কলকাতায় ১৪ কেজির এলপিজি’র দাম কি ৪৫০ টাকা?

Published on: October 8, 2021

সম্প্রতি কয়েকটি দেশের সাথে বাংলাদেশের এলপিজি’র (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) দামের পার্থক্য নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রচুর ভাইরাল হয়েছে। স্ট্যাটাসটির শুরুতেই বলা হয়েছে, “ইন্ডিয়ার কলকাতায় ১৪ কেজির এলপিজি গ্যাসের দাম ৪৫০ টাকা আর বাংলাদেশে ১২ কেজির এলপিজি গ্যাসের দাম ১১০০/ ১২০০ টাকার মতন, এর কারনটা কি?” বাস্তবে কলকাতায় ১৪.২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের বর্তমান মূল্য ৯২৬ টাকা। ভুল তথ্য পরিবেশনের কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

সম্প্রতি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে উক্ত ক্যাপশনযুক্ত কিছু স্ট্যাটাস দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

উক্ত স্ট্যাটাসের লেখা ধরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ইতিপূর্বে ২০১৯২০২০ সালেও এই একই তথ্যযুক্ত পোস্টটি ফেসবুকে শেয়ার হয়েছিল।


ভারতের কলকাতার বর্তমান এলপিজির দাম অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, কলকাতায় ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯১১ থেকে বেড়ে ৯২৬ টাকা হয়ে গিয়েছে। ১৯ কিলোগ্রাম গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১,৭৭০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৮০৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ২৫ টাকা বেড়েছিল ভর্তুকিহীন ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দাম। শুধু, চলতি বছরই কলকাতায় এলপিজি’র দাম বেড়েছে ২৪১ টাকা।




ভাইরাল স্ট্যাটাসটির বাকি অংশে বলা হয়েছে,

“সৌদি আরব অন্যদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে জনগণের কাছে বিক্রি করে (১৫ থেকে ১৮ রিয়াল) তার মানে (৩৩০ থেকে ৩৯৬ টাকা)।

মালয়েশিয়ায় ১৪ কেজির দাম বাংলাদেশী টাকায় ৬০০ টাকা মাত্র কিন্তু আমার দেশে উৎপাদিত গ্যাস আমাকে ক্রয় করতে হয় ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।

কেন?“

ইন্টার্নেটে অনুসন্ধান করে মালয়েশিয়ায় এলপিজির সঠিক বাজারমূল্য জানা যায়নি। তবে globalpetrolprices.com নামের একটি ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে বর্তমানে প্রতি লিটার এলপিজি’র বাজারমূল্য ১৭.১৭ টাকা (০.২০০ মার্কিন ডলার)।

ভাইরাল স্ট্যাটাসটির শেষাংশে “আমার দেশে উৎপাদিত গ্যাস আমাকে ক্রয় করতে হয় ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।“ কথাটিতে অসঙ্গতি রয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং এলপিজিকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।

অপরিশোধিত প্রাকৃতিক গ্যাস  তৈরি হয় মিথেন, প্রোপেন, বিউটেন, আইসোবিউটেন, ইথেন, ইথিন, প্রোপেন, আইসোবিউটিন, বিউটাডিন, পেনটেন, পেন্টিন এবং পেন্টেনস প্লাস থেকে। পরিশোধিত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রায় সম্পূর্ণ মিথেন দিয়ে তৈরি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী বর্তমানে আবাসিক খাতে দুই চুলার খরচ ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৯২৫ টাকা।

অপরদিকে, খনিজ তেল বা গ্যাস প্রক্রিয়াজাত করার সময় কিছু কিছু গ্যাস উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়, যেমন প্রোপেন, বিউটেন। এদের প্রচন্ড চাপে তরল করে ব্যবহার করা হয়। মাঝারি চাপে এটি তরল হিসাবে সিলিন্ডারে সংরক্ষণ এবং পরিবহন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট থেকে এলপিজি উৎপাদন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল থেকে সামান্য পরিমাণে এলপিজি পাওয়া যায়। জ্বালানীর চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ উতপাদনের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে এলপিজি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, তাই “আমার দেশে উৎপাদিত গ্যাস আমাকে ক্রয় করতে হয় ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।“ তথ্যটি ভুল।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে দেশে এলপিজি একটি আমদানি-নির্ভর পণ্য। অপরিশোধিত তেল শোধনাগারে নিয়ে পরিশোধনের পর তেলের পাশাপাশি প্রায় ১০টি পণ্য বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে বেরিয়ে আসে। এলপি গ্যাস তার মধ্যে একটি। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যখনই তেল বা এ জাতীয় পণ্যের দাম উঠানামা করে তখনই এ সম্পর্কিত পণ্যের দামও উঠানামা করে। এ ধরণের পণ্যের কোন সুনির্দিষ্ট দাম থাকে না। একদিন এমনকি ঘণ্টার পার্থক্যের কারণেও দাম পরিবর্তিত হয়ে যায়।”

উক্ত ভাইরাল পোস্টটিতে কলকাতায় ১৪ কেজির এলপিজি’র যে দাম উল্লেখ করা হয়েছে তা ভুল। কলকাতায় ১৪.২ কেজির এলপিজি’র বর্তমান মূল্য ৪৫০ টাকা নয়, ৯২৬ টাকা। ভুল তথ্য পরিবেশনের কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply