শিশুটিকে পরিবার-বিচ্ছিন্ন করেছে জার্মান পুলিশ, তবে সমকামিতার বিরূদ্ধে বলার কারণে নয়

Published on: June 1, 2023

জার্মানির একটি শিশুকে পুলিশ কর্তৃক বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে,  সমকামিতা ও লিঙ্গান্তর বিষয়ে তাঁর পরিবার থেকে শিখিয়ে দেওয়া ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এই শিশুটি তার স্কুলে অন্যদের সাথে শেয়ার করায় পুলিশ তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। জার্মান পুলিশের পক্ষ থেকে এই ভিডিওর সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে, তবে কথিত অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়েছে। শিশুটি ও তার পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে শিশুটিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ প্রকাশ করেনি তারা। উক্ত শিশুর অভিভাবকরাও সংবাদমাধ্যমে শিশুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে কিছু জানায়নি। যেহেতু পুলিশের পক্ষ থেকে এই তথ্যটিকে মিথ্যা দাবি করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, এবং শিশুটির অভিভাবকেরাও সংবাদমাধ্যমে কোনো তথ্য জানায় নি, তাই ফ্যাক্টওয়াচ ছড়িয়ে পড়া এই অভিযোগটিকে “আংশিক মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

 

গুজবের উৎস:

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

এসব পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, এই ছেলেটি স্কুলে গিয়ে বলেছিল যে আমার বাবা-মা বলেছেন ইসলামে সমকামিতা হারাম শুধুমাত্র এই কারণে এই বাচ্চাটিকে জার্মান পুলিশ তার ফ্যামিলি থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাচ্ছে,,, নির্মমতা সিমা ছাড়িয়েছে,, হে আল্লাহ আপনি সারা বিশ্বের মুসলিম ভাই বোনদের জান,মাল ঈমান,আমল, ইজ্জত, আবরুর হেফাজত করেন



ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান:

জার্মানির ব্রেমেন (Bremen) রাজ্যের অন্তর্গত একটি শহর ব্রেমারহাফেন (Bremerhaven) । এই ব্রেমারহাফেন এর পুলিশ এর সদর দফতরের ওয়েবসাইট থেকে গত ২৯শে এপ্রিল এই বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। এখানে জানানো হয়,

যুব কল্যাণ অফিস এবং ব্রেমারহাফেন পুলিশের যৌথ অভিযানের একটি ভিডিও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে প্রচারিত হচ্ছে, যে অভিযানের কারন সম্পর্কে অনেকে মিথ্যা মন্তব্য করছেন। 

 

দুটি শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য আদালতের আদেশ কার্যকর করার একটি ছোট অংশ দেখানো হয়েছে ভিডিওটিতে । এ অভিযানে যুব কল্যাণ অফিসকে সহযোগিতা করেছে পুলিশ। কেবলমাত্র নিরুপায় হলেই শিশুদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

 

উক্ত পরিবার এবং শিশুর সুরক্ষার জন্য, আমরা এই ঘটনা বা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আর কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারছি না। আশা করি, আপনারা বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেন । আমরা সচেতন যে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি  অস্বস্তিকর।

অনুগ্রহ করে মিথ্যা তথ্য ও দাবি ছড়াবেন না।

বিবৃতিটির ইংরেজি অনুবাদ দেখতে পাবেন এখানে

পুলিশের এই বিবৃতির উপর ভিত্তি করে জার্মানভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট মিথডিটেক্টর এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মিসবার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেখুন এখানে , এখানে

এসব প্রতিবেদনে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাবিটিকে ভুল হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

মিথডিটেক্টরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভিডিওতে শিশুটির অভিভাবকরা এবং পুলিশ জার্মান ভাষায় কথা বলছিল। কথোপকথনের এক পর্যায়ে এক অভিভাবক জানান, শিশুটির মৃগীরোগ (epileptic seizure) রয়েছে, এবং এভাবে আটক করা তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। উত্তরে পুলিশ জানায়, আদালত এই (শিশুটিকে পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য) আদেশ দিয়েছে, এবং তারা কেবলমাত্র আদেশ পালন করছে। 

আলোচ্য শিশু কিংবা তার পরিবারের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয় নি। শিশুটিকে আশ্রয় কেন্দ্রে তুলে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকেই নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

যেহেতু শিশুটিকে জার্মান পুলিশ কর্তৃক শিশু পরিচর্যাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সত্য, কিন্তু এর কারণ সম্পর্কে যা দাবি করা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই, শিশুটির পরিবার থেকেও কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন দাবি করা হয় নি, এবং জার্মান পুলিশের পক্ষ থেকেও অভিযোগটিকে মিথ্যা বলা হয়েছে, তাই ফ্যাক্টওয়াচও এই দাবিটিকে “আংশিক মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে। 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh