যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চলে ঢাকায়?

Published on: May 17, 2022

গত ২৪ “ঢাকায় মোটরবাইকের সংখ্যা ১ মিলিয়ন, যা পুরো যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যেখানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) কে তথ্যসুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিপূর্বেও একই শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল একাধিক সংবাদমাধ্যম থেকে। স্ট্যাটিস্টা এবং আইআইএইচএস এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৮ মিলিয়ন (৮০ লাখ) এর বেশী। সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

বাংলা এবং ইংরেজিতে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের আরকাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

বিভ্রান্তির সূত্রপাত:

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে “যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চলে ঢাকায়!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল somoynews.tv থেকে। উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) এর বরাতে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে ৮ লাখের মতো। আর রাজধানীতে নিবন্ধিতই আছে সাড়ে ৮ লাখ। এর বাইরে আরও প্রায় অর্ধ লাখ মোটরসাইকেল চলে ঢাকার রাস্তায়। অর্থাৎ, শুধু রাজধানীতে যে পরিমাণ নিবন্ধিত মোটরসাইকেল চলে পুরো যুক্তরাষ্ট্রেও সে পরিমাণ মোটরসাইকেল চলে না”


“পরিবহন পরিকল্পনা ও নিরাপত্তার জন্য সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কৌশল ২০২২” শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে এআরআই এর পরিচালক অধ্যাপক মো: হাদিউজ্জামান বলেন, ২০১৫ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে পরের বছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়। এরপর গত পাঁচ বছরে ঢাকায় বাইকের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখে। এমনকি পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এত বাইক চলে না।

পরিসংখ্যান কি বলছে?

ইন্সুরেন্স ইনস্টিটিউট ফর হাইওয়ে সেফটি (আইআইএইচএস) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্য মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত মোটরবাইকের সংখ্যা ৮৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৬৯টি যার মধ্যে শুধু ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যেই নিবন্ধিত মোটরবাইকের সংখ্যা ৯ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৭টি। অন্যদিকে স্ট্যাটিস্টা এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারী, ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক মালিকানাধীন নিবন্ধিত মোটরসাইকেল সংখ্যা প্রায় ৮ দশমিক ৩২ মিলিয়ন (৮৩ লাখ ২০ হাজার) ।



এ বিষয়ে কি বলছে এআরআই?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর সাথে যোগাযোগ করেছে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান ফোনে জানান, “আমাদের এখন ঢাকা শহরে যে মোটরসাইকেলগুলো চলছে, ঐ প্রেক্ষিতেই কিন্তু কথাটি বলা হয়েছে, যা প্রায় ১০ লক্ষ। আমাদের নতুন মোটর সাইকেলের সাথে অন্য দেশে নতুন মোটরসাইকেল কি পরিমাণে ঢুকছে সেটাই আমাকে কম্পেয়ার করতে হবে। বাংলাদেশে প্রথম থেকে এই সংখ্যা কম্পেয়ার করা ডিফিকাল্ট। আমাদের অনেক মোটরসাইকেল বসে পড়ছে যে সংখ্যাটা আমরা জানি না। বিআরটিএ এটা দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। অনিবন্ধিত অনেক মোটরসাইকেল আছে যার সংখ্যা ১৫ থেকে ৫০/৬০ লাখ হয়ে যাবে। এটার তো আমি কোন হিসাব দিতে পারবো না। ঢাকা শহরে যে ১০ লাখ নতুন মোটর সাইকেল যুক্ত হয়েছে রাইড শেয়ারিং এর জন্য, সেগুলোর সাথে আমি গত ৩/৪ বছর বয়সী আমেরিকার মোটরসাইকেলের কম্পেয়ার করেছিলাম।“

উক্ত ১০ লক্ষ মোটরবাইকের পরিসংখ্যান নিয়ে এআরআই কোনো প্রতিবেদন তৈরি বা প্রকাশ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোঃ হাদিউজ্জামান বলেন, “আমরা কোনো রিপোর্ট পাবলিশ করি নি।“

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৮ মিলিয়ন (৮০ লাখ) এর বেশী যা  ঢাকায় চলমান মোটরসাইকেলের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশী।

(উল্লেখ্য যে, মোঃ হাদিউজ্জামান এর সাথে মুঠোফোনে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে যোগাযোগের পর প্রথম আলোর প্রতিবেদনটিতে একাধিক পরিবর্তন দেখা যায়। যদিও প্রতিবেদনটির নতুন সংস্করণে কোনো সংশোধনী টীকা উল্লেখ করা হয় নি। মূল প্রতিবেদন সংশোধনের পরেও প্রতিবেদনের ওয়েবলিংকযুক্ত ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশন পরিবর্তন না করায় তা থেকে জনমনে বিভ্রান্তির অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।)

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply