ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করায় ভারতকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র?

Published on: May 14, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার কারণে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, ভারতে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক ধারাবাহিক অত্যাচার এবং নির্যাতনের ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত এবং “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” (Country of Particular Concern) হিসেবে আখ্যায়িত করতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট কে সুপারিশ করেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ এর মাধ্যমে বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সংবাদ খুঁজে পাই। উক্ত সংবাদগুলো পড়ে আমরা জানতে পেরেছি যে, ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৩ এ মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের উপর সহিংসতা ও তাদের সহায়সম্পদের ক্ষতিসাধন এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীরর সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ, ধারাবাহিক নির্যাতন ও অত্যাচার, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বিরূদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি প্রচারের কারণে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত এবং “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” হিসেবে আখ্যায়িত করতে সুপারিশ করেছে। উল্লেখ্য, উক্ত কমিশন টানা চারবার অর্থাৎ, ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতকে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার কারণে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। তাছাড়া, উক্ত কমিশনটির ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারত ছাড়াও আরও চারটি দেশ, যথা: আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, সিরিয়া, এবং ভিয়েতনামকে “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” হিসেবে আখ্যায়িত করতে সুপারিশ করা হয়েছে। পড়ুন দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, আল-জাজিরা, দি হিন্দুস্তান গেজেট, এবং বিজনেস রেকর্ডার এর সংবাদগুলো।  

 

ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম এর ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে

উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, ভারতকে ধর্মীয় স্বাধীনতার জঘন্যতম লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা অ্যাক্ট অনুযায়ী “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” হিসেবে আখ্যা দিতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটকে সুপারিশ করেছে। 

 

আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা অ্যাক্ট (আইআরএফএ) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” বা Country of Particular Concern হচ্ছে যেসকল দেশে সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতার “বিশেষ গুরুতর” লঙ্ঘন এর সাথে জড়িত থাকে।

 

অতএব, ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্র, বরং কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh