“মাওলানা কাজী ইব্রাহিমের উপর ভারতের হামলা” – ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব

Published on: October 2, 2021

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে “মাওলানা কাজী ইব্রাহিমের উপর ভারতের হামলা ইলিয়াস হোসাইন” ক্যাপশনে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচুর শেয়ার হয়েছে। ১৫ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে মূলত মুফতি কাজী ইব্রাহীম এর ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিওর একাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত দিবাগত রাত ২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে মোহাম্মদপুরের নিজ বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মূল ঘটনার সাথে ভিডিওর ক্যাপশন এবং সার্বিক উপস্থাপনা অপ্রাসঙ্গিক হওয়ায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে “মাওলানা কাজী ইব্রাহিমের উপর ভারতের হামলা ইলিয়াস হোসাইন” ক্যাপশনে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ার হওয়া কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

Ji TV One নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত ১৫ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শুরুতেই দেখা যায় একুশে টেলিভিশনের সাবেক সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের একটি বক্তব্য “আমার সমস্যা একটা জায়গায়, আর সেই জায়গাটা হচ্ছে ভারত।“ এর পরেই আরেকজন উপস্থাপক বলতে শুরু করেন, “আমাদের বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিক চাকরি করে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ দু-বেলা দু-মুঠো খাবারের জন্য চাকরি পায় না। আমাদের বাংলাদেশে উপরের লেভেলে ভারতের নাগরিক কিভাবে চাকরি করে।“

উপস্থাপক এটুকু বলার পরেই শুরু হয়ে যায় মুফতি কাজী ইব্রাহীম এর একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও যেটি সেদিনই তার ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। লাইভ ভিডিওটির শুরুতেই মুফতি কাজী ইব্রাহীম বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন আমি মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলছি। বিগত দুই সপ্তাহে এদেশের সরকারের এবং জনগণের কল্যাণে স্বাধীনতার জন্য অকুতোভয় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুটো খুতবা দিয়েছিলাম। সাথে সাথে হিন্দুস্থানী রাজাকার, র-এর গুন্ডারা আমার বাসা লালমাটিয়ায় হানা দিয়েছে।“

ভিডিওটির ১৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে উপস্থাপক আবার বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এভাবে ভারতীয় নাগরিক ঢুকে গেছে। তাই নিজে সতর্ক থাকবেন, অন্যকেও সতর্ক রাখবেন। বাংলাদেশের পুলিশ, প্রশাসন সর্বত্র চাকরি করে ভারতীয় নাগরিক।“

পরবর্তীতে একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে ইব্রাহীমকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি জানান, “মুফতি ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ ছিল। তিনি ফেসবুক, ইউটিউব ও ওয়াজে উল্টাপাল্টা কথা বলেন। তার এসব কথার জন্য মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যায়। ওইসব অভিযোগ যাচাই করতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি।“

পরে দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই দুটি মামলার একটি করেছেন জেড এম রানা নামের এক ব্যক্তি, মুফতি ইব্রাহীমের বিরূদ্ধে টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ জানিয়ে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে ‘উগ্র’ বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, “মুফতি কাজী ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। জেড এম রানা নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৪২০, ৪০৬ ও ৩৮৫ ধারায় মামলাটি করেন।“

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, উগ্রবাদী ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

উপরোক্ত তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি স্পষ্ট যে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মুফতি কাজী ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল বিষয়বস্তু উল্লেখ না করে, “মাওলানা কাজী ইব্রাহিমের উপর ভারতের হামলা” এই শিরোনামের পক্ষে উক্ত ফেসবুক লাইভে কোনোপ্রকার সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করা হয় নি। মূলধারার কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এরকম কোনো তথ্য উঠে আসে নি।

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের কোনো আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপ, কিংবা ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজ করা নিয়ে নানারকম ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ কখনোই পাওয়া যায় নি। মুফতি কাজী ইব্রাহীমের ক্ষেত্রেও “ভারতের হামলা” অভিযোগটির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। বরং বিভিন্ন সময়ে মুফতি ইব্রাহীম সামাজিক মাধ্যমে ভূয়া তথ্য ছড়িয়েছেন এই মর্মে যথেষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। মুফতি ইব্রাহীম এর ভূয়া তথ্য নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের দুটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে এবং এখানে।


মুফতি ইব্রাহীমের বিরূদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়বস্তু এবং দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে তার গ্রেফতার-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভাইরাল ভিডিওগুলোর এই দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply