কাবা শরীফে হামলাকারী ব্যক্তিটি হিন্দু নন

Published on: May 28, 2023

সম্প্রতি মক্কায় হজ্জ্ব চলাকালীন একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি হামলা করেছে — এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বলা হয়, মক্কার কাবা শরীফে শিবকে আটকে রাখা হয়েছে এমন একটি বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে উক্ত ব্যক্তি সেখানে হামলা করে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, হামলার একটা ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু সেই ব্যক্তি হিন্দু এমন কোনো তথ্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং জানা গেছে, সে সৌদি নাগরিক এবং নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করেছিলো। এছাড়া শিবকে আটকে রাখার কারণে হামলা বিষয়ক দাবিটিরও কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নি। মূলত সে গ্র্যান্ড মসজিদের ইমামকে আক্রমণ করতেই জোরপূর্বক ভিতরে যেতে চেয়েছিলো।

 

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই ভিডিও থেকে স্থিরচিত্রের সাহায্যর রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, মূলধারার বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ডেইলি পাকিস্তান, গালফ টুডে এবং আরব নিউজ।  “Armed man arrested after trying to access Imam’s pulpit at Makkah’s Grand Mosque”- শিরোনামে গালফ টুডের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২১ মে ২০২১ এ মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ঘটনাটি ঘটে। সেদিন শুক্রবার ছিলো এবং জুম্মার নামাজের সময় ইহরাম পরা এক ব্যক্তি হাতে লাঠি নিয়ে সেখানে হামলা করতে যায়। তখন নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ তাকে আটক করে। মক্কার পুলিশের বরাতে এই তথ্যটি জানানো হয়।

 

অন্যদিকে, ২৫ মে ২০২১ এ ডেইলি পাকিস্তানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ব্যক্তির বয়স ৪০ বছর এবং সে সৌদি আরবের একজন নাগরিক। উল্লেখ্য, সৌদি আরবের নাগরিক হওয়ার জন্য ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ভিন্ন বিশ্বাসীদের সে দেশের নাগরিকত্ব নেয়ার আগে অবশ্যই ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে হবে। উইকিপিডিয়া এবং ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিম্নোক্ত নথি থেকে বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ, যেহেতু হামলাকারী একজন সৌদি নাগরিক তাই অবশ্যই সে ইসলাম ধর্মের অনুসারী।


 

এছাড়া সৌদি আরবের মক্কায় ইসলাম ব্যতিত অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রবেশেও রয়েছে বাধা। অর্থ্যাৎ, মক্কায় প্রবেশাধিকার রয়েছে একমাত্র মুসলিমদের।

আবার আমরা যদি, উক্ত ব্যক্তির পোশাকের দিকেও লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে যে, তার পরনে ইসলাম ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় পোশাক ইহরাম রয়েছে। এছাড়া হামলাকারী নিজেকে ইমাম মাহাদি হিসেবেও দাবি করেছিলো (ইমাম মাহদী হলেন একজন ইস্ক্যাটোলজিকাল মেসিয়ানিক ব্যক্তিত্ব যিনি, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, দুনিয়াকে মন্দ ও অন্যায় থেকে মুক্ত করার জন্য শেষ সময়ে আবির্ভূত হবেন)।

 

তার নাগরিকত্ব, পোশাক, বিশ্বাস এবং যে স্থানে তাকে আটক করা হয়েছিলো সে সবকিছু বিশ্লেষণ করলে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, হামলাকারী হিন্দু নন, ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

 

এছাড়া ভাইরাল ভিডিওতে উক্ত হামলার পিছনে কারণ হিসেবে হামলাকারীর “শিবকে কাবা শরীফে আটকে রাখা হয়েছে” এমন বিশ্বাসকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, শিবকে মুক্ত করতেই সে সেখানে আক্রমণ করে। কিন্তু মূলত সে সেখানকার ইমামের উদ্দেশ্যে হামলাটি করে এবং নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে শিব কিংবা হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় নি।

 

তাই সংগত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ এমন দাবিসহ ভিডিওগুলোকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh