Published on: July 7, 2022
সম্প্রতি বাংলাদেশে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন উচ্চপদে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের নামের একটি তালিকা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের মত একটি মুসলিমপ্রধান দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে! অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তালিকায় থাকা নামের সাথে বর্তমানে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের কোনো মিল নেই। এছাড়া সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কোনো পদে ধর্মীয় পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে চাকরি পাওয়ারও কোনো বৈধ সুযোগ নেই। |
এমন কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
উল্লেখ্য দাবিগুলো হলোঃ
“একটি মুসলিমপ্রধান দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কাদের হাতে চিন্তা করা যায়?
১. প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শ্যামল কান্তি ঘোষ।
২. পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব বজ্র গোপাল ভৌমিক।
৩. কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব অশোক কুমার বিশ্বাস।
৪. সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার রায়।
৫.সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাশ।
৬. ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার রায়। ৭. চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব ড. পীযুষ কান্তি দন্ত।
৮. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী।
৯. বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান নারায়ন চন্দ্র পাল।
১০. ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র।
১১. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব অজিত কুমার ঘোষ।
১২. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব পতি*ত পাবন দেবনাথ।
১৩. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অসীম কুমার কর্মকার।
১৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ।
১৫. শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্রী বনমালী ভৌমিক।
১৬. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাস।
১৭. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার।“
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ফেসবুক পোস্টে উল্লখিত বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নামের তালিকাগুলো অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত সবগুলো দাবিই ভুল।
১) প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালকের নাম মোঃ মুহিবুর রহমান।
২) জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিবের নাম জনাব মোসাঃ নাজমা আখতার।
৩) কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নাম ড. মোঃ ওমর ফারুক।
৪) সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালকের নাম প্রফেসর ড. সামসুন নাহার।
৫) সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) বিশেষজ্ঞ নামে এমন কোনো পদবী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৬) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শকের নাম মুহাম্মদ রবিউল আলম।
৭) চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিবের নাম প্রফেসর আবদুল আলীম।
৮) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা নামে কোনো পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৯) জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ফরহাদুল ইসলাম।
১০) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এস.এম আমিরুল ইসলাম।
১১-১৭) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ-সচিব, সহকারী সচিব, যুগ্ম প্রধান, অতিরিক্ত সচিব পদে যেসব ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এর সাথে মূল পদে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় এক নয়। মন্ত্রণালয়ের এসব পদে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরি বা পদের জন্য শুধুমাত্র ধর্মের জন্য অযোগ্য বা বৈষম্যের শিকার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রজাতন্ত্রের যেকোনো চাকরিতে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে।
সুতরাং বিষয়টি পরিষ্কার যে, ভাইরাল দাবিটি মিথ্যা। সেখানে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের সাথে মূল পদে থাকা ব্যক্তিদের কোনো মিল নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এসব ফেসবুক পোস্টগুলোকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।
আরো পড়তে পারেন-
পাঠ্যবইয়ের বিতর্কিত গল্প-কবিতার তালিকাটি ৬ বছরের পুরনো
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ভাইরাল হওয়া তালিকাটি কি সঠিক ?
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ভাইরাল হওয়া তালিকাটি কি সঠিক?
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |