মাইশাকে খুনের আগে ধর্ষণ করার কোনো তথ্য নেই গণমাধ্যমে

Published on: November 28, 2021

কিশোরগঞ্জে আপন মায়ের হাতে কিশোরী মাইশা আক্তার এর আলোচিত হত্যাকাণ্ডের সাথে ধর্ষণের একটি গুজব যুক্ত করে ফেসবুকে কিছু পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। এসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, মাইশাকে বুধবার বিকাল ৩ টায় ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মাইশাকে বৃহস্পতিবার রাত ৩ টায় হত্যা করা হয় এবং হত্যার পূর্বে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

গুজবের উৎস

ভাইরাল হওয়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে. এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

গত ৬ নভেম্বর, ২০২১ তারিখ Shehab Uddin Nayeem নামক ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে News24 TV-এর ‘কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে মেয়ে মাইশাকে গলাটিপে হত্যা করার অভিযোগে মা স্বপ্না আক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ’ নিউজ টেলিকাস্টটির সাথে ঘটনাটির একটি বর্ণনামূলক ক্যাপশন যোগ করে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয় – হায়েনার মত নিষ্পাপ অসহায় মাইশার উপর ঝাপিয়ে পড়ে মাইশার মায়ের সেই পরকীয়া স্বামী। টেনে হেচড়ে গায়ের বোরকা খুলে মায়ের সামনেই ধর্ষণ করলো মাইশাকে। ধর্ষণ করার পর মাইশার দু পায়ে চেপে ধরলো পরকীয়াধারী সেই লোক। আর মাইশার গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে মাইশাকে হত্যা করলো মাইশাকে জন্ম দেয়া মাইশার আপন মা।

পরদিন ৭ নভেম্বর Mahid Media-মাহিদ মিডিয়া নামক পেইজ থেকে বেলা ১২ টায় একই ক্যাপশনে মাইশা হত্যার সংবাদ পোস্ট করা হয়। এটি কমপক্ষে ১৯৪ বার শেয়ার করা হয়। এরপর ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপে, পেইজ ও প্রোফাইল থেকে বহুবার মাইশাকে ধর্ষণের পর হত্যার সংবাদটি শেয়ার করা হয়েছে।


ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে, বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার ৪ নভেম্বর, ২০২১ তারিখের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাইশা আক্তার স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তার মা স্বপ্না বেগমের সাথে খালাতো ভাই ফায়জুলের দীর্ঘসময়ের প্রেমের সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় তারা দুজন মিলে মাইশাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। মাইশার নানি বেদেনা আক্তারের ভাষ্যমতে স্বপ্না বেগম জানায় মাইশা স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু লোকজন মাইশার গলা ও সারা শরীরে দাগ দেখে পুলিশে খবর দেয়। করিমগঞ্জ থানার ওসি মো. শামছুল আলম সিদ্দিকী জানান, স্বপ্না আক্তার পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন তিনি নিজেই তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। রিপোর্টে হত্যার আগে মাইশাকে ধর্ষণের কোনো উল্লেখ নেই।

সমকালের ৪ নভেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী এলাকাবাসীর ভাষ্যে, স্বপ্না বেগমের স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার সাথে ফাইজুলের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার দেন-দরবার হয়। এর মধ্যে মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে মায়ের কাছে আসে মাইশা। সেদিন রাতেই তার মা স্বপ্না আক্তার ও প্রেমিক ফাইজুল মিলে মাইশাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় ফাইজুল। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বপ্না বেগম জানায়, মেয়ে মাইশার সঙ্গে ফাইজুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং অনেকবার সতর্ক করার পরও মাইশা এ সম্পর্ক বজায় রাখায় সে তার মেয়েকে হত্যা করেছে। এখানেও মাইশাকে ধর্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা হয় নি।

যুগান্তরের ৪ নভেম্বরের রিপোর্টেও পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় মার হাতে শ্বাসরোধে মাইশাকে হত্যার কথা বলা হয়েছে। সেখানে ধর্ষণের কোন উল্লেখ নেই।

কিশোরগঞ্জ নিউজের ৪ নভেম্বর এবং মানবজমিনের ৫ নভেম্বরের রিপোর্টেও একই তথ্য পাওয়া যায়। নির্ভরযোগ্য পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, মা স্বপ্না বেগম ও তার প্রেমিকের হাতে মেয়ে মাইশা শ্বাসরোধে খুন হয়। জিজ্ঞাসাবাদে স্বপ্না বেগম মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও তার প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষিত হবার কথা বলেন নি। এলাকাবাসী এবং পুলিশের ভাষ্যেও স্বপ্না বেগম ও ফায়জুল দ্বারা মাইশাকে ধর্ষণের কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না।

পোস্টে উল্লেখিত সময়েও অসামঞ্জস্য পাওয়া যায়। একবার বলা হয়েছে মাইশাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে বিকাল ৩টায় আসরের আজানের আগে, এক লাইন পরই আবার বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, মাইশা বাড়িতে আসে বুধবার (৩ নভেম্বর), এবং বৃহস্পতিবার ভোরে (৪ নভেম্বর) তাকে হত্যা করা হয়।

এখানে সংযুক্ত ভিডিওটিতে পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী মাইশাকে ভোর ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে গলা টিপে হত্যা করা হয়, এবং সে সময় ঘটনাস্থলে স্বপ্না বেগমের প্রেমিক ফায়জুল উপস্থিত ছিল। (ভিডিও সৌজন্যে- Mahdi Hasan Rayhan)

হত্যার আগে মায়ের প্রেমিক মাইশাকে ধর্ষণ করেছিল – এই তথ্যের পেছনে ধর্ষণের আলামত, মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট, পুলিশ, ডাক্তার, এলাকাবাসী বা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কারো বিবৃতি নেই।

ফ্যাক্টওয়াচ সিদ্ধান্ত

মাইশাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয় – এ সংবাদটি আংশিক মিথ্যা। মাইশাকে খুন করা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তরফে ধর্ষণ করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।  নির্ভরযোগ্য পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট থেকে মাইশাকে ধর্ষণের সপক্ষে যায় এমন কোনো সূত্রও পাওয়া যায় নি।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply