“জাহাঙ্গীর কবির নানকের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা” – পুরনো খবর ভাইরাল

Published on: December 21, 2021

সম্প্রতি জাহাঙ্গীর কবির নানকের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত একটি খবর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই খবরটি পুরনো। বাংলা ইনসাইডার নামক একটি ওয়েবপোর্টালে ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মূলত এই প্রতিবেদনের কিছু তারিখ বদলে নতুনভাবে ভাইরাল করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছ। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে



ভাইরাল এই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়,”আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর কবির নানককে পাঁচ বছরের জন্য মার্কিন ভিসা দেওয়া হয়েছিল। এই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে।

মার্কিন আইন অনুযায়ী, যেসব কারণে মার্কিন ভিসা বাতিল হতে পারে তার একটি হলো আর্টিকেল ৯। যেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিকের উপর আক্রমণ, আঘাতের চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র হলে কারও ভিসা বাতিল হতে পারে। এই আর্টিকেল ৯ অনুযায়ী নানকের ভিসা বাতিল হয়েছে বলে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৪ঠা আগস্ট তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট মোহাম্মদপুরে সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা হয়। মার্কিন দূতাবাসের তদন্তে ওই হামলায় জাহাঙ্গীর কবির নানকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি তারা বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করেছিল। একই ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাহাঙ্গীর কবির নানকের ভিসা বাতিল করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল পোস্টে দেওয়া প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে গুগল সার্চ করা হলে,  ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত বাংলা ইনসাইডার নামক ওয়েবপোর্টালের একটি প্রতিবেদন সামনে আসে।

নানকের মার্কিন ভিসা বাতিল” শিরোনামের ওই প্রতিবেদনের সাথে বর্তমানে ভাইরাল পোস্টের ভাষাগত অনেক মিল পাওয়া যায়। এমনকি উভয়ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ছবিটিও একই। তবে পুরনো এই প্রতিবেদনের সাথে সাম্প্রতিক এই পোস্টের অমিল দেখা যায় তারিখে। ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নানককে পাঁচ বছরের জন্য মার্কিন ভিসা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পুরনো প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সালটি ২০১৭ নয় বরং ২০১৫। আবার ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজনের সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে গিয়েছিলেন কিন্তু পুরনো প্রতিবেদনে এই তারিখটি ২০১৮ সালের ১৫ই আগস্ট উল্লেখ করা হচ্ছে।

বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদন

বর্তমানে ভাইরাল পোস্ট

 

অর্থাৎ, এইটুকু বুঝাই যাচ্ছে যে সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল পোস্ট এবং বাংলা ইনসাইডারের পুরনো ওই প্রতিবেদন দুইটি প্রায় একই। এই একই খবর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও ভাইরাল হতে দেখা যায়।

তবে বাংলা ইনসাইডারের ওই প্রতিবেদন কিংবা সম্প্রতি ভাইরাল এই পোস্টের দাবির পেছনে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা বাংলাদেশের প্রথম সারির কোনো সংবাদমাধ্যম থেকেও নানকের ভিসা বাতিলের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গত ০৫ আগস্ট ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। সেখানে নানকের ভিসা নিষিদ্ধ নিয়ে কোনো কিছুই উল্লেখ নেই। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

এছাড়াও প্রথম আলো প্রকাশিত, ০৮ আগস্ট ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় নৈশভোজে যান তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। সেখান থেকে ফেরার পথে রাষ্ট্রদূতের গাড়িটি হামলার মুখে পড়ে। অর্থাৎ, বাংলা ইনসাইডারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়ির হামলার যে তারিখটি উল্লেখ করা হচ্ছে সেটিও ভুল।

২০১৮ সালের ৪ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

 

সুতরাং, জাহাঙ্গীর কবির নানকের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দূতাবাসের ওয়েবসাইট কিংবা প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম থেকে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি ভাইরাল দাবিটি প্রায় দুই থেকে তিন বছর পুরনো এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যাচ্ছে। বাংলা ইনসাইডার নামক একটি ওয়েবপোর্টালে এমন একটি দাবি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও দেখা গিয়েছিলো। এরই পুনরাবৃত্তি বর্তমান এই পোস্টগুলো। তাই পুরনো এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply