুজব ছড়ানো হয়েছিল।
শ্রীবরদী থানার ওসি কাইয়ুম খান সিদ্দিকী যমুনা টিভিকে বলেন, নির্মাণাধীন অসম্পন্ন মূর্তিগুলো ভাঙেনি বরং সেগুলো একটু এদিক-সেদিক হয়ে যাওয়ায় এবং পূজা কমিটির দুই পক্ষের মাঝে কোন্দলের জেরে ঘটনাটি ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের জয় দুর্গা বারোয়ারী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিটি সঠিক নয়। জেলা পূজা উদযাপন কমিটি এবং স্থানীয়রা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই দাবিটিকে নাকচ করে দিয়েছেন।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর দাবিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |