কেরালার ইন্টারফেইথ বিয়ের পুরোনো ছবি নতুন নাম দিয়ে ভাইরাল

Published on: January 7, 2023

সম্প্রতি ‘হিন্দু মেয়ে মুসলিম হয়ে বিয়ে করলো মুসলিম ছেলেকে’ শিরোনামে একটি ছবিসহ খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল এই ছবির সাথে সেখানে দেয়া তথ্যের কোনো মিল নেই। মূল ঘটনাটি ভারতের কেরালার এবং ছবিতে থাকা মেয়েটি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। অন্যদিকে ছেলেটি জন্মগতভাবে হিন্দু হলেও কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয়। তারা ২০১৪ সালে বিয়ে করে এবং তা করতে গিয়ে তাদের কাউকেই নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বদলাতে হয়নি। ছবির সাথে যে লেখাটি রয়েছে তাতে ছেলেটির নাম আকাশ এবং মেয়েটির নাম সুপ্তি দাবি করা হলেও মূলত তাদের নাম যথাক্রমে গৌতম এবং আনশিদা। পুরনো এই ছবির পাত্রপাত্রীর নাম বদলিয়ে ভূয়া দাবি করার কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এসব পোস্টের শিরোনামকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

 

এমন কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

“Todatime24online.com” নামে একটি ওয়েবপোর্টাল এর মাধ্যমে ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ এ খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বলা হচ্ছে, ফেসবুকের মাধ্যমে আকাশ নামে একজন মুসলিম ছেলের সাথে সুপ্তি নামের একজন হিন্দু মেয়ের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সুপ্তি তার ধর্ম পরিবর্তন করে আকাশকে বিয়ে করে এবং তার নাম হয় শাদিয়া আক্তার।

সেই খবরটি পড়ুন এখানে(সতর্কবার্তা- এই লিংকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অনুপযুক্ত ছবি থাকতে পারে)

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

 

ভাইরাল এই ছবির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, যুগের কন্ঠ নামে একটি ওয়েবপোর্টালে এই খবরটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও একই ছবির মাধ্যমে এই একই দাবি দেখা যাচ্ছে। মূলত ২০১৯ সালে প্রকাশিত এই খবরটিই হুবুহু ভিন্ন একটি ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে পুনরায় এই মাসে প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে পাওয়া বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে, ১৯ মে, ২০১৭ সালের একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে ভাইরাল এই লেখাটি হুবহু খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে সেটি সেখানে পাওয়া যায়নি। এছাড়া উক্ত লেখার কোনো সত্যতাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুলধারার কোনো গণমাধ্যমেও এই লেখাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া লেখার ধরন দেখে ধারণা করা যায় এটি একটি গল্প।

ভাইরাল ছবির সাহায্যে পুনরায় অনুসন্ধান করা হলে, ভারতের একটি ওয়েবপোর্টালে ছবিটি পাওয়া যায়।

সেখানে ছেলেটির নাম গৌতম এবং মেয়েটির নাম আনশিদা দাবি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে আবার কি-ওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধান করা হলে, ভারতের এনডিটিভিসহ বিভিন্ন গণমধ্যমে বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায়। “Death Threats for This Hindu-Muslim Couple in Kerala”- শিরোনামে ১৭ নভেম্বর, ২০১৪ এ এনডিটিভি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কেরেলায় ২০১৪ সালে হিন্দু বংশদ্ভূত গৌতমের সাথে আনশিদা নামে একজন মুসলিম মেয়ের বিয়ে হয়। সেখানে আরও বলা হয়, আনশিদা একজন ধর্ম অনুরাগী মুসলিম হলেও গৌতম কোনো ধর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন না। দুইজনের বিশ্বাস ভিন্ন হলেও তারা বিয়ে করেন এবং যার যার বিশ্বাস মেনেই সংসার করছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে গৌতম বলেন, “ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কোনো ধর্ম অনুসরণ না করাটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এমনকি সে (আনশিদা) এখনো একজন ধর্মানুরাগী মুসলমান। আমি তাকে কোরআন শরীফ কিনে দিয়েছি”।

অন্যদিকে এই বিয়ের কারণে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়, যার ফলে তাদেরকে অনেকটা পালিয়ে থাকতে হয়েছিলো। এ বিষয়ে গৌতমের অভিভাবক এ সময় তাদের পাশে ছিলেন বলে জানা যায়। তার বাবা সুধাকরণ জানান, তাদের সম্পর্কের বিষয়টি প্রায় নয় মাস গোপন রাখতে হয়েছিলো।

দ্য নিউজ মিনিট’ নামে একটি নিউজপোর্টাল থেকে জানা যায়, ৮ অক্টোবর, ২০১৪ এ গৌতম এবং আনশিদা ভারতের “স্পেশাল ম্যারিজ অ্যাক্ট” এর অধীনে বিয়ে করেন। এই আইনের আওতায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের বিধান রয়েছে।

 

অর্থ্যাৎ, পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, ভাইরাল এই ছবিটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনা নয় এবং পাত্রপাত্রীদের নাম আকাশ এবং সুপ্তিও নয়। ভারতের কেরালার গৌতম এবং আনশিদার ছবি এটি। ভিন্ন ধর্মের পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তারা ধর্মপরিচয় পরিবর্তন না করেই বিয়ে করেছিলেন এবং যার যার বিশ্বাস নিয়েই সংসার করছেন। মানে ধর্ম পরিবর্তনের দাবিটিও ভুল।

সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এই খবরটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh