নাপা সিরাপ খেয়ে নয়, দুই শিশুকে মারা হয়েছে বিষ খাইয়ে

Published on: March 21, 2022

১৩ মার্চ ২০২২ তারিখে ফেসবুকে একটি সতর্কীকরণ পোস্ট শেয়ার হয়েছিল  যেখানে, বেক্সিমকো কোম্পানির “নাপা” (প্যারাসিটামল) সিরাপের ৩২১১৩১২১ নং ব্যাচের ঔষধ কারো কাছে থাকলে দ্রুত নিকটস্থ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে এবং সেটি বিক্রি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বাস্তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্যারাসিটামল সিরাপ “নাপা” সেবনে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিল এবং বাংলাদেশ কেমিষ্টস এন্ড ড্রাগিষ্টস সমিতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাময়িকভাবে নাপা সিরাপ ও ড্রপ বিক্রি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল। পুলিশ তদন্তে জানা গেছে ঔষধে নয়, বরং বিষ প্রয়োগে দুই সন্তানকে হত্যা করেছে তাদের মা। অন্যদিকে ঔষধটির তিনটি নমুনা পরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) এতে কোনো ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে। উক্ত পোস্টগুলোতে বিষয়টি হালনাগাদ না করায় বর্তমানে এই পুরনো তথ্য বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করেছে।

সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে প্রকাশিত উক্ত পোস্টটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

১০ মার্চ ২০২২ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নাপা সিরাপ খেয়ে ইয়াছিন মিয়া (৭) ও মোরসালিন মিয়া (৪) নামে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, শিশু দুটির হঠাৎ জ্বর হওয়ায় ১০ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে স্থানীয় একটি ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ নিয়ে খাওয়ানো হলে তাদের বমি শুরু হয়। পরে শিশু দুটিকে প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, যার কিছুক্ষণ পর তারা মারা যায়।

এরপর ১২ মার্চ (শনিবার) ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ঔষধটি পরীক্ষা করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে প্রতিবেদন পাঠাতে।

ভাইরাল পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের বরাতে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো কোম্পানীর “নাপা” সিরাপের নিন্মোক্ত ব্যাচ নং-৩২১১৩১২১ সম্বলিত ঔষধ কারো কাছে থাকলে দ্রুত নিকটস্থ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন এবং সেটি বিক্রি থেকে বিরত থাকুন। বাস্তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাদের বিজ্ঞপ্তিতে এমন কিছু উল্লেখ করেনি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন ১৩ মার্চ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “অধিদপ্তরের বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় নাপা সিরাপের ওই ব্যাচের ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করছে। তবে ওই ব্যাচের ওষুধ বিক্রি বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।”

তবে ১২ মার্চ বাংলাদেশ কেমিষ্টস এন্ড ড্রাগিষ্টস সমিতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল ঔষধ ব্যবসায়ীদের সাময়িকভাবে ৩২১১৩১২১ ব্যাচের নাপা সিরাপ ও নাপা ড্রপ বিক্রি বন্ধ রাখার লিখিত অনুরোধ জানিয়েছিল।

উক্ত ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ১৪ মার্চ ২০২২ (সোমবার) বিকালে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “আমরা এ পর্যন্ত তিনটা নমুনা পরীক্ষা করেছি। ড্রাগ টেস্টিং প্রপাইলিন গ্লাইকল আছে আর ক্ষতিকারক উপাদান ডাইইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি।”

যদিও যে বোতলের সিরাপ শিশু দুটিকে পান করানো হয়েছিল, সেটি পরীক্ষা করতে পারেনি ডিজিডিএ। এ বিষয়ে মেজর জেনারেল ইউসুফ বলেন, “পুলিশ (সিআইডি) মামলার নমুনা হিসেবে সেটা নিয়ে গেছে। আমাদের দেয়নি। আমাদের দিলে আমরা তা পরীক্ষা করতে পারতাম।”

পরবর্তীতে ১৭ মার্চ ভোরে উক্ত দুই শিশুকে বিষ প্রয়োগে হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শিশু দুটির মাকে আটক করেছে পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বিবিসিকে এ বিষয়ে বলেন, “”আজ ভোরে তাকে আটক করেছি আমরা। তিনি সব কিছু স্বীকার করেছেন। তিনি ও তার কথিত প্রেমিক পরিকল্পিতভাবে দুই শিশুকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। পরে ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে মুখে ঢেলে দেন যাতে সবাই মনে করে ঔষধের বিষক্রিয়ায় এমনটি হয়েছে।”

আটক হওয়া নারী পুলিশের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেদিনই তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঔষধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি প্যারাসিটামলের জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড হচ্ছে নাপা। নাপা সাসপেনশন বা সিরাপ শিশুদের জ্বর বা ব্যথায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অর্থাৎ ১৩ মার্চ উক্ত ফেসবুক পোস্ট প্রকাশিত হবার পর উক্ত ঘটনা নতুন মোড় পেয়েছে। পুলিশ তদন্তে জানা গেছে ঔষধে নয়, বরং বিষ প্রয়োগে দুই সন্তানকে হত্যা করেছে তাদের মা। অন্যদিকে ঔষধটির তিনটি নমুনা পরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) এতে কোনো ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, ভাইরাল পোস্টগুলোর ক্যাপশনের দাবি অনুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাদের বিজ্ঞপ্তিতে নাপা বিক্রি বন্ধ রাখতে বলে নি। উক্ত পোস্টগুলোতে বিষয়টি হালনাগাদ না করায় পুরনো তথ্য বর্তমানে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply