মোহাম্মদ আরাফাত
Published on: August 12, 2024
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে অনেক বন্ধ টেলিভিশন চ্যানেল পুনরায় চালু হয়েছে কিংবা কিছু সচল টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে দাবি উঠেছে। এরকম দাবিগুলো হচ্ছে: দশবছর পরে চালু হল একুশে টেলিভিশন, সম্প্রচার শুরু করেছে দিগন্ত টেলিভিশন, বন্ধ হয়ে গেল সময় টিভি, একাত্তর টিভি, ডিবিসি নিউজ, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ প্রভৃতি। তবে ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে, উক্ত দাবিগুলোর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার এতদিন অব্যাহতই ছিল। বরং উক্ত চ্যানেলটির চেয়ারম্যান এবং সিইও আব্দুস সালাম দশবছর পর তার পদ ফিরে পেয়েছেন৷ দিগন্ত টেলিভিশনের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে ঠিকই, তবে সম্প্রচারে যেতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের একটি ফ্রিকোয়েন্সি পেতে বিটিআরসিতে আবেদন করেছে চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষ। গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ এ গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতনের পর ঢাকায় অবস্থিত বেশকিছু টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার স্টেশনে হামলা চালানো হলে সেসব চ্যানেলের সম্প্রচার সাময়িক সময়ের জন্য বিঘ্নিত হয়। এসকল চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে: সময় টিভি, একাত্তর টিভি, ডিবিসি নিউজ, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ প্রভৃতি৷ যেহেতু সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসা দাবিগুলোর সাথে বাস্তবতার পুরোপুরি মিল নেই, তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত দাবিগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। |
অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল চালু হওয়া কিংবা বন্ধ হওয়া দাবিতে যেসকল পোস্ট শেয়ার করা হয়েছিল সেগুলোর যথাযথতা যাচাই করে দেখেছি আমরা। পাঠকদের সুবিধার্থে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
০১. একুশে টিভি কি দশবছর পর চালু হয়েছে?
না, একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার কার্যক্রম এতদিন অব্যাহত ছিল। বরং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে টেলিভিশন চ্যানেলটির চেয়ারম্যান এবং সিইও আব্দুস সালাম দশবছর পর তার পদ ফিরে পেয়েছেন। এর আগে গত ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ এ তারেক রহমানের একটি বক্তব্য একুশে টিভিতে প্রচার করায় আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইন এবং রাষ্টদ্রোহের অভিযোগে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। সেই সময় আব্দুস সালামের নামে মামলা দায়ের এবং তাকে আটকের পর ইটিভির সম্প্রচার বিঘ্নিত হয়েছে বলে একটি দাবি উঠেছিল। তবে ইটিভি কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিল, তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি চালু রয়েছে। মূলত ইটিভির চেয়ারম্যান এবং সিইও আব্দুস সালামের দশবছর পর পুনরায় নিজ পদ ফিরে পাওয়ার খবরটিকে দশবছর পর ইটিভির সম্প্রচার চালু হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে।
০২. দিগন্ত টেলিভিশন কি সম্প্রচার শুরু করেছে?
না, দিগন্ত টেলিভিশন এখনও সম্প্রচার শুরু করেনি। গত ০৮ আগস্ট ২০২৪ এ উক্ত টেলিভিশন চ্যানেলের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার চিঠি পাওয়ার পর দিগন্ত টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক জিয়াউল হক সুমন বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরকে জানান, “তথ্য মন্ত্রণালয় আমাদের একটা চিঠি দিয়েছে যে আগের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা বিটিআরসিতে একটা আবেদন করব, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের একটা ফ্রিকোয়েন্সি পেলে আমরা সম্প্রচারে যাব।” এর আগে ০৫ আগস্ট ২০২৪ এ শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আবেদন করে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, দিগন্ত টেলিভিশন কেবল সম্প্রচারের অনুমতি পেয়েছে, এখনও সম্প্রচারে যায়নি৷ উল্লেখ্য, গত ০৫ মে ২০১৩ এ দিগন্ত টেলিভিশনের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গুজব, বিদ্বেষ ছড়ানো, এবং দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে চ্যানেলটির উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিটিআরসি৷
০৩. সময় টিভি, একাত্তর টিভি, ডিবিসি নিউজ, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ প্রভৃতি চ্যানেল কি বন্ধ হয়ে গেছে?
গত ০৫ আগস্ট ২০২৪ এ গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সরকারের পতনের পর সামাজিক মাধ্যমে দাবি উঠেছিল যে সময়, একাত্তর, এটিএনসহ বেশকিছু টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে, দাবিগুলো সঠিক নয়৷ কেননা সরকারের পতনের পর ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হলে কর্মচারীরা ভয়ে যে যার কাজ ফেলে পালিয়ে যান। ফলে বেশকিছু টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে: সময় টিভি, একাত্তর টিভি, মাই টিভি, গান বাংলা, এশিয়ান টিভি, বিজয় টিভি, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ। পরবর্তীতে অবশ্য সবগুলো টিভি চ্যানেলই সম্প্রচারে ফিরে আসে। ০৫ আগস্ট ২০২৪ এ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের খবরগুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
অতএব, উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার চালু এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে যে দাবিগুলো উঠেছিল সেগুলো সঠিক নয়৷
এমন কয়েকটি দাবির নমুনা দেখবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসা দাবিগুলোকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |