ইরাকের পাহাড়ে কি শ্রীরামচন্দ্রের  ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছে?  

Published on: March 15, 2023

“ইরাকের পাহাড়ে  শ্রীরামচন্দ্রের অনেক পুরনো ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছে”– এমন শিরোনামে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা একটি রিলিফ ভাস্কর্যের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে এটি ইরাকে অবস্থিত একটি পাহাড়ে খোদাই করা শ্রী রাম এবং হনুমানের ভাস্কর্য। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবির পক্ষে  কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, খোদাই করা ভাস্কর্যটি  তারদুন্নি নামক একজন মেসোপটেমিয় রাজা অথবা যোদ্ধার। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল হওয়া ছবিটির মাধ্যমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে World History এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রিলিফ ভাস্কর্যের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।  ওসামা শুকির মুহাম্মদ আমিন এই প্রতিবেদনটির প্রকাশক। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ভাস্কর্যটি “রিলিফ অফ তারদুন্নি ” বা “বেলুলা পাস রক রিলিফ” নামে পরিচিত। এটি ইরাকের সুলায়মানিয়া শহরের কাছে অবস্থিত। ভাস্কর্যটি রাজা তারদুন্নির আদলে খোদাই করা হয়েছিল, আক্কাদিয়ান শিলালিপি অনুযায়ী তিনি প্রায় ৪০০০ বছর আগে এই অঞ্চলে বসবাস করতেন।

রিলিফ অফ তারদুন্নি নামের ভাস্কর্যটি খেয়াল করলে দেখা যায়, একজন বিজয়ী যোদ্ধা হাতে একটি ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার পায়ের কাছে পরাজিত দুজন মানুষ রয়েছে। মেসোপটেমিয় সভ্যতার এই ধরণের আরও ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, রক রিলিফ অফ ইদ্দীন-সিন

দুইটি ভাস্কর্যের ছবি মনোযোগ দিয়ে দেখলে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাবে যেমনঃ বিজয়ী যোদ্ধার মাথার ঢাল, যুদ্ধের অস্ত্র, পোশাক, পায়ের নিচে পরাজিত ব্যক্তি ইত্যাদি।

অন্যদিকে, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৬ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের ‘অযোধ্যা শোধ সংস্থা’ বিশ্বাস করে যে ধনুকধারী যুদ্ধরত ব্যক্তিটি মূলত শ্রী রাম এবং পরাজিতরূপে যাদের দেখানো হচ্ছে তাদের মধ্যে একজন হলেন হনুমান।  কিন্তু এই দবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তারা দিতে পারেন নি।

রিলিফ অফ তারদুন্নির সাথে শ্রী রামের অস্ত্র ধনুক, বনবাস জীবনের পোষাক ইতাদির সাদৃশ্য দেখা গেলেও হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পর্কিত কোনো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভাস্কর্যটি যে তারদুন্নির এ ব্যাপারে অন্যান্য ভাস্কর্যের সাথে সাযুজ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ইরাকি গবেষকেরা দাবি করেন। কিন্তু শ্রী রামের দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভারতীয় গবেষকেরা এ ব্যাপারে দাবি করেছেন, ইরাকী কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেলে তাদের দাবি প্রমাণের জন্য কাজ করতে পারবেন। এ থেকে পরিষ্কার যে, এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ ভারতীয় সংস্থাটির হাতেও এখন পর্যন্ত নেই।

সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh