প্রধানমন্ত্রী কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন?

Published on: August 23, 2022

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী — এই দাবিতে সম্প্রতি একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং সেসব পোস্টে ব্যবহৃত ভিডিও ক্লিপটি ২১ আগস্ট, ২০২২ এ আওয়ামি লীগ আয়োজিত একটি আলোচনা সভার। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দীর্ঘ বক্তব্যের কোথাও এমন কোনো বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায়নি। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিওসহ কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

১৪ মিনিট ৩১ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওতে কমপক্ষে তিনজনের আলাদা আলাদা বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রসঙ্গে কথা বলছেন এবং তাঁকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই ভিডিওটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের আলোচিত একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী্সহ আরোও দুইজন ব্যক্তির বক্তব্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে আওয়ামিলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ এরশাদ হোসেন রাশেদের বক্তব্য রয়েছে।

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য ফুটেজের মূল ভিডিওগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে, চ্যানেল ২৪ এ দেওয়া আব্দুর রহমানের সাক্ষাৎকার। ২০ আগস্ট, ২০২২ এ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি প্রায় ৫ মিনিট দীর্ঘ। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের কেউ নন তাই তার বক্তব্য দলের বক্তব্য নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরোও গঠনমুলকভাবে বক্তব্য দেয়ার জন্য  দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তো অবশ্যই কথা হয়েছে কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে যেহেতু তিনি প্রধানমন্ত্রীর কেবিনেটের মন্ত্রী তাই এই বিষয়টি তিনিই (প্রধানমন্ত্রী) দেখভাল করবেন বলে আশা করেন।

ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহৃত মোঃ এরশাদ হোসেনের ভিডিওটি ঢাকা পোস্ট থেকে নেয়া হয়েছে। মূল ভিডিও থেকে জানা যায়, সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগের জন্য আইনি নোটিশ পাঠান। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। পুরো ভিডিওতে পদত্যাগ সম্পর্কিত এই একটি তথ্যই পাওয়া যায়। তবে এটি প্রধানমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নয়।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিডিও ফুটেজটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি আরটিভি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আরটিভি প্রকাশিত ভিডিওতে কোথাও প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি। জানা যায়, গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের একটি প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে তিনি ২১ আগস্ট, ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে কথা বলেন। পুনরায় অনুসন্ধানের মাধ্যমে সেখানে দেওয়া সম্পূর্ণ বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় ৪৩ মিনিট দীর্ঘ সেই বক্তব্যে কোথাও প্রধানমন্ত্রীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। এছাড়া বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমেও কোথাও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহৃত তিনটি ভিডিওর কোথাও “পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলেছেন” কিংবা “২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন” এমন বিবৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর বরাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে ঠিকই তবে তা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নয়।

অতএব, বিষয়টি পরিষ্কার যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উল্লেখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্যটি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ের। সেখানে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দেননি। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এই পোস্টটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করা হচ্ছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh