হিজাব না পরায় নাক কেটে দেয়ার ভূয়া দাবি

Published on: March 9, 2023

ইরানে হিজাব না পরার অপরাধে প্রাইমারী স্কুলের এক শিক্ষার্থীর নাক কেটে দেয়া হয়েছে- এমন দাবিসহ একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির নাক কেটে দেয়া হয়নি কিংবা এমন রক্তাক্ত হওয়ার সাথে হিজাব পরা বা না-পরার কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত এটি দুইজন শিক্ষার্থীর মধ্যে হওয়া ঝগড়ার একটি ঘটনা। সেখানে এক শিক্ষার্থীর মা এসে উক্ত মেয়েটিকে ধাক্কা দিলে এমন অবস্থার তৈরি হয়। আঘাতপ্রাপ্ত মেয়েটির অভিভাবক এবং সেখানকার পুলিশের দেয়া তথ্যের বরাতে কয়েকটি গণমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

 

এমন কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

এসব ফেসবুক পোস্টে বলা হচ্ছে, “মেয়েটার নাম “সারাহ মাখতুম”

ইরানের বির্জন্ড জেলার একটা মফস্বল গ্রামে বাস। ওখানের একটা প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস ফোরে পড়া ছাত্রী।

হিজাব না পরেই স্কুলে চলে গেছিল ছোট মেয়েটি। সে জানতো না অ্যাতুল্ল্যার হিজাব রক্ষক বাহিনী এসে স্কুলে হামলা দিয়ে মেয়েটাকে টেনে হিচড়ে বের করে স্কুলের সকল ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক কে মাঠে একত্র করে মেয়েটার নাক কেটে দিবে। এবং 30 দররা চাবুক মারার বিচারও হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক রা হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে মেয়েটা কে দর্রা মারা থেকে কোন মতে বাঁচিয়েছে।

এখন কথা হচ্ছে এত পিচ্ছি একটা মেয়েকে দেখে কার ইঞ্জিন লাব্বাইক বলে উঠে দাড়ায় যে মেয়েটা যৌন কাজে উৎসাহিত করেছে তাই তাকে শাস্তি হিসাবে নাক কেটে দিতে হবে।

আমি বললাম লিখে রাখেন আপনারা, এই চরমপন্থী আতুল্যা সরকারের উৎখাত হবে মেয়েদের হাতেই

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

 

ভাইরাল ছবির সাহায্যে অনুসন্ধান করলে, ভারতের “Firstpost” নামে একটি গণমাধ্যমে এই ছবিসহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে দাবি করা হয়, ইরানে হিজাব না পরার কারণে মেয়েটির মুখে আঘাত করা হয়েছে। সূত্র হিসেবে একটি টুইটার পোস্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত টুইটার পোস্টে ঘটনার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ছবি বা ভিডিও থেকে তার এই আঘাতের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো ধারণা পাওয়া যায় নি।

পুনরায় অনুসন্ধানে আরোও কিছু সংবাদ মাধ্যমের কয়েকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

এর মধ্যে “Saheb Khabar” নামে একটি ওয়েবপোর্টালে “Fars News” এর বরাতে উপরোক্ত দাবিটিকে ভূয়া দাবি করা হয়। সেখানে বলা হচ্ছে, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে মারামারির কারণে মেয়েটি আঘাত পেয়ছে।

পরবর্তীতে “Fars News” প্রকাশিত প্রতিবেদনটিও খুঁজে বের করা হয়। ফারসি ভাষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনুবাদ করলে জানা যায়, ইরানের ইস্ফাহানে এই ঘটনাটি ঘটেছে। সেখানের পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং আঘাতপ্রাপ্ত মেয়েটির মায়ের দেয়া বক্তব্য থেকে জানা যায়, উক্ত মেয়েটি এবং অন্য এক শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিলো, এমন অবস্থায় অন্য শিক্ষার্থীর মা তার নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে উক্ত মেয়েটিকে ধাক্কা দেয়। এর ফলে সেই মেয়েটি মাটিতে পড়ে গিয়ে আঘাত পায়।

পুলিশের সেই কর্মকর্তা আরও জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সেই নারীকে আটক করা হয় এবং পরে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। বিষয়টি এখন বিচারাধীন আছে এবং মেয়েটির বাবা এর সুষ্ঠ বিচার চেয়েছেন বলে জানা যায়।

একই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উক্ত ঘটনার সাথে হিজাব পরা বা না-পরার কোনো সম্পর্ক নেই।

একই বিষয় নিয়ে ‘দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ান’ প্রকাশিত আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে

 

এখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঘটনার ভিডিওকে গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেহেতু ইরানে হিজাব নিয়ে একটি আলোচনা সমালোচনা চলছে এর মধ্যে এমন একটি ঘটনার সাথে হিজাব যুক্ত করে দেয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরণের বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচের সার্বিক বিবেচনায় এমন দাবিটিকে “মিথ্যা” চিহ্নিত করা হচ্ছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh