ইন্দোনেশিয়ার স্কুলগুলোতে মায়ের পা ধুয়ে দেবার কি কোনো বিশেষ দিবস রয়েছে?

Published on: November 16, 2021

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ছবি প্রচুর শেয়ার হয়েছে যার ক্যাপশনে বলা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিটি স্কুলের একটি বিশেষ দিন রয়েছে যে দিন সব শিশুরা তাদের মায়ের পা পরিষ্কার করে দেয় যাতে তারা তাদের বাবা-মায়ের সেবা করতে ভবিষ্যতে ভুলে না যায়। ফলে ইন্দোনেশিয়ায় একটিও বৃদ্ধাশ্রম নেই। বাস্তবে ইন্দোনেশিয়ার স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের সাথে বাবা-মায়ের পা ধুয়ে দেবার নিয়ম বা ঐতিহ্য নেই। ভাইরাল ছবিটি ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় মা দিবসের, যেদিন স্কাউট দলের সদস্যরা তাদের মায়ের পা ধোয়ার আয়োজন করেছিল। “ইন্দোনেশিয়ায় একটিও বৃদ্ধাশ্রম নেই।“ এই তথ্যটিও সঠিক নয়।

সম্প্রতি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ এবং ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে শেয়ার হওয়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।


ভাইরাল হওয়া ছবিটির ক্যাপশন ধরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, হুবহু ক্যাপশনে ছবিটি ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও ভাইরাল হয়েছিল। ক্যাপশনটির শুরুর অংশটি হুবহু নীচে তুলে ধরা হল:

ইন্দোনেশিয়ার প্রতিটি স্কুলে প্রতি বছর একটি অন্য রকম দিবস পালন করা হয়।
ঐদিন সকল “মা” কে স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
পরে সব ছাত্র-ছাত্রীকে স্কুল মাঠে নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিস্কার করে মুছে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন ভবিষ্যতে তারা বাবা-মায়ের যত্ন নিতে ভুল না করে।
ফলস্বরুপ ইন্দোনেশিয়ায় আজ পর্যন্ত কোন বৃদ্ধাশ্রম গড়ে ওঠেনি।




গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, navbharattimes এ বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেছে ২০১৭ সালে। সেই লেখায় tribunnews.com নামে ইন্দোনেশিয়ান একটি অনলাইন পত্রিকার একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, যেখানে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ছবিটি পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়ান খবরটি বাংলায় অনুবাদ করে জানা গেছে, ভাইরাল ছবিটি ২০১৬ সালে জাতীয় মা দিবসের। সেদিন স্কাউট দলের সদস্যরা তাদের মায়ের পা ধোয়ার আয়োজন করেছিল। navbharattimes এবং tribunnews.com এর প্রতিবেদন দুটি দেখুন এখানে এবং এখানে।


মূলত এটি কোনো স্কুল দিবস ছিল না এবং ইন্দোনেশিয়ার সমস্ত স্কুলে এমন কোনও বিশেষ দিন নেই যখন শিশুদের তাদের পিতামাতাদের পা পরিষ্কার করতে বলা হয়।

ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে আরও বলা হয়েছে যে, স্কুলগুলোর এই ঐতিহ্যের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় একটিও বৃদ্ধাশ্রম নেই। গ্লোবাল বিজনেস গাইডের একটি নিবন্ধ অনুসারে, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় বৃদ্ধের সংখ্যা বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বয়স্ক নাগরিক হবে।

গুগলে অনুসন্ধান করে Managing Elderly Care নামে একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে যারা বৃদ্ধশ্রমের মতন সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়াও, ২০১৭ সালে প্রকাশিত thejakartapost এর একটি প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে জাকার্তা সোশ্যাল সার্ভিস নার্সিং হোমে ১,১১১ জন বয়স্ক মানুষ বসবাস করেন।

উক্ত তথ্যপ্রমাণ অনুযায়ী বিষয়টি স্পষ্ট যে, ইন্দোনেশিয়ার স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের সাথে বাবা-মায়ের পা ধুয়ে দেবার নিয়ম বা ঐতিহ্য নয়। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ছবিটি বাস্তবে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় মা দিবসের, যেদিন স্কাউট দলের সদস্যরা তাদের মায়ের পা ধোয়ার আয়োজন করেছিল। “ইন্দোনেশিয়ায় একটিও বৃদ্ধাশ্রম নেই।“ এই তথ্যটিও সঠিক নয়। ফলে সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply