ইসলাম শিক্ষা বইয়ে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ছবি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে?

Published on: February 4, 2024

২০২৪ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় বিতরণ করা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে ১২ থেকে ২৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীর ছবি ও তাদের কাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে -এমন একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, কিশোরগঞ্জের কয়েকটি স্কুলে ইসলাম শিক্ষা বইয়ের একটি ফর্মার (১৬ পৃষ্ঠা)স্থলে একই শ্রেণীর হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের একই ফর্মা (১২ থেকে ২৭ তম পৃষ্ঠা) জুড়ে দেয়া হয়েছে, যাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘মুদ্রণত্রুটি’ হিসেবে অভিহিত করছেন। কেবলমাত্র কিশোরগঞ্জের কয়েকটি স্কুলে কয়েকটি বইয়ের কপিতে এই ত্রুটি ধরা পড়লেও ফেসবুক পোস্ট থেকে অনেকে ধারণা করতে পারেন, দেশে বিতরণ করা সব বইয়ের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটেছে, যা সত্য নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে আংশিক মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে


ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

২ ফেব্রুয়ারি তারিখে সময়নিউজ এর ওয়েবসাইটে এবার ইসলাম শিক্ষা বইয়ে হিন্দু ধর্মের দেবদেবীর বিবরণ!  শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে,

নতুন পাঠ্যপুস্তক বইয়ের বিতর্ক যেনো পিছু ছাড়ছে না। এবার কিশোরগঞ্জে কয়েকটি স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের ভেতরে পাওয়া গেলো হিন্দু ধর্ম বিষয়ের বেশ কিছু পাতা। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হাসমত উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন বই পায় জানুয়ারির শুরুতে। ইসলাম শিক্ষা বইটির পাতা উল্টানোর সময় ১২ পৃষ্ঠা থেকে ২৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাতায় দেবদেবীর ছবি দেখতে পেয়ে অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকদের বিষয়টি জানায় তারা।

হাসমত উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া ইয়াছমীন বলেন, ‘বাচ্চারা বইগুলো দেখানোর পর আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এবং তারা জানিয়েছেন দ্রুতই সংশোধিত বই দেয়া হবে। বইগুলো হাতে পেলে আমরা বাচ্চাদের কাছে দ্রুতই পৌঁছে দেব।’

আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেন শোকরানা বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যখন বাসায় নিয়ে বইগুলো দেখবে আর যখন এরকম বিষয়গুলো চোখে পড়বে তখন তার কাছে বইটি নিখুঁত মনে হবে না, নিখুঁত বইগুলো পৌঁছানোর জন্য নিরলসভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।’

জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুন নাহার মাকছুদা বলেন, ‘মুদ্রণত্রুটির কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। বিষয়টি এনসিটিবিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সংশোধিত বইগুলো হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বই না পড়াতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনেরই সম্পূর্ণ বা আংশিক ফুটেজ কিংবা স্ক্রিনশট অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করছেন। তবে শেয়ার করার সময় অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীই এটাকে কিশোরগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেননি, বরং তাদের পোস্ট থেকে ধারণা হতে পারে যে এটা সমগ্র বাংলাদেশে বিতরণ করা সকল ইসলাম শিক্ষা বইয়েরই ত্রুটি।

অন্যদিকে , আজকের পত্রিকায় ৩রা ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইতে হিন্দুধর্মের বিষয়, ‘মুদ্রণ বিভ্রাট’ বলল এনসিটিবি শীর্ষক প্রতিবেদনে আরো জানা যাচ্ছে, জেলার সরযূ বালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্তত ১২টি বইয়ে ত্রুটি ধরা পড়ার পর শিক্ষকরা বদলে দিয়েছেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুন নাহার মাকছুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুব বেশি স্কুলে এমন ভুলভ্রান্তি ধরা পড়েনি। যে বইগুলোতে ছবি এসেছে, তা আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। কী কারণে ইসলাম শিক্ষা বইয়ে দেবদেবীর ছবি এসেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে খুব বেশি সংখ্যক বইয়ে এই ত্রুটি পাওয়া যায়নি, এবং দেশের অন্যান্য স্থানে সরবারহ করা অধিকাংশ বইয়েই এই ত্রুটিটি নেই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ( NCTB)  এর ওয়েব সাইটে সংরক্ষিত  ৬ষ্ঠ শ্রেণীর হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বই অনুসন্ধান করে দেখা গেল, এই বইয়ের ১৩ এবং ১৪ তম পৃষ্ঠার সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির হুবহু মিল রয়েছে।

প্রেসে সাধারণত প্রতিটি ফর্মা হিসেবে ছাপানো এবং বাধাই করা হয়। ১৬ পৃষ্ঠা নিয়ে প্রতিটি ফর্মা গঠিত। ১২ থেকে ২৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত একটি ফর্মা গঠিত হবে, যা বইয়ের দ্বিতীয় ফর্মা। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ত্রুটিযুক্ত বইয়ের বিভিন্ন ছবি, এবং হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের ছবি বোঝা যাচ্ছে যে, ইসলাম শিক্ষা বইয়ের দ্বিতীয় ফর্মার স্থলে একই শ্রেণীর হিন্দু ধর্ম শিখা বইয়ের দ্বিতীয় ফর্মা যুক্ত হয়েছে ।

কেবলমাত্র কিশোরগঞ্জের কয়েকটি স্কুলে বিতরণ করা বইয়ে এই ত্রুটি  পাওয়া গিয়েছে এখনো পর্যন্ত। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো থেকে অনেকে ধারণা করছেন -দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা বইয়ের মধ্যেই এই ত্রুটি রয়েছে । পাঠকের এমন কয়েকটি বিভ্রান্ত মন্তব্য দেখতে পাবেন এখানে।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

যেসকল ফেসবুক পোস্টে আলোচিত এই ঘটনাকে কিশোরগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ঘটনা হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, বরং বাংলাদেশের সব স্কুলে বিতরণ করা সব বইয়ের ঘটনা বলেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, সেসকল পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ আংশিক মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh