ভ্যাকসিনের মিশ্র ডোজ কেন বেশি সুরক্ষা দেয়

Published on: July 8, 2021
বিভিন্ন ভ্যাকসিনকে একত্র করে নতুন টিকা পদ্ধতি ট্রায়ালের কাজ চলছে। এমন পদ্ধতি কি করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন প্রকার ভ্যারিয়েন্ট থেকে আমাদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম?

MIT Technology Review এ লিখেছিলেন ক্যাসাণ্ড্রা উইলিয়ার্ড

ভাষান্তর: শুভাশীষ দীপ

সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট বারোটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই দুটি ডোজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এর আগে ভ্যাকসিনের মিশ্র ডোজের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। ট্রায়াল যেভাবে করা হয়েছিলো ঠিক সেভাবেই ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাধার মত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় নতুন করে মিশ্র ডোজের আলোচনা শুরু হয়।

 

এই বিষয়ে একেক দেশের নির্দেশনা একেকরকম। যেমন জার্মানি এবং ফ্রান্সের যেসব তরুণ নাগরিক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছে তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য একটি ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছে। কানাডা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি এই ব্যাপারে। দেশটির কয়েক মিলিয়ন নাগরিক অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা মেডিক্যাল স্কুলের একজন ইমিউনোলজিস্ট ডেভিড মাসোপুস্ট দেখিয়েছেন যে বেশিরভাগ ভ্যাকসিনই একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়। আর তাই তিনি মনে করেন, এই মিশ্র ডোজ কাজ করার কথা।

 

আমাদের যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে কি করা যায়। ভ্যাকসিনের মিশ্র ডোজের কার্যকারিতা জানতে অল্পসংখ্যক ট্রায়াল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার প্রথম ফলাফল এই মাসের শেষের দিকে পাওয়ার কথা রয়েছে। এই মিশ্র ডোজের ব্যবহার যদি নিরাপদ এবং কার্যকরী হয় তবে কোনো একটি ভ্যাকসিনের সরবরাহ বন্ধ হলেও অন্য একটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে দেশগুলো তাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু রাখতে পারবে। ভ্যাকসিন তৈরিতে বিলম্ব হওয়া, অপ্রত্যাশিত ঘাটতি অথবা নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা — এমন বিভিন্ন কারণে অনেকসময় ভ্যাকসিনের সরবরাহ ব্যহত হয়।

এই মিশ্র ডোজ প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের নতুন কৌশল হতে পারে; এর কারণে আমাদের শরীরে বড় আকারের ভাইরাস থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে এবং ভাইরাসটির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধ্বংস করার ক্ষমতা কমতে পারে। সবশেষে, ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে এই মিশ্র ডোজ পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।

 

মিশ্র ডোজ ট্রায়াল

 

বর্তমানে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটু ব্যতিক্রমীভাবে কাজ করে। বেশিরভাগ ভ্যাকসিনেরই লক্ষ্য থাকে ভাইরাসের ‘স্পাইক’ প্রোটিন, যার সাহায্যে ভাইরাসটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু কিছু কিছু টিকায়  আরএনএ ম্যাসেঞ্জার-এর মত করেই প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে; যেমন, ফাইজার এবং মর্ডানা। আবার কেউ কেউ স্পাইক প্রোটিনকেই টিকার মাধ্যমে সরবরাহ করে, যেমন নোভাভ্যাক্স। অনেকে আবার টীকা তৈরীর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর নয় এমন আরেকটি ভাইরাস ব্যবহার করে থাকে , যেমন, জনসন এন্ড জনসন, অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকা, স্পুটনিক- ভি। আবার সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাকের মত টিকা একটি পুরো ভাইরাসকে অকার্যকর করার মাধ্যমে তৈরী করা হয় ।

 

এ বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর ফুড এবং চীনের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের গবেষকেরা চারটি কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কম্বিনেশন ইঁদুরের মধ্যে পরীক্ষা করেছেন। সেখান থেকে দেখা যায়, কিছু কম্বিনেশন আসলেই সুরক্ষা বাড়ায়। প্রথম ডোজ হিসেবে ইঁদুরের শরীরে এমন একটি ভ্যাকসিন দেয়া হয় যেটি  নিরাপদ ঠাণ্ডা একটি ভাইরাস এর মাধ্যমে নির্দেশনা পাঠায় এবং দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ভিন্ন একটি ভ্যাকসিন দেয়া হয়। ফলাফল হিসেবে সেখানে উচ্চমাত্রায় এন্টিবডি এবং টি-সেল দেখা যায়। কিন্তু যখন এই কম্বিনেশনকে উল্টে দেওয়া হলো তখন আর কোনো উন্নতি দেখা গেলো নাহ।

এই মিশ্র ডোজ প্রক্রিয়ার একজন প্রবর্তক হচ্ছেন শান লু। তিনি একজন ফিজিশিয়ান এবং একাধারে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল স্কুলের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এই মিশ্র ডোজ প্রক্রিয়া আসলে কিভাবে কার্যক্ষমতা বাড়ায় সেটি একধরনের রহস্য। তিনি বলেন, ” এর কার্যকৌশল আংশিকভাবে হয়তো আমরা বর্ণনা করতে পারবো, তবে পুরোপুরি এখনো বুঝতে পারিনি”। ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন এই একই তথ্য দেখাচ্ছে তবে ভিন্নভাবে। ওই পার্থক্যগুলোই হয়তো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশকে সজাগ করছে অথবা এর প্রতিক্রিয়াকে আরেকটু ধার করছে। এমনকি এই পদ্ধতি ইমিউনিটিকে দীর্ঘস্থায়ীও করে তুলতে পারে।“

এখন দেখার  বিষয় মানুষের শরীরে এই পরীক্ষার ফলাফল কেমন হয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এই মিশ্র ডোজ মানুষের শরীরে কেমন কাজ করে তা দেখার জন্য একটি হিউম্যান ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছেন। কোম-কোভ নামের একটি স্টাডি, অংশগ্রহণকারীদের প্রথম ডোজ হিসেবে ফাইজার অথবা অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকা দিচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে একই ভ্যাকসিন অথবা নতুনভাবে মডার্না বা নোভ্যাক্স দিয়ে থাকছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রথম ফলাফল চলে আসার কথা রয়েছে। [পরবর্তীতে এই গবেষণার অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়।]

স্পেনে যেখানে অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকা শুধুমাত্র ষাটোর্ধ মানুষদের দেওয়া হচ্ছে — সেখানে গবেষকেরা ৬০০ মানুষের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে দেখছেন যে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার দেওয়া যায় কি না। এল পেইস নামে একটি প্রতিবেদন বলছে, আনুমানিক এক মিলিয়ন মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে কিন্তু বয়সের হিসেবে এরা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের ব্যপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে চলমান পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা করছেন; কিন্তু অংশগ্রহণকারীদের এই বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না এই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।

গতবছর অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকা রাশিয়ার গামাল্যায়া ইন্সটিটিউটের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ঘোষণা দেয়, যা দিয়ে তারা স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনটিকে মিশ্র ডোজের কম্বিনেশন হিসেবে পরীক্ষা করবে। এই ট্রায়ালটি মার্চে আরম্ভ হয়ে মে মাসের মধ্যে সাময়িক একটি ফলাফল প্রকাশ করার কথা ছিলো কিন্তু এটি শুরু হয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। চীনা বিশেষজ্ঞরা এই মিশ্র ডোজ আসলেই কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে কি না এই বিষয়ে খতিয়ে দেখার ইংগিত দিয়েছেন।

মিশ্র ডোজের ক্ষেত্রে বড় একটি অর্জন আসতে পারে কম কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ভ্যাকসিনগুলো মাধ্যমে। ফাইজার এবং মডার্নার mRNA ভাকসিনগুলো ভাইরাস থেকে ভালো নিরাপত্তা দিচ্ছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন ইমিউনোলজিস্ট ডন্না ফারবার বলেন, ” There’s reason to mess with that.” তবে, যে ভ্যাকসিনগুলো ভাইরাস থেকে কম নিরাপত্তা দিয়ে থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে এই মিশ্র পদ্ধতির মাধ্যমে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন এন্ড জনসন এবং আরো কিছু চায়নিজ ভ্যাকসিন। এর মধ্যে অনেকগুলো ভ্যাকসিনই ভালো কাজ করে তবে মিশ্র পদ্ধতির মাধ্যমে এরা হয়তো আরোও বেশি কার্যকর হবে।

জনসন এন্ড জনসন, স্পুটনিক-ভি, অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং চীনের ক্যান্সিনো এই সবগুলো ভ্যাকসিনের মধ্যেই আ্যাডেনোভাইরাস রয়েছে, এমন এক ভাইরাসের শ্রেণী যেখানে কোল্ড ভাইরাসও রয়েছে। এই ভাইরাসগুলোর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জন্য ডিএনএ ব্লু প্রিন্ট সেলের মধ্যে পাঠানো হয়। এই ভ্যাকসিনগুলোর মাধ্যমে আমাদের শরীর স্পাইকে এক ধরনের ইমিউন রেসপন্স গঠন করে কিন্তু এর মাধ্যমে যে আ্যাডেনোভাইরাস এই স্পাইকটি বহন করছে তার ক্ষেত্রেও একই প্রতিক্রিয়া গঠিত হয়। যার ফলে একটি ঝুঁকির সম্ভাবনা জন্ম নেয়ঃ দ্বিতীয় ডোজ হয়তো আ্যাডেনোভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউন রেসপন্স দ্রুত করে দিতে পারে যার ফলে বুস্টার প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে কম কার্যক্ষম হবে।

এই কারণে জনসন এন্ড জনসন এবং ক্যান্সিনো শুধুমাত্র একটি ডোজ দিয়ে থাকে। স্পুটনিক-ভি যদিও দুইটি ডোজ দিয়ে থাকে তবে এর প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ আলাদা আলাদা আ্যাডেনোভাইরাসকে সংঘবদ্ধ করে থাকে। অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ ‘শিম্পাঞ্জি আ্যাডেনোভাইরাসের’ উপর নির্ভর করে থাকে। যার কারণে ভ্যাকসিনটি শরীরের মধ্যে আগে থেকে বিদ্যমান ভাইরাস যেগুলো মানুষকে সংক্রমিত করে না সেসব ভাইরাসকে এড়িয়ে যেতে পারে। যেহেতু প্রথম ডোজটি পরিমাণে তুলনামূলকভাবে কম এই কারণে হয়তো সেকেন্ড ডোজ গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না।

এমনকি, কিছু বিশেষজ্ঞদের অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার একটি ট্রায়ালে  অংশগ্রহণকারীদের ভুলবশত কম শক্তির প্রথম ডোজ দেওয়ার পরেও সেটি যথেষ্ঠ বেশি কার্যক্ষমতা দেখাচ্ছে। যদিও আ্যাডেনোভাইরাসের বিপরীতে খুব একটা শক্তিশালী ইমিউন রেসপন্স তৈরি হয় নি, কিন্তু স্পাইকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ইমিউন রেসপন্স দেখতে পাওয়া যায়, এমনটাই বলছেন লু । তবে এই ক্ষেত্রে  তৃতীয় ডোজ আবার তেমন কার্যকরী নাও হতে পারে বলে একটি সতর্কবার্তাও তিনি দিয়েছেন।

এজন্যই আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে মাসোপুস্ট বলেন, ” আমরা হয়তো এমন একটি অবস্থায় আছি যেখানে আমাদের প্রতিবছর একটি বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।” যা কিনা ফাইজার এবং মডার্নার মাধ্যমে সহজেই সম্ভব কিন্তু যে সকল ভ্যাকসিন আ্যাডেনোভাইরাসের উপর নির্ভরশীল সেক্ষেত্রে শরীরের ভিতরে আগে থেকেই বিদ্যমান ইমিউনিটি কমে আসতে পারে।

 

টীকার মিশ্র ডোজের কিছু নমুনা

মিশ্র ডোজ পদ্ধতির একটি হচ্ছে যে বর্তমানে পাওয়া যায় এমন ভ্যাকসিনগুলোকে মিশিয়ে ব্যবহার করা। অন্য একটি উপায় হচ্ছে, ভ্যাকসিন শরীরে যেভাবে কার্যকর হয়, সেগুলোকে এমনভাবে হিসেব করে ব্যবহার করা যাতে সবগুলো পদ্ধতিই মিশ্র পদ্ধতির মাধ্যমে প্রয়োগ করা যায়।

এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের ঢেউ নিয়ে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞদের ভয় হলো যে ভাইরাসটি শেষপর্যন্ত নিজের স্পাইক প্রোটিন পরিবর্তনের মাধ্যমে শরীরের এন্টিবডি রেসপন্সকে উপেক্ষা করতে সক্ষম হবে। যা কি না বেশিরভাগ ভ্যাকসিনের লক্ষ্য। সৌভাগ্যক্রমে ইমিউন সিস্টেমের আরেকটি প্রতিরক্ষা পদ্ধতি রয়েছে যার না ‘টি-সেল’।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর, ইমিউন সিস্টেম কিছু এন্টিবডি উৎপন্ন করে যার মাধ্যমে স্পাইক প্রোটিনের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে আটকে ফেলা যায়। এর ফলে যখন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে তখন এই এন্টিবডিগুলো ওই স্পাইকগুলোকে আটকে রাখে। তবে শুধুমাত্র ওই স্পাইকগুলোকেই। মাসোপুস্ট এর মতে, “টি-সেলগুলো পৃথিবীকে একটু ভিন্নভাবে দেখে”। তারা ভাইরাসের ভিতর থেকেই বেশিরভাগ প্রোটিনের টুকরাগুলোকে চিনতে পারে। যে ভ্যাকসিনটি স্পাইক এবং অন্যান্য প্রোটিন ধারন করে সেটি হয়তো ভ্যাকসিনের কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত এবং ভাইরাসের বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। টি-সেল সংক্রমণকে থামায় না কিন্তু ভাইরাসকে পরিষ্কার করে ফেলতে সাহায্য করে।

শক্তিশালী টি-সেল রেসপন্সকে উপেক্ষা করা ভাইরাসের জন্য অনেক কঠিন। বেশিরভাগ প্রোটিন যেগুলো টি-সেল সনাক্ত করে থাকে সেগুলো স্পাইক প্রোটিনের মত এত দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে না। টি-সেল মানুষভেদে আলাদা প্রোটিনের অংশবিশেষ চিহ্নিত করে থাকে। আর তাই, যদি কোনো কারণে কারোও শরীরের টি-সেল ভাইরাসকে সনাক্ত করতে ব্যর্থও হয় তবুও বিশাল আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। মাসোপুস্ট বলেন,” যদি আপনার শরীরে বিশালভাবে টি-সেল ইমউনিটি থাকে তবে ভাইরাসের পরিবর্তন মোকাবিলায় আপনি কম ঝুঁকিপূর্ণ”.

 

ফারবার অন্য একটি মিশ্র পদ্ধতির কথা ভাবছেন যা উপকারী হতে পারে; ইঞ্জেক্টেবল একটি ভ্যাকসিনের সাথে নাকের ভিতর দিয়ে দেয়া যায় এমন একটি ভ্যাকসিন কে সমন্বয় করার কথা ভাবছেন তিনি। নাকের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হলে তা ফুসফুসে ইমিউন রেসপন্স তৈরি করবে এবং সেখানের টি সেলগুলোকে ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করবে। টিস্যুতে থাকা এমন টি সেলগুলো ফুসফুসের জটিল রোগ থেকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। সেকারণেই বয়ষ্ক মানুষ যারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে নিউমোনিয়ার মতো বিভিন্ন ফুসফুসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের জন্য এই মিশ্র পদ্ধতিটি কার্যকরী কৌশল হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

টীকার মিশ্র ডোজ ইমিউনিটি বুস্ট করতে সক্ষম এমন প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এই ধারণাটি খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। ভ্যাকসিনের উন্নতিসাধন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। লু বলেন, যদি একটি ভ্যাকসিনে কাজ হয় তবে কোম্পানিগুলোর দুইটি ভিন্ন ভ্যাকসিন বানানোর জন্য খরচ করতে চাইবে না। এমনকি তারা অন্য একটি কোম্পানির সাথে মিলে এমন মিশ্র ডোজ দেওয়ার ব্যাপারেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। তবে এই মহামারী, ভ্যাকসিন তৈরীর চিত্র পালটে দিয়েছে এবং এই মিশ্র ডোজের ধারণাটিও হয়তো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফারবারের ভাষায়,” It’s a very ripe time.”

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply