“বিক্রি হচ্ছে মাথার উকুন, প্রতি উকুনের মূল্য ৩০০ টাকা” – পাঁচ বছর আগের খবর

Published on: August 24, 2021

সম্প্রতি “বিক্রি হচ্ছে উকুন, প্রতি উকুনের মূল্য ৩০০ টাকা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল থেকে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংবাদটি ২০১৬ সালের। উকুন চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুল ঘন করতে সাহায্য করে এমন বিশ্বাস থেকে দুবাইয়ের চুলের সেলুনগুলোতে উকুন কেনার হিড়িক লাগে সে সময়ে। পরবর্তীতে এ ধরনের ক্ষতিকর চর্চাকে নিষিদ্ধ করা হয়। পাঁচ বছর আগের সেই সংবাদটি নতুন করে প্রচার করায় এবং শিরোনামে দেশের কথা উল্লেখ না করে উকুনের দাম টাকায় উল্লেখ করায় ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংবাদটি বিভ্রান্তিকর।  

সম্প্রতি আগস্ট মাসের বিভিন্ন সময়ে “বিক্রি হচ্ছে উকুন, প্রতি উকুনের মূল্য ৩০০ টাকা” শিরোনামে একাধিক সংবাদ শেয়ার হয়েছে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।


 

সংবাদগুলোর বিস্তারিত অংশ বলছে, “দুবাইতে অধিক হারে বিক্রি হয় এই উকুন। তাও যেমন তেমন মূল্যে নয়। এক উকুনের মূল্য ১৪ দেরহাম। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ৩০০ টাকা। গবেষণায় দেখা গেছে, মাথার উকুন চুল ও শরীর স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। এতে চুল পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। চুল মজবুত থাকে এবং শরীর স্বাস্থ্যবান রাখে।“

উক্ত অংশের সূত্র ধরে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখতে পায়, এটি ২০১৬ সালে দুবাইয়ের বিভিন্ন সেলুনে উকুন বিক্রি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ। এবিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম gulfnews.com ২০ আগস্ট। ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত তাদের একটি প্রতিবেদনে বলছে,

“মহিলারা বিউটি সেলুন থেকে উকুন কিনছেন এই বিশ্বাস করে যে তারা চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুল ঘন করতে সাহায্য করে। দুবাইয়ের পৌরসভা চুল পড়ার চিকিত্সা হিসেবে উকুন বিক্রির বিরুদ্ধে সেলুনগুলোকে সতর্ক করেছে। আরবি দৈনিক ইমারত আল-ইউমের একটি প্রতিবেদনে সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন মহিলা বলেছিলেন যে একটি উকুনের দাম ১৪ দিরহাম।“

এ বিষয়ে দুবাই পৌরসভার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান হাফেজ গালুমের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “চুলে উকুন ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর এবং ক্ষতিকর অভ্যাস। এই প্রবণতা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে — এজন্য বিউটি সেন্টার এবং হেয়ার সেলুনগুলোতে আমাদের একটি সেকশন নিয়মিত খেয়াল রাখে। যারা নিয়ম লঙ্ঘন করে তাদের জরিমানা করা হবে।“

এ বিষয়ে রাস আল-খাইমারের ওবায়েদ আল্লাহ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শরীফ দিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত এসব গুজব বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,

“মাথার উকুন ছোট, ডানাবিহীন এবং রক্ত ​​চোষা পোকামাকড়। তারা মাথার চুলে বাস করে এবং মাথার ত্বক থেক রক্ত ​​খায়। মাথার উকুন সংক্রামক এবং দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং মারাত্মক চুলকানি এবং চর্মরোগ সৃষ্টি করে। উকুনের চিকিৎসা করা এবং এর থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক সময় লাগে”। তিনি মহিলাদের এই ধরনের গুজবে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে এটি তাদের পরিবারকে সংক্রামিত করবে।

১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে ডেইলি পাকিস্তান এর একটি সংবাদ বলছে, “মাথার উকুন বিক্রি করে এমন সেলুনকে ৫৪৪ ইউএস ডলার জরিমানা করা হয়েছে।“

প্রতিবেদনটি আরও বলছে, “বিউটি সেলুনগুলো তাদের গ্রাহকদের ফেলে দেয়া চুলের মধ্যে মাথার উকুন উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত উকুনগুলোকে তারা বাক্সে করে মহিলাদের কাছে বিক্রি করেন। এই বিক্রি দিন দিন বাড়ছে কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এই পদ্ধতিটি আসলে তাদের চুলকে আরও লম্বা করতে পারে। একেকটি উকুন ৩.৮০ ইউএস ডলার দামে পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে।“

একই বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল newsgram.com এবং daily-bangladesh.com


অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, এই বছরের বিভিন্ন সময়ে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।

উক্ত ভাইরাল সংবাদগুলোর বেশীরভাগই একই লেখাযুক্ত হলেও, inquirenews24.com নামক পোর্টালটির “বিক্রি হচ্ছে উকুন, প্রতি উকুনের মূল্য ৩০০ টাকা” শিরোনামযুক্ত খবরটিতে পাওয়া গেছে কিছুটা ভিন্ন বিবরণ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই খবরটি গত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত zeenews.india.com এর একটি সংবাদ থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে।


এদিকে vairalnews.com এর প্রতিবেদনে উকুন বাছার যে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি পাওয়া গেছে ১৩ জুলাই, ২০১৭ সালে “বাংলার গ্রাম-গ্রামের বাংলা” শীর্ষক একটি ব্লগ আর্টিকেলে


উপরোক্ত তথ্য-প্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, “বিক্রি হচ্ছে মাথার উকুন, প্রতি উকুনের মূল্য ৩০০ টাকা” শীর্ষক খবরটি ৫ বছরের পুরনো। শিরোনামে দেশের কথা উল্লেখ না করে উল্টো উকুনের দাম টাকায় উল্লেখ করায় অনেকে বিভ্রান্ত হতে পারেন যে এটি হয়তো বাংলাদেশের ঘটনা। পুরনো এই সংবাদটি নতুন করে প্রচার করায়, ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংবাদটি বিভ্রান্তিকর।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply