হিরো আলম কি র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার?

Published on: February 9, 2023

“ ওবায়দুল কাদেরকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানানোর কারণে এইমাত্র র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হিরো আলম।”– এমন শিরোনামে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে সম্প্রতি হিরো আলমের গ্রেফতার সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বরং, তিনি যে এখনও মুক্ত এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়।  তাছাড়া, ভিডিওটিতেও হিরো আলমের গ্রেফতারের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ নেই। মূলত তিনটি আলাদা আলাদা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জোড়া লাগিয়ে  ভিডিওটি বানানো হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ওবায়দুল কাদেরকে হিরো আলম চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন কি না এ ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কী ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধমে এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি  হিরো আলম বগুড়া-৪ আসনের ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনার জন্য বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কাছে আবেদন জমা দিয়েছিলেন। তখন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে

তবে, এই কারণে হিরো আলম র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কি না — এমন তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারির পরেও বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে হিরো আলমকে নিয়ে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, হিরো আলম গ্রেফতার হননি। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে

অন্যদিকে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানা যায় যে, এটি একটি এডিট করা ভিডিও। তিনটি আলাদা আলাদা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জোড়া লাগিয়ে  এটি বানানো হয়েছে। এবং ভিডিওর কোথাও হিরো আলমকে গ্রেফতার করা নিয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

ভাইরাল ভিডিওটির শুরু থেকে ৮ সেকেন্ড পর্যন্ত যেই অংশটুকু দেখানো হয়েছে তা হচ্ছে  ২০২০ সালের ১৫ জুলাই রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের গ্রেফতার হওয়ার সময়কার। মাই টিভির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই ভিডিওর ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পর্যন্ত খেয়াল করে দেখলে এই দুই অংশের সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিটির   ৯ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকুতে যেই ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে সেটি হচ্ছে যমুনা টেলিভিশনে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত ওবায়দুল কাদেরকে হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ জানানো নিয়ে একটি প্রতিবেদন। এবং, এর পরের অংশটুকু হচ্ছে   হিরো আলম এবং জায়েদ খানকে নিয়ে মিজান নামের এক ব্যক্তির বক্তব্য। সাহসী কণ্ঠ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিওটি প্রচারিত হয়েছিল।

উল্লেখ্য, হিরো আলমকে ২০১৯ সালের ৬ মার্চ  তার স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে নারী নির্যাতন দমন আইনে করা এক মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এরপরে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই রবীন্দ্র এবং নজরুল সঙ্গীত “বিকৃত” করে গাওয়ার অপরাধে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ডেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছিল যেন তিনি আর এই গানগুলো না গায়। এছাড়া, হিরো আলমের গ্রেফতার সংক্রান্ত আর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh