খালেদা জিয়া বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাননি

Published on: March 11, 2023

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুমতি পেলেন বেগম খালেদা জিয়া- এমন একটি খবর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে । তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া এমন ধরনের কোনো অনুমতি এখনো পাননি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার জামিনের শর্ত শিথিল করে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে, তবে এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি । আইনমন্ত্রী নিজেই এক বক্তব্যে এটিকে গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এরই মধ্যে ফেসবুকে খালেদা জিয়া বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন — এই খবরটি ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা আখ্যা দিচ্ছে।

গুজবের উৎস

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে  ।


ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

গত ৭ই মার্চ প্রথম আলোতে শর্ত শিথিল করে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয় । এই খবরে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন পরিবারের সদস্যরা। এবারের আবেদনেও তাঁর মুক্তির শর্ত শিথিল করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গতকাল সোমবার (৬ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই আবেদন করেছেন। খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

যদিও খালেদা জিয়ার পরিবার এবারও শর্ত শিথিল করে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আবেদন করেছে সরকারের কাছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, শর্ত শিথিল করে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এখন অল্প সময়ের মধ্যে আবেদনের ব্যাপারে আইনগত মতামত দেওয়া হবে।

পরবর্তীতে এই খবরটিই অন্যান্য গণমাধ্যমে চটকদার শিরোনামে  ছড়িয়ে পড়ে ।  যেমন অনলাইন পোর্টাল ডেইলি ক্যাম্পাস এ এই খবরটির শিরোনাম ছিল- বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন খালেদা জিয়া?

আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডট কম এ এই খবরটির শিরোনাম ছিল –  বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া!

এসব শিরোনামে প্রশ্নবোধক বা বিস্ময়সূচক চিহ্ন থাকলেও পাঠক এটিকে নিশ্চিত খবর হিসেবে ধরে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন।

৯ই মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত দিনভর গুঞ্জন বিদেশ যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া? শীর্ষক খবরে জানানো হয়, —- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে বেশ ক’টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ার অনলাইন ভার্সন, বেসরকারি টিভির বাংলাওয়েবসাইট এবং নিউজ পোর্টাল একটি সংবাদ পরিবেশন করে। তাতে বলা হয়, গত ৬ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তারা শর্তসাপেক্ষ কারামুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনের ওপর মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যাত্রায় আইনগত কোনো বাধা নেইÑ মর্মে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকগণ—–বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মতামত পাঠানোর বিষয়ে জানতে চান। জবাবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেটি সত্য নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং তার শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর একটি আবেদন এসেছে। আমি জানতে পেরেছি যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার (বেগম খালেদা জিয়া) ভাই শর্তযুক্ত মুক্তির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সেটি মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে আমার কাছে এখনও আসেনি। ফাইলটি দেখলে আমি জানাব।

–বেলা সোয়া ২টায় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের বিষয়ে একটি প্রেসনোট পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিমের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টিকে ‘গুজব’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির আবেদনের বিষয়ে এখনও আইন মন্ত্রণালয় কোনো মতামত দেয়নি। এ নিয়ে গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হলো।

মূলধারার প্রায় সকল গণমাধ্যমেই আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক যুগান্তর এর খবরের শিরোনাম ছিল- খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার তথ্য সর্বৈব মিথ্যা: আইনমন্ত্রী


দৈনিক সমকাল এর খবর এর শিরোনাম ছিলআইনমন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার খবর মিথ্যা।



উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাবাসের দণ্ডপ্রাপ্ত হন । পরবর্তীতে এই কারাদন্ডের মেয়াদ দাঁড়ায় ১৭ বছর । তখন থেকে প্রায় দুই বছর কারাগারে ছিলেন। করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, এর প্রথমটি হচ্ছে খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয়টি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এরপর ছয়বার তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ২৪ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।

সার্বিক বিবেচনায় , ফেসবুকের যে সকল পোস্টে খালেদা জিয়া বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে ।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh