‘খালেদা জিয়াকে ভারতের সাথে মিলে জেলে রাখার গোপন খবর ফাঁস’ — ভুয়া ক্যাপশন 

Published on: November 14, 2022

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী “খালেদা জিয়াকে ভারতের সাথে মিলে জেলে রাখার গোপন খবর ফাঁস” এই মর্মে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন সঞ্চালনায় “বাড়াবাড়ি করলে জেল” শিরোনামে একটি টকশো অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের সেই টকশোটি থেকে ৬ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড অংশ নিয়ে উক্ত ক্যাপশনে ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ভিডিওটির কোনো অংশে অতিথিদের এ কথা বলতে শোনা যায়নি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজার পিছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কোনো ইন্ধন আছে।

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ভাইরাল ৬ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি দেখা হলে, টকশোটিতে উপস্থিত অতিথিদের বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ও তাঁর সাথে ভারতের সম্পর্ক এমন ধরণের কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হলে জার্মান-ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের  ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব চ্যানেলে “বাড়াবাড়ি করলে জেল” শিরোনামে একটি টকশো অনুষ্ঠান পাওয়া যায়। অনুষ্ঠানটিতে অতিথি হিসেবে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। অনুষ্ঠানটি দেখুন এখানে

প্রসঙ্গত, এই টকশোটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো ছিলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি, ইচ্ছায় জেল? নির্বাহী ক্ষমতা কি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামতো প্রয়োগ করার সুযোগ থাকা উচিত? বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্য কীভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে? সংবিধানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ কি রয়েছে? খালেদ মুহিউদ্দীনের এ সকল প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত অতিথিরা বিভিন্ন বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানটির শুরুর ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড অংশে খালেদ মুহিউদ্দীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বের দেওয়া একটি বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  একটি  বক্তব্যে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠিয়ে দিবেন। প্রতিবেদন দেখুন এখানে

এ বিষয়ে খালেদ মহিউদ্দীন  প্রফেসর আসিফ নজরুলের কাছে বক্তব্য জানতে চান। আসিফ নজরুল এ সময়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ১২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড পর্যন্ত তিনি তাঁর বক্তব্য দেন। উল্লেখ্য, পুরো টকশোটির এই অংশটুকু বর্তমানে “খালেদা জিয়াকে ভারতের সাথে মিলে জেলে রাখার গোপন খবর ফাঁস” ক্যাপশনে ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে। তবে এই অংশে এ সম্পর্কিত কোনো কথা বলা হয়নি।

উল্লেখ্য, খালেদ মহিউদ্দীন সঞ্চালিত টকশোটির অন্যতম প্রতিপদ্য ছিলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি, ইচ্ছায় জেল? মূলত, শুরুর এই প্রশ্নটির জবাবে আসিফ নজরুল আলোচনা করেছেন।

এখন দেখে নেয়া যাক ৫১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের পুরো অনুষ্ঠানটিতে ভারতকে নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়েছে কিনা। খালেদ মহিউদ্দীনের দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিলো, নির্বাহী ক্ষমতা কি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামতো প্রয়োগ করার সুযোগ থাকা উচিত?

২৬ মিনিট ৯ সেকেন্ড অংশে খালেদ মহিউদ্দীন সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশের সংবিধান এককভাবে প্রধান নির্বাহীর কাছে সব ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন কিনা? আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও নির্বাহী ক্ষমতা সব সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। এ বিষয়ের আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে খালেদ মহিউদ্দীন আসিফ নজরুলকে কিছু বলতে বলেন। আসিফ নজরুল বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সংবিধানকে দৃষ্টান্ত ধরে বলেন,  ভারতের যে রাষ্ট্রপতি আছেন তিনি সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক ক্ষমতাশালী। ভারতের যে প্রধানমন্ত্রী আছেন সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে তিনি অনেক কম ক্ষমতাশালী।  উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে প্রেসিডেন্ট যা কিছু করবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করবেন শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করা ছাড়া। ভারতের সংবিধানে আছে প্রধানমন্ত্রী যা করবেন মন্ত্রীসভার পরামর্শে করবেন। অর্থাৎ পুরো ক্যাবিনেটের পরামর্শ নিতে হবে। এসময়ে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সংবিধানের বেশকিছু পার্থক্য তুলে ধরেন।

এখানে দেখা যাচ্ছে, টকশোটিতে বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন প্রবিধান আলোচনা করার স্বার্থে ভারতের সংবিধানের দৃষ্টান্ত নেয়া হয়েছে। যার সাথে খালেদা জিয়ার কোনো আলোচনার সম্পর্ক নেই।

অর্থাৎ, ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ চ্যানেল থেকে প্রচারিত টকশোটিতে সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য, বাংলাদেশের সংবিধান ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে অতিথিদের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। অতিথিরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। এ সকল বক্তব্যের মাঝে কোথাও “খালেদা জিয়াকে ভারতের সাথে মিলে জেলে রাখার গোপন খবর ফাঁস করার মতো কোনো তথ্য নেই।

সঙ্গত কারণে এই ক্যাপশনগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh