সৌদি আরবে লাউডস্পিকারে আজান দেয়া নিষেধ?

Published on: March 22, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে এবং পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে যে সৌদি আরব পবিত্র রমজান মাসে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং, জানা গেছে গত ১৯ই জানুয়ারি ২০২৩ এ সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ আল শেখ নির্দেশ দিয়েছেন যে দেশটির সকল মসজিদে আজান দেয়ার জন্য চারটির বেশি লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া, ২০২১ সালে ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে আজানের সময়ে লাউডস্পিকারের ভলিউম কমিয়ে এক তৃতীয়াংশে সীমিত রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেছিল। কিন্তু লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ করার কোনো নির্দেশনা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া যায় নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টটির দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সৌদি আরবে রমজান মাসে লাউডস্পিকারে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে আমরা বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ করি এবং যথাক্রমে গত ১৯ই এবং ২০ই জানুয়ারি, ২০২৩ এ প্রকাশিত দি গালফ নিউজদি সিয়াসত ডেইলি এর দুটো প্রতিবেদন খুঁজে পাই। উক্ত প্রতিবেদনগুলো পড়ে আমরা জানতে পেরেছি যে, সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ আল শেখ দেশটির সকল মসজিদে আজান দেয়ার জন্য ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের সংখ্যা কমানোর জন্য নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, আজান দেয়ার জন্য চারটির বেশি লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না এবং চারটির বেশি লাউডস্পিকার থাকলে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ, এখানে লাউডস্পিকারে আজান দেয়ার উপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে দেখা যায়নি। কেবল সংখ্যা কমিয়ে চারটিতে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে।

 

তাছাড়া, ২০২১ সালের জুন মাসে বিবিসি এবং আল-জাজিরা এর প্রকাশিত দুটো প্রতিবেদন মারফত জানা গেছে যে, সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজান দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের ভলিউম লেভেল এক-তৃতীয়াংশ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়। জনগণের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ এবং উচ্চ ভলিউমে আজানের শব্দ শিশু ও বয়স্কদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে – এই ভিত্তিতেই লাউডস্পিকারে ভলিউম কমিয়ে আজান দেয়ার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনাটি দেয়া হয় বলে জানান দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আব্দুল লতিফ আল শেখ। এখানেও দেখা যাচ্ছে লাউডস্পিকারে আজান দেয়ার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

 

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে কোন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লাউডস্পিকারে আজান দেয়ার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে আমরা সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি টুইটার পেজ খুঁজে বের করি এবং সেখানে গত ৩ই মার্চ, ২০২৩ এ প্রকাশিত আসন্ন রমজান এর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাই। উক্ত বিজ্ঞপ্তিটির কোথাও লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, উক্ত বিজ্ঞপ্তিটির ষষ্ঠ ধারায় মসজিদে ক্যামেরা স্থাপনের উপর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে যাতে নামাজরত অবস্থায় থাকা ইমাম এবং প্রার্থনাকারীদের ছবি তোলা না হয় এবং কোন ধরনের মিডিয়াতে যাতে নামাজের সময় তোলা ছবি পাঠানো বা প্রচার করা না হয়। কিন্তু লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা সেখানে পাওয়া যায় নি।

 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh