“কিশোরগঞ্জে অ্যাসাইনমেন্টের কাগজ কিনতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর ২ মাসের জেল”- তথ্যটি বিভ্রান্তিকর

Published on: July 25, 2021

গত ২৪ জুলাই ২০২১ তারিখে, “ব্রেকিং নিউজ, কিশোরগঞ্জ সদরে আস্যাইনমেন্টের কাগজ কিনতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর ২ মাসের জেল”- শিরোনামে একটি তথ্য ফেসবুক স্ট্যাটাস আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্যসূত্র পোস্টগুলোতে উল্লেখ ছিল না। কিশোরগঞ্জের স্থানীয় এবং মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমেও এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় নি। যদিও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফ্যাক্টওয়াচকে নিশ্চিত করেন যে, শিক্ষার্থীকে জেলে দেয়ার মত কোনো ঘটনা কিশোরগঞ্জে ঘটেনি। কিন্তু চলমান লকডাউন কার্যকর করতে চার ধরনের আইন ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সংক্রামক ব্যাধি আইন, মোটর যান আইন, ডিএমপি অ্যাক্ট এবং মোবাইল কোর্ট দ্বারা অনেকেই লকডাউন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এমতাবস্থায়, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে উক্ত ফেসবুক পোস্টের দাবিটি সূত্রহীন হলেও সম্ভাবনার বিচারে তাকে “বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিচ্ছে ফ্যাক্টওয়াচ। (রেটিং সংশোধনী: আগে “মিথ্যা” রেটিং দেয়া হয়েছিল।) 

২৪ জুলাই ২০২১ তারিখে “Abid” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে “ব্রেকিং নিউজ, কিশোরগঞ্জ সদরে আস্যাইনমেন্টের কাগজ কিনতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর ২ মাসের জেল”- শিরোনামে একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে এই তথ্যটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এছাড়াও “SSC Batch 2021”, “SSC &HSC ব্যাচ ক্ষতিপূরণ চাই”- নামক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং বিভিন্ন ব্যাক্তিগত আ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে


 

খবরে দাবি করা হয় যে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় করোনাকালীন বিধিনিষেধের মধ্যে জনৈক শিক্ষার্থী কাগজ কিনতে বের হলে তাকে দুই মাসের জেল দেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো ধরনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধান

খবরটি অনুসন্ধান করলে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। প্রথমত, এই তথ্যের কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে মহল থেকে খবরটি প্রকাশ করা হয় সেখানে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র কিংবা বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। শিক্ষার্থীর পরিচয় কিংবা কোন কর্মকর্তার অধীনে জেলে নেওয়া হলো এমন কোনো নির্দিষ্ট তথ্য সেখানে দেখতে পাওয়া যায় না। এমনকি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্টগুলোর মন্তব্যে অনেক ব্যবহারকারী তথ্যসূত্র জানতে চাইলে তাদেরও সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেনি এই পেজ এবং গ্রুপগুলো।

বাংলাদেশের বিভিন্ন মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দৈনিক কালের কন্ঠের কিশোরগঞ্জ জেলার প্রতিনিধি শফিক আদনান জানান যে কিশোরগঞ্জে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে কোনো তথ্য তার কাছে আসেনি। দৈনিক প্রথম আলো-র ভৈরব ব্যুরো অফিসের সাংবাদিক সুমন মোল্লার মাধ্যমেও এ খবরের সত্যতা মূলধারার কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় সাংবাদিকের সাথে যাচাই করা হয়। কেউই এমন কোনো ঘটনার কথা শোনেন নি।

অন্যদিকে, এমন একটি খবরের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদে। জেলা প্রশাসক এবং  জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফ্যাক্টওয়াচকে এই বিষয়ে নিশ্চিত করেন যে এমন কোনো ঘটনা কিশোরগঞ্জ জেলায় ঘটেনি। তিনি বলেন,” লকডাউনে কোনো শিক্ষার্থীকে ২ মাসের জেল দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা এখানে ঘটেনি।” এছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার এবং ট্রেজারী শাখার সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান যে তিনি এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে শুনতে পাননি।

এমন একটি সংবাদ ফেসবুকে ভাইরাল হলে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। নিশ্চিত কোনো তথ্যসূত্র না থাকায় মানুষের মধ্যে এক প্রকারের বিভ্রান্তি দেখতে পাওয়া যায়।

মানুষের প্রতিক্রিয়ার কিছু নমুনা


সংশোধনী:
শুরুতে “ব্রেকিং নিউজ, কিশোরগঞ্জ সদরে আস্যাইনমেন্টের কাগজ কিনতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর ২ মাসের জেল”- শিরোনামে ফেসবুক পোস্টগুলো মিথ্যা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফ্যাক্টওয়াচ। যেহেতু (১) ওসর ফেসবুক স্ট্যাটাসে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয় নি, এবং (২) কিশোরগঞ্জের নেতৃস্থানীয় সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এমন কোনো ঘটনার অস্তিত্ব অবগত নন, ফলে এটির গুজব হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা খেয়াল করেছি, চলমান লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে রয়েছে পুলিশ ও র‍্যাবের সাথে ৫০টিরও বেশি মোবাইল কোর্ট এবং অনেকেই লকডাউন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপট থেকে কেবলমাত্র দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই পোস্টের সত্যাসত্য যাচাই করা দূরূহ বলে ফ্যাক্টওয়াচ মনে করে। ব্যক্তির নজরে অনেক কিছুই এড়িয়ে যেতে পারে। তাই উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে ফ্যাক্টওয়াচ পূর্বের সিদ্ধান্ত সংশোধন করে এই পোস্টের  রেটিং “মিথ্যা”  থেকে “বিভ্রান্তিকর” পরিবর্তন করেছে। 

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply