ফুটবলার মেসি এবং নেইমার কি “ইলুমিনাতি” গুপ্তসংঘের সদস্য?

Published on: [July 15,2021]

আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসি এবং ব্রাজিলের জনপ্রিয় ফুটবলার নেইমার জুনিয়র এর দুই বাহুর নির্দিষ্ট দুইটি ট্যাটুকে ফোকাস করে একটি কোলাজ  ছবি ভাইরাল হয়েছে। এখানে দাবি করা হচ্ছে, নির্দিষ্ট এই ট্যাটু টি “ইলুমিনাতি” নামক একটি গুপ্ত সংঘের প্রতীক এবং মেসি-নেইমার দুইজনেই ইলুমিনাতির সদস্য।

মেসি-নেইমারের ট্যাটু নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। সেই সুবাদে আমরা জানি, মেসির ডান হাতের ট্যাটুটি তার স্ত্রী আন্তোনেলা  রোকুজ্জোর চোখের মত করে আঁকা হয়েছে। একইভাবে, নেইমার-এর বাম হাতের ট্যাটুটিও তার শিশুপুত্র ডেভি লুসার চোখের মত করে আঁকা। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে, গুপ্ত সঙ্ঘ ইলুমিনাতির সাথে মেসি-নেইমারের ট্যাটুর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এমন কি “ইলুমিনাতি” নামক গুপ্ত সংঘের অস্তিত্ব সম্পর্কেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। এটি একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ফলত মিথ্যা।


গুজবের উৎস

বাংলাদেশ সময় ১১ই জুলাই সকাল ৮ টায় কোপা আমেরিকা প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকে এই কোলাজ করা ছবিটা ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে। মেসি এবং নেইমারের দুইটা ছবি পাশাপাশি বসিয়ে “ইলুমিনাতি” নামক একটি গুপ্ত সংগঠনের লোগো লাগিয়ে টাইটেল দেওয়া হয়েছে, এটি এক চোখা কানা দাজ্জালের চিহ্ন ,যা ইলুমিনাতির সদস্যরা ব্যবহার করে থাকে।

এই ছবি কিংবা কাছাকাছি ধরনের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্যাপশন যোগ করে বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপ থেকে এটা শেয়ার করা হচ্ছে।

এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে, এখানে।


ব্রাজিল Vs আর্জেন্টিনা নামক ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশিত এক পোস্টে এই ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে,
হে মুসলিম যুবক, বর্তমানে ঈমান বিধ্বংসী সবচে বড় ফিৎনার নাম হলো দাজ্জালীয় ফিৎনা। কানা দাজ্জালের অগ্রীম সংগঠণের নাম হলো ইলুমিনাতি। যার সদস্যরা দাজ্জালের ভক্ত হিসাবে এক চোখ ব্যবহার করে। ইলুমিনাতির সিম্বল হলো এক চোখ। আমার কথা বিশ্বাস না হলে, ইলুমিনাতি লিখে গুগলে সার্চ করো। উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে, “শয়তানের উপাসনার মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করে ইলুমিনাতি। ইহুদিদের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব মতে, ইলুমিনাতির এক চোখা প্রতীক প্রমাণ করে যে, ইলুমিনাতি হলো সেই সংঘ যারা একচোখা দাজ্জাল (কিংবা বাইবেল মতে ৬৬৬ বা অ্যান্টিক্রাইস্ট) এর আগমনের পথ সুগম করছে।”

হে মুহাম্মাদের সা. উম্মাহ, তোমার প্রিয় খেলোয়াড় মেসি-নেইমার সেই কানা দাজ্জালের সদস্য। অথচ ইলুমিনাতির সদস্যদের এ ভয়ঙ্কর ফাঁদে তুমিও পা দিচ্ছো? তুমিও তাদের ভক্ত?


উইকিপিডিয়া ছাড়া আর কোনো রেফারেন্স দেওয়া হয়নি এই পোস্টে। কিংবা বাইরের কোনো লিঙ্ক যোগ করা হয়নি। শুধুমাত্র তাদের দু’জনের দুই হাতের ট্যাটু দেখিয়ে তাদেরকে ইলুমিনাতির সদস্য দাবি করা হচ্ছে।


ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে দুইটা ছবিই সত্য। এখানে কোনো ছবি এডিট করে হাতের ছবি বসানো হয়নি।

প্রথম ছবিটা তোলা হয়েছিল ১১ জুলাই সকালে কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচের পরপরই , যখন নেইমার মেসিকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল।

                            ছবি সৌজন্যে- কোপা আমেরিকার অফিসিয়াল টুইটার একাউন্ট

এই ছবিতে নেইমারের হাতের চোখের ট্যাটু পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

দ্বিতীয় ছবির মূল উৎস সনাক্ত করা না গেলেও ২০১৬ সাল থেকেই এই ছবিটা অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। এখানে মেসির হাতে চোখের ট্যাটু দেখা যাচ্ছে।

 

                                                          ছবি সৌজন্য – গোল ডট কম

মেসি তার সারা শরীরে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ট্যাটু করেন। এখন পর্যন্ত তার শরীরে ১৮ টা ট্যাটু রয়েছে। এর মধ্যে  যীশু খৃষ্টের ছবি , নিজের মায়ের ছবি, শিশুপুত্র থিয়াগোর ছবিও রয়েছে। মেসির ডান হাতে চোখের যে ট্যাটুটা আঁকা, সেটি তার স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জর (Antonella Roccuzzo)  চোখের আদলে আঁকানো হয়েছিল। এমনটাই জানাচ্ছে স্পোর্টস মব, গোল ডট কম সহ আরো কয়েকটা সংবাদমাধ্যম


                                    মেসি এবং আন্তোনেলা রোকুজ্জো ।   ছবি সৌজন্য- মিরর


ট্যাটু আকানোয় সংখ্যার দিক দিয়ে মেসির চেয়ে নেইমার এগিয়ে। এখন পর্যন্ত ৪৬ টা ট্যাটু রয়েছে তার সারা শরীরে। এগুলোর মধ্যে পিঠে তার মায়ের মুখ, তার ডান কাধে তার বোনের মুখ,  ডান হাতের নিচের দিকে পুত্র ডেভি লুসার মুখ রয়েছে। ডান হাতের উপরের অংশে থাকা চোখটি নেইমার পুত্র Davi Luca এর চোখের আদলে আঁকা বলে জানা যাচ্ছে।

                                 নেইমার এবং তার পুত্র ডেভি লুসা। ছবি সৌজন্যে- স্পোর্টসকিডা

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,  নেইমারের বোন রাফায়েল সান্তোস ও তার শরীরে নেইমারের চোখ ট্যাটু করেছে।

অর্থাৎ, মেসি এবং নেইমার ইলুমিনাতির ভক্ত হওয়ার কারণে চোখের ট্যাটু এঁকেছে, এমন কোনো বিবৃতি কোন মাধ্যমে পাওয়া গেল না। বরং তারা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্যই এই ট্যাটু এঁকেছেন এমনটাই তথ্য আকারে পাওয়া যায়। ট্যাটুতে থাকা চোখগুলোর সাথে মেসির স্ত্রী রোকোজ্জো এবং নেইমার-পুত্র ডেভির চোখেরই মিল বেশি। ইলুমিনাতির প্রতীকে থাকা চোখের সাথে কোনো মিল পাওয়া যায় না।

‘ইলুমিনাতি’ নামক গুপ্ত সঙ্গঠন সম্পর্কে কি জানা যাচ্ছে ?

ভাইরাল হওয়া পোস্টে রেফারেন্স হিসেবে উইকিপিডিয়াকে ব্যবহার করেছে । আমরাও উইকিপিডিয়ায় সার্চ করে দেখলাম, বাঙলা উইকিপিডিয়াতে ‘ইলুমিনাতি’ নিবন্ধ টা খুবই ছোট। নিবন্ধের শুরুতেই সতর্কতা হিসেবে বলা হয়েছে, এই নিবন্ধে একাধিক ত্রুটি রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এই নিবন্ধটির নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।


নিবন্ধের মাঝামাঝি এসে, ফেসবুকের ভাইরাল পোস্টের দাবি করা অংশটা পাওয়া গেল। শয়তানের উপাসনার মাধ্যমে স্বার্থ হাসিল করে ইলুমিনাতি। খ্রিস্টান ও মুসলিম ষড়যন্ত্রতত্ত্ব অনুযায়ী, ইলুমিনাতির এক চোখা প্রতীক প্রমাণ করে যে, ইলুমিনাতি হলো সেই সংঘ যারা একচোখা দাজ্জাল (কিংবা বাইবেল মতে ৬৬৬ বা অ্যান্টিক্রাইস্ট) এর আগমনের পথ সুগম করছে।

তবে এই দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যসূত্র যোগ করা নেই। উইকিপিডিয়ার এডিট হিস্টরি থেকে দেখা গেল, জনৈক Sazid56 এই অংশটুকু যোগ করেছিলেন ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এবং এই Sazid56 এর উইকিপিডিয়াতে একাউন্ট নেই, তাই তার সম্পর্কে আর কিছু জানা গেল না।

এই নিবন্ধেরই শেষ দিকে বলা হয়েছে, নতুন করে বর্তমান সময়ে এটি আবার আলোচিত হতে শুরু করেছে ড্যান ব্রাউন এরঅ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডিমনস” উপন্যাসের মাধ্যমে। মানুষ মনে করে থাকে ইলুমিনাতি সদস্যরা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে। তবে তার কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই।

নিবন্ধের এই অংশে অন্য একটি ওয়েবসাইটকে রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যদিও সেই লিঙ্ক এখন অকার্যকর।

ইংরেজি উইকিপিডিয়াতে ইলুমিনাতি নিবন্ধটি অবশ্য বেশ সমৃদ্ধ। সেখানে প্রায় ৫০ টা বিভিন্ন বই, জার্নাল এবং নিবন্ধের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে। এবং বাংলা ভার্সনের মত এখানে কোনো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি নেই।

এই নিবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, জার্মানির ব্যাভারিয়াতে ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৬ সাল পর্যন্ত Illuminati নামক একটি গুপ্ত সঙ্ঘের অস্তিত্ত্ব ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদেরকে প্রাচীন ইলুমিনাতির অংশ বলে দাবি করে। অনেক ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব বিশ্বাসীরা (Conspiracy Theorist) দাবী করেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (যেমন রানী এলিজাবেথ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইত্যাদি) ইলুমিনাতির সদস্য। তারাই বিশ্বের রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এই ষড়যন্ত্র-তত্ত্বকে কেন্দ্র করে অনেক বই, সিনেমা, নাটক, এনিমেশন বানানো হয়েছে।

https://illuminatirealm.net/ নামে একটি ওয়েবসাইট পাওয়া গেল, যারা নিজেদেরকে ইলুমিনাতির ‘অফিসিয়াল ওয়েবসাইট’ বলে দাবি করছে। যদিও তাদের কোনো কার্যক্রম ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান নয়।


‘অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে’ সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় বইয়ের লেখক আব্দুল্লাহ ইবন মাহমুদ রোর বাংলা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই নিবন্ধে জানাচ্ছেন, যেহেতু এরা গোপনীয়তার ধার ধারে না, সুতরাং তারা আসল ইলুমিনাতি নয় ।

এই একই যুক্তিতে , মেসি এবং নেইমার যেহেতু শরীরের প্রকাশ্য স্থানে চোখের ট্যাটু করেছেন , অর্থাৎ এই ট্যাটু নিয়ে গোপনীয়তার ধার ধারেনি, সেহেতু তারা ইলুমিনাতির সদস্য হওয়া উচিত না। ইলুমিনাতির সদস্য হলে তারা সেই পরিচয় ঢেকে রাখত। ট্যাটু আঁকানোর মত এমন কোনো কার্যক্রম করত না, যাতে ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব বিশ্বাসীদের সন্দেহ হয়।

এছাড়া , যাদেরকে ইলুমিনাতি বলে সন্দেহ করা হয় ( যেমন- ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাণি এলিজাবেথ প্রমুখ) তারা কেউই নিজেদের শরীরে চোখের ট্যাটু আঁকান নি।


ইলুমিনাতি তত্ত্বের উৎপত্তি

আমেরিকার সংবাদ মাধ্যম, ইনসাইডার এর ২০১৯ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গিয়েছে, ১৫% আমেরিকান ভোটার বিশ্বাস করেন, ইলুমিনাতি নামক গোপন সংগঠনের অস্তিত্ত্ব রয়েছে । ( এবং ৮৫% বিশ্বাস করেন, এমন কোনো সংগঠন নেই। )

মধ্যযুগে ইউরোপের চার্চ সঙ্গীতের ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছিল। ( যেমন- ফ্লাটেন্ড ফিফথ কিংবা বাংলায় কড়ি মা স্বরলিপি ব্যবহার করে গান গাওয়া যাবেনা )  এই সকল বিধিনিষেধ ভেঙে যারা নিষিদ্ধ সুরে কিংবা নিষিদ্ধ কথা নিয়ে গান গাইত, তাদেরকে চার্চ শয়তানের অনুসারী বলে অ্যাখ্যা দিত। চার্চ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে অনেক মিউজিশিয়ান ও তখন বিভিন্ন নিষিদ্ধ চিহ্ন প্রদর্শন করত। সেই কালচার এখনো বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। এবং এদেরকেই ইলুমিনাতি বা বিভিন্ন গুপ্ত সংঘের সদস্য বলে দাবি করা হয়।

ইংল্যান্ডের সাপ্তাহিক পত্রিকা The Week এর এই নিবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, সঙ্গীতশিল্পী রিহানা, জে জি সহ অনেকে ইচ্ছা করেই তাদের স্টেজ শো তে কিংবা মিউজিক ভিডিওতে বিভিন্ন ইলুমিনাতি বা গুপ্ত সঙ্ঘের প্রতীক ব্যবহার করেন এবং এসব নিয়ে রসিকতা করেন। (  For instance, Rihanna frequently incorporates Illuminati images into her music videos, and even joked about the theories in the video)

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্বের অনেককেই ইলুমিনাতির সদস্য বলে কনস্পাইরেসি থিওরিস্টরা ধারণা করত। তবে কারো ক্ষেত্রেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি কেউ কেউ সাংবাদিককের কাছে এর বিপরীত কথাটাই বলেছেন। যেমন , অভিনেত্রী কেটি পেরি বিনোদন সাময়িকী রোলিং স্টোন কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন , যদি ইলুমিনাতি নামে কোনো ক্লাব আসলেই থেকে থাকে, তাহলে আমাকে ইনভাইট করো। আমিও সেখানে যোগ দিতে চাই।  আমার কোন ধারণা নেই এই ধরনের ক্লাব এর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে। আমার ধারণা, যাদের অনলাইনে কোনো কাজ নেই, তারা এসব গল্প তৈরি করে।  (“If the Illuminati exist, I would like to be invited! I see all that shit, and I’m like, ‘Come on, let me in! I want to be in the club!’ I have no idea what it is. It sounds crazy. Weird people on the Internet that have nothing to do find, like, strange triangles in your hand motions )

ব্রিটিশ লেখক David Bramwell সম্পর্কে বলা হয়, তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছন ইলুমিনাতির গুজব এর উৎস অনুসন্ধানের জন্য (A man who has dedicated himself to documenting the origins of the myth)

এই ডেভিড ব্রামওয়েল বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে জানাচ্ছেন , আধুনিক ইলুমিনাতির গুজবের উৎস ১৯৬০ এর দশকে। এ সময়ের তরুণ সমাজ হিপি কালচার এবং এলএসডি সহ বিভিন্ন মাদকে আচ্ছন্ন ছিল। ১৯৬৩ সালে প্রিন্সিপিয়া ডিসকর্ডিয়া নামের একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটা লিখেছিলেন Greg Hill এবং Kerry Wendell Thornley । এটা ছিল Discordia নামের একটা ছদ্ম ধর্ম (Fake religion) এর কথিত ধর্মগ্রন্থ। বইয়ে এরিস নামের একজন ‘বিশৃংখলার দেবী’কে উপাসনা করা হয়েছে। সামাজিক বিশৃংখলা ,প্রাকটিক্যাল জোক এবং গুজব সৃষ্টি করা  ছিল এই ডিসকর্ডিয়া আন্দোলনের লক্ষ্য।

পরবর্তীতে, আরেক লেখক রবার্ট এ্যান্টন উইলসন যুক্ত হন প্রিন্সিপিয়া ডিসকর্ডিয়া বইয়ের লেখক কেরি ওয়েন্ডেল থর্নলি  এর সাথে। তারা একমত হন যে, পৃথিবী অনেক বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ, অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। পৃথিবীকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার জন্য বিশৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে । এটা করার উপায় হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ,বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া। এই কাজ শুরুর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তারা ইলুমিনাতির গল্প বলার সিদ্ধান্ত নেন। ( The world was becoming too authoritarian, too tight, too closed, too controlled”. They wanted to bring chaos back into society to shake things up, and “the way to do that was to spread disinformation. To disseminate misinformation through all portals – through counter culture, through the mainstream media, through whatever means. And they decided they would do that initially by telling stories about the Illuminati.”)

উইলসন সেই সময়ে চাকরি করতেন প্রাপ্তবয়স্কদের বিনোদন ম্যাগাজিন প্লেবয়  এ । উইলসন এবং থর্নলি প্লেবয়-এর চিঠিপত্র কলামে একের পর এক ছদ্মনামে চিঠি পাঠাতে লাগলেন ইলুমিনাতির অস্তিত্ত্বের দাবি নিয়ে। রবার্ট উইলসন তার ক্ষমতা দিয়ে এই চিঠিগুলো ছাপানোর ব্যবস্থা করলেন প্লেবয় এর ‘পাঠকের চিঠি’ বিভাগে। ইলুমিনাতি-গুজব এর বিরোধিতা করেও তারাই আবার ছদ্মনামে চিঠি ছাপাতেন প্লেবয় এ।

দ্রুত দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এই ‘ইলুমিনাতি’ টপিকটা। অনেকে বিশ্বাস করা শুরু করেন। অনেকে অবিশ্বাস করলেও,ইলুমিনাতি নামটার সাথে পরিচিত হন।

প্লেবয় এ ছাপা হওয়া চিঠিপত্রের উপর ভিত্তি করেই, প্লেবয় এর দুইজন লেখক, রবার্ট উইলসন এবং রবার্ট শিয়া ১৯৭৫ সালে দি ইলুমিনেটাস ট্রিলজি নামক ৩ খন্ডের বই প্রকাশ করেন। এরপর আমেরিকার বাইরেও ইলুমিনাতির গুজব টা ছড়িয়ে পড়ে।

৯০ এর দশকের পরে ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের সব কোণায় এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাভাষী পাঠকদের মধ্যে এটা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় ২০০৫ সালের দিকে । কারন, ২০০০ সালে ড্যান ব্রাউন এর থ্রিলার বই ‘Angels & Demons’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালে এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এই থ্রিলার উপন্যাসে ইলুমিনাতির কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য অস্তিত্ত্ব নিয়ে কাহিনী এগিয়েছে। বইয়ের শেষ অধ্যায়ে যদিও দেখানো হয়েছে যে ইলুমিনাতি নামে বর্তমানে কোনো সংগঠন নেই, কিন্তু বইয়ের প্রথম দিককার কাহিনী ই অনেক ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে বিশ্বাসীরা গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশে অতীতে সাকিব আল হাসান সহ অনেককে বিভিন্নভাবে ইলুমিনাতির সাথে সম্পর্কিত করার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে এসব দাবির অধিকাংশই ছিল ট্রল কিংবা স্যাটায়ার।

সিদ্ধান্ত

ফুটবলার মেসি এবং নেইমার এর সাথে ইলুমিনাতি নামক কোনো সংগঠনের সাথে কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি । তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের কথা স্মরণ করেই শরীরে ট্যাটু করেছেন , কোনো গুপ্ত সংগঠনের সদস্য হওয়ার কারণে নয়। “ইলুমিনাতি” নামের কোনো সংগঠনের অস্তিত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটা বহুল ব্যবহৃত একটি ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব বলেই প্রতীয়মান হয়।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply