“হাঁস-মুরগী না খাওয়ার নির্দেশ”- শিরোনামে বিভ্রান্তিকর খবরটি ভারতের

Published on: March 10, 2023

“ছড়িয়ে পড়েছে এইচ৫এন১ ভাইরাস, হাঁস-মুরগী না খাওয়ার নির্দেশ”- শিরোনামে সম্প্রতি একটি খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি ভারতে উক্ত ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে এবং সেখানকার কিছু বিশেষজ্ঞরা পোল্ট্রি না খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া বাংলাদেশে এমন প্রাদুর্ভাবের কোনো তথ্য কিংবা এমন নির্দেশনা গণমাধ্যম কিংবা সরকারি কোনো মাধ্যম থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন তথ্যের শিরোনামে প্রাদুর্ভাবের স্থান উল্লেখ না করায় অনেকেই খবরটিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এমন তথ্য সংবলিত ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

এমন তথ্যসহ কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, ভারতের ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচিতে এইচ৫এন১ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায় (এইচ৫এন১ ভাইরাস বার্ড-ফ্লু বা এভিয়েন ফ্লু নামক এক ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জার একটি স্ট্রেইন)। আউটলুক ইন্ডিয়া প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে এমন ভাইরাসের সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ে।

ইউনিয়ন মিনিস্ট্রি অব ফিসারিজ, এনিম্যাল হাসবেন্ড্রি এবং ডেইরি থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়, ঝাড়খন্ডের সেই জায়গা থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য ভূপালে অবস্থিত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন হাই সিকিউরিটি এনিমেল ডিজিজে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পর সেখানে এইচ৫এন১ এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

এছাড়া ডেকান হেরাল্ড প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে

এর প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের বরাতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া। “Avoid poultry till avian influenza cases subside, warn health experts” শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে, সাময়িকভাবে পোল্ট্রি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। রাজেন্দ্র ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস এর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ড. অশোক কুমার শর্মা বলেন, যদিও রান্নার সময় তাপের কারণে মোটামুটি সব ভাইরাসই মারা যায় তবুও অন্যান্য উপায়ে আক্রান্ত পাখি থেকে আমাদের শরীরে ভাইরাসটি আসতে পারে। তাই সাময়িক সময়ের জন্য যদি পোল্ট্রি খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায় তবে তাতে ক্ষতি নেই। অর্থ্যাৎ, তিনি পোল্ট্রি না খাওয়ারই পরামর্শ দিয়েছেন।

মূলত ভারতের ডেকান হেরাল্ড এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এই প্রতিবেদনগুলোর বরাতে বাংলাদেশে এই খবরটি প্রকাশিত হচ্ছে। রাইজিং বিডি, বনিক বার্তাসহ দেশের বেশ কিছু নিউজপোর্টালে এমন খবর দেখতে পাওয়া যায়। এসব প্রতিবেদনের শিরোনামে উক্ত প্রাদুর্ভাবের স্থান উল্লেখ করা হয়নি তবে বিস্তারিত অংশ পড়লে বুঝা যায় যে এটি ভারতের খবর। তবুও শিরোনামে স্থান উল্লেখ না থাকায় অনেকেই খবরটিকে বাংলাদেশের বলে ধরে নিচ্ছেন এবং বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

বিভ্রান্তির নমুনাঃ


 

এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের হাঁস-মুরগিতে এমন ভাইরাস পাওয়া যাওয়ার কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি, এছাড়া সরকার কিংবা বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকেও হাঁস-মুরগি খাওয়ার ব্যাপারে এমন কোনো সতর্কতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বার্ড-ফ্লু সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

অতএব, বুঝা যাচ্ছে যে ভারতের পোল্ট্রিতে এমন ভাইরাস পাওয়া গেলে সেখানকার কিছু বিশেষজ্ঞরা কিছুদিন পোল্ট্রি না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই তথ্যটি স্থান উল্লেখ না করে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশিত হচ্ছে যে, সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকেই এটিকে বাংলাদেশের খবর মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh