মোদির জনসভার পুরনো ছবিকে আসাম সীমান্তে জমায়েতের ছবি বলে প্রচার

Published on: October 24, 2021

‘‘আসাম- বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা’’-শিরোনামসহ গেরুয়া পোষাক পরা বেশ বড়সড় গণজমায়েত-এর একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে চলমান সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের “হত্যাপ্রচেষ্টার” জেরে বরাক থেকে শুরু করে গৌহাটি পর্যন্ত আসামের সর্বস্তরের হিন্দুরা জেগে উঠেছে । ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি সাম্প্রতিক কোনো ছবি নয়। এটি দুই বছর আগের ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে অনুষ্ঠিত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি জনসভার ছবি।

গুজবের উৎস

২৩শে অক্টোবর শনিবার বিকাল ৩ টায় ‘কৃষ্ণ সারথী ফোরাম’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে এই ছবিটা প্রথমবারের মত আপলোড করতে দেখা যায় । পরবর্তী কয়েক ঘটনায় বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং প্রোফাইলের মাধ্যমে এটা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

এই পোস্টে বলা হয়েছে, আসাম বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা! 💛বাংলাদেশে চলমান হিন্দু গণত্যার প্রচেষ্টার জেরে সমগ্র বারাক থেকে শুরু করে গৌহাটি অবদি আসামের সর্বস্তরের হিন্দুরা জেগে ওঠেছে! ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ও সীমান্তবর্তী মুসলিম বহুল এলাকাগুলোতে রেড এলার্ট!


ছবিটির মূল উৎস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল কর্নাটক রাজ্যের Mangalore এ এক জনসভায় ভাষণ দেন। আলোচিত ছবিটি সেই সমাবেশেরই ছবি।

২০১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল রাত ৮ টা ৫০ মিনিটে kiran kumar s নামক একাউন্ট থেকে এই ছবিটি আপলোড করা হয়েছিল । এই ছবির ক্যাপশন ছিল Chowkidars everywhere! From toddlers to elders. Dakshina Kannada safftonized to amazing extent!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ কিছুদিনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিজের টুইটার একাউন্ট এর নাম ‘ Chowkidar Narendra Modi’ রেখেছিলেন। বিভিন্ন ভাষণে এবং টুইটে তিনি বিভিন্ন সময়েই নিজেকে “জনগণের চৌকিদার” অর্থাৎ পাহারাদার হিসেবে উল্লেখ করতেন।

কাজেই, এই টুইট থেকে সুস্পষ্ট যে, এটা দুই বছর আগে অনুষ্ঠিত নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক সমাবেশের ছবি।

Mangalore Hindus নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ১৪ই এপ্রিল ঠিক এই ছবিটিই আপলোড করা হয়েছিল , তবে ছবিতে উক্ত পেজের নাম যোগ করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে, Omkar নামক জনৈক টুইটার ব্যবহারকারীর একাউন্টে ২০২০ সালেও এই ছবিটা দেখা যায়। সেখানেও দাবি করা হয়, এটা ২০১৯ সালের এপ্রিল এর Mangalore Rally এর ছবি ।

এই র‍্যালি নিয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও, এই ছবিটা কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র ফেসবুক এবং টুইটারেই বিপুল জনসমাগমের এই ছবিটা সীমাবদ্ধ ছিল।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কি রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে ?

ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে , ‘’ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ও সীমান্তবর্তী মুসলিমবহুল এলাকাগুলোতে রেড এলার্ট!’’

তবে এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশী গণমাধ্যম, ভারতীয় গণমাধ্যম কিংবা বিবিসি,ভয়েস অফ আমেরিকা, আল জাজিরা বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তবে, গত ১৩ই অক্টোবর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসামের কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি শহরেও এমন সমাবেশ হয়েছিল গত ১৮ই অক্টোবর। করিমগঞ্জে  বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদীর তীরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ১৮ই অক্টোবর।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর খবর অনুযায়ী, ৩ হাজার বিক্ষুব্ধ নাগরিক কুশিয়ারা নদীর তীরে এই সমাবেশে অংশ নেন । এদের মধ্যে কয়েকজন হঠাত কুশিয়ারা নদীতে ঝাপিয়ে পড়েন, এবং সাওরে বাংলাদেশে গিয়ে নির্যাতিত হিন্দুদের সাহায্য করার কথা বলেন। যদিও সীমান্তরক্ষী বিএসএফ তাদেরকে  নিবৃত্ত করে।

বিজেপি নেতা রঞ্জন দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ ব্যাপারে বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না এবং এটা বাস্তবসম্মতও নয়। কিন্তু কিছু কিছু আবেগপ্রবণ লোক ক্ষণিকের উত্তেজনার বশে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সীমান্ত অতিক্রমের কথা ভেবেছিলেন।

এছাড়া, গত দুয়েকদিনে বাংলাদেশ-আসাম সীমান্ত এলাকায় কোনো সমাবেশের খবর ফ্যাক্টওয়াচ খুঁজে পায় নি।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

ভাইরাল হওয়া পোস্টে জনসমাগমের ছবিটি ২০১৯ সালের। আসামের বিভিন্ন শহরে এ বিষয়ে কিছু প্রতিবাদ সমাবেশ হয়ে থাকলেও সীমান্ত এলাকায় এরকম কিছু ঘটার খবর ফ্যাক্টওয়াচ খুঁজে পায় নি। আলোচ্য পোস্টে একটি পুরনো গণজমায়েতের ছবি ব্যবহার করে আসাম-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনার মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে। ফলে এই পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” আখ্যা দিচ্ছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply