প্রধান শিক্ষকের বেতের আঘাতে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু – ভূয়া শিরোনামে পুরনো ভিডিও

Published on: September 27, 2021

সম্প্রতি “প্রধান শিক্ষকের বেতের আঘাতে স্কুল ছাত্রির মৃত্যু, এগুলো ভাইরাল হয়না” ক্যাপশনে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, কিছু শিক্ষার্থী যন্ত্রণায় ছটপট করছেন। মূল ভিডিওটি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর একটি ঘটনাকে নিয়ে। সেদিন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বহুদিনের বেড়ে উঠা ঘাষ পরিস্কার করতে গিয়ে শতাধিক স্কুল শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মিথ্যা ক্যাপশনে দুই বছর আগের ভিডিও আবারো প্রচার করায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।

ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে উক্ত ক্যাপশনে শেয়ার হওয়া কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।


২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ার হয়েছিল। এর মধ্যে Viral24 পেজ থেকে প্রকাশিত ভিডিওটির ক্যাপশন ছিল: “দড়্গ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাঠ পরিস্কার করানো হয়, কিছু সংখক শিক্ষার্থী মাঠে না গেলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উপর বেতের আঘাত করে, এতে ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পরে, ৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী সাটুরিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে।“

এরকম আরেকটি ভিডিও দেখুন এখানে।

এ বিষয়ে তৎকালীন বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, “উপজেলার দড়গ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সকাল দশটায় ছাত্র ছাত্রীর সমাবেশের শেষে বিদ্যালয়ের মাঠে থাকা নিলুজি ঘাস ছাত্র/ছাত্রীদের পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ক্রীড়া শিক্ষক। ঘাস পরিষ্কার অভিযান চলাকালে ঘণ্টাখানেক পরে ছাত্র/ছাত্রীরা প্রচণ্ড গরম এবং ঘাষের দূর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। স্থানীদের সহযোগীতায় তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা ও অভিভাবক মিলে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বিক্ষোভ করেন। অপর দিকে খবর পেয়ে থানা পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসেন।“

এ বিষয়ে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন বলছে: “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবক হাসপাতাল সূত্র জানান, উপজেলার দরগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বুধবার সকালে নিয়মিত পিটি বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে ঘাস ও আবর্জনা পরিষ্কারের নির্দেশ দেন। এতে শিক্ষর্থীরা আপত্তি জানালে পেটানোর হুমকি দিয়ে পরিষ্কার [করার] কাজে বাধ্য করা হয়েছে। এ সময় রোদের প্রচণ্ড তাপে কয়েকজন ছাত্রী পালানোর চেষ্টা করলে তাদের শাস্তি দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান। এর পর পরই পর্যায়ক্রমে দেড় শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে মাঠে ঢলে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্য শিক্ষকরা স্থানীয়দের সহায়তায় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সাটুরিয়া উপজেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করেন।“

যুগান্তরের প্রতিবেদনটি সূত্রে আরও জানা গেছে, “এ ঘটনায় স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমানকে তার কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন তারা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মতিয়ার রহমান মিঞা বলেন, এ ঘটনায় অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়।“

এ বিষয়ে জাগো নিউজের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, “সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ জানান, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে ছাত্রীরা হিটস্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সবাই আশঙ্কামুক্ত।“

এ বিষয়ে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, সম্প্রতি ভাইরাল ভিডিও’র ঘটনাটি ২ বছরের পুরনো। উক্ত ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বেতের আঘাতে কোনো স্কুল ছাত্রির মৃত্যু ঘটেনি, বরং স্কুলের খেলার মাঠ পরিষ্কার করতে গিয়ে শতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মিথ্যা ক্যাপশনে দুই বছর আগের ভিডিও নতুন করে প্রচার করায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply